বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যতই দেশ সফর করুন না কেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় শেষ।
শুক্রবার রাজধানীতে এক সমাবেশে বক্তব্যে তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান। কারণ, দেশের জনগণ এবং গণতান্ত্রিক বিশ্ব বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে একটি বিশ্বাসযোগ্য জাতীয় নির্বাচন চায়।
বিএনপি নেতা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী যতই চিৎকার করুক না কেন এই শাসনের সময় শেষ। আপনি (প্রধানমন্ত্রী) জাপান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কাতার, সৌদি আরব এবং চীনে যান না কেন, আপনি কোন লাভ করতে পারবেন না। আপনার সময় শেষ এবং এটাই বাস্তবতা।’
জনগণকে 'দুঃশাসন' থেকে মুক্ত করতে এবং নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি মেনে নিতে সময় ফুরিয়ে যাওয়ার আগেই পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান ফখরুল।
দলটির দেশব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ তাদের ১০ দফা দাবি আদায়, এবং 'মিথ্যা মামলায়' দলীয় নেতাকর্মীদের হয়রানি ও গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে রাজধানীর শ্যামলী ক্লাব মাঠে ঢাকা উত্তর মহানগর বিএনপি এই সমাবেশের আয়োজন করে।
এছাড়াও বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সরকারের 'গায়েবি' মামলা দায়ের, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, ঘন ঘন বিদ্যুত বিপর্যয় এবং সরকারের 'সর্বব্যাপী' দুর্নীতির বিরুদ্ধে দলের প্রতিবাদ জানাতে দেশের আরও ২৭টি মহানগর ও জেলায় সমাবেশ করেছে দলটি।
ফখরুল অভিযোগ করেন, সরকার বারবার ইউটিলিটি সার্ভিসের শুল্ক বাড়ালেও বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির সংকটে মানুষ দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, চাল, তেল, ডিম, লবণ, চিনি, পেঁয়াজ, রসুন, আদাসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের দাম দুই থেকে তিনগুণ বেড়ে যাওয়ায় মানুষ বেঁচে থাকতে হিমশিম খাচ্ছে।
‘কিন্তু মন্ত্রীরা এবং ক্ষমতাসীন দলের নেতারা যারা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে বিলাসবহুল থাকেন তারা বলছেন সবকিছু ঠিক আছে এবং বাংলাদেশের মানুষ খুব ভালো অবস্থায় আছে। ক্ষমতাসীন দলের নেতারা প্রায়ই লোকেদের উপহাস করে এই বলে যে তারা সিঙ্গাপুরের চেয়ে ভাল,’ বিএনপি নেতা বলেছিলেন।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার দলের নেতারা তাদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় জনগণের স্পন্দন বুঝতে পারছেন না। ‘কোনও রাষ্ট্রীয় প্রোটোকল ছাড়াই মানুষের সামনে দাঁড়ান তাদের চোখ এবং শরীরের ভাষা বুঝতে।’
আরও পড়ুন: সরকারবিরোধী আন্দোলন: রাজধানীতে আবারো পদযাত্রা করল বিএনপি
বিএনপি নেতা বলেন, বর্তমান সরকারের ‘দুঃশাসনে’ মানুষ বিরক্ত হয়ে গেছে। ‘তারা বেঁচে থাকা কঠিন মনে করছে। ‘জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে যারা ক্ষমতায় থাকে তারা মানুষকে সম্মান করতে পারে না। যারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিভিন্ন বাহিনীর ওপর নির্ভর করে ক্ষমতায় থাকে তারা পতন না হওয়া পর্যন্ত মানুষের মন শান্ত হতে পারে না।
তিনি অভিযোগ করেন, সরকার দেশের প্রতিটি সেক্টরকে ধ্বংস করে দিয়েছে। ‘তারা কুইক রেন্টালের মাধ্যমে বিদ্যুৎ খাত থেকে প্রতি বছর ৭৮ হাজার কোটি টাকা চুরি করে... শিক্ষা ব্যবস্থাকেও ধ্বংস করে দেয়। কলেজ, স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয় সহ কোথাও
কোনো একাডেমিক পরিবেশ নেই। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দখল করে রেখেছে ছাত্রলীগের ক্যাডাররা। তৃতীয় শ্রেণীর ডিগ্রিধারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হচ্ছেন।
বিএনপি নেতা আরও বলেন, সরকার ব্যাপক দুর্নীতি ও লুটপাটে লিপ্ত হয়ে স্বাস্থ্য খাতকেও ধ্বংস করেছে।
তিনি বলেন, সরকার এখন বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা ও ভুতুড়ে’ মামলা দিয়ে ক্ষমতায় থাকার শেষ অবলম্বন হিসেবে ব্যবহার করছে।
ফখরুল বলেন, গণতন্ত্র ও জনগণের অধিকার পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে তাদের দলের নেতাকর্মীরা দমন, কারাবরণ ও হত্যার শিকার হয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের ১৭ ভাই বর্তমান আন্দোলনে তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। আজ (শুক্রবার) খুলনায় আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর পুলিশ গুলি চালিয়েছে বলে আমরা শুনেছি। গুলি করে মানুষের এই আন্দোলন বন্ধ করা সম্ভব হবে না।’
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ইতোমধ্যে কবরে চলে গেছে এমন মন্তব্যের জন্য ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের নিন্দা করেন ফখরুল।
তিনি বলেন, আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে, নিজেদের ভোট দিতে এবং সুষ্ঠু ফলাফল নিশ্চিত করতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচন এদেশের জনগণ মেনে নেবে না।
আরও পড়ুন: আগামী ২৩ ও ২৮ মে ঢাকা ছাড়া সব মহানগরে পদযাত্রা করবে বিএনপি
বিএনপি নেতা আরও বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। ‘আমরা ২০১৮ এবং ২০১৪ সালের নির্বাচন দেখেছি…..তাদের আর বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই। আপনার (শেখ হাসিনা) অধীনে নির্বাচনে যাওয়ার প্রশ্নই আসতে পারে না।
তিনি বলেন, সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ ভেঙে দিতে হবে, খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে এবং ৪০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।
একটি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন ফখরুল। ‘তাহলে নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা কোথায়? আপনি কি বাংলাদেশের সব মানুষকে বোকা মনে করেন? আর কতদিন মানুষকে ঠকাবেন? আপনি আর এটা করতে পারবেন না।’
বর্তমান সরকার দেশে ও বিদেশে সমর্থন হারিয়েছে বলে তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কোনো পক্ষপাতমূলক ভূমিকা পালন না করার আহ্বান জানান। ‘দেশের মানুষ এবং গণতান্ত্রিক বিশ্ব একটি সুষ্ঠু, বিশ্বাসযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায় এবং তারা জানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া তা সম্ভব হবে না। তাই দয়া করে এমন পরিস্থিতি তৈরি করবেন না যেখানে আপনাকে (আইনশৃঙ্খলা বাহিনী) চিহ্নিত করা হবে (আপনার পক্ষপাতমূলক ভূমিকার জন্য)।
শনিবার ঢাকা দক্ষিণ মহানগরী, ২১টি সাংগঠনিক জেলা ও অন্যান্য মহানগরে সমাবেশ করবে বিএনপি।
আরও পড়ুন: খুলনায় বিএনপির সমাবেশে পুলিশের লাঠিচার্জ, টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ