বিএনপির চেয়ারপারর্সন খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবি জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের কাছে প্রধানমন্ত্রীকে লেখা আবেদন দিয়েছে ২০-দলীয় জোটের অন্তর্ভুক্ত পাঁচ দল।
রবিবার দুপুর ১২টার দিকে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দপ্তরের মন্ত্রীর সাথে বৈঠকের সময় পাঁচ দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা এই আবেদন তুলে দেন।
নেতারা হলেন, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহিম, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি) চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির চেয়ারম্যান ক্বারী মোহাম্মদ আবু তাহের, বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা এবং লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির মহাসচিব শাহদাৎ হোসেন সেলিম।পরে সাংবাদিকদের সাথেও কথা বলেন জোট নেতারা।
২০ দলীয় জোটের অন্যতম নেতা কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহিম জানান, আবেদনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদারতার দৃষ্টান্ত অনুসরণ করতে অনুরোধ জানিয়েছেন তারা।
তিনি বলেন, ‘আমরা পাঁচটি রাজনৈতিক দলের প্রধানরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাক্ষাতের জন্য এসেছিলাম। আমাদের আসার উদ্দেশ্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করা একটি বিষয়ে, বেগম খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা। তাকে বিদেশে পাঠানো। এটির জন্যই আমরা এসেছি। লিখিত আবেদন জমা দিয়েছি। মুখে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা করেছি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে হৃদ্যতাপূর্ণ পরিবেশে কথা শুনেছেন এবং প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছাবেন এ বিষয়ে আশ্বস্ত করেছেন।’
আরও পড়ুন: অসুস্থ খালেদা জিয়াকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেয়া উচিত: রেজা কিবরিয়া
ইব্রাহিম বলেন, ‘আমাদের আবেদনের সারমর্ম, বেগম খালেদা জিয়া এতটাই গুরুতর অসুস্থ্য যে দেশে চিকিৎসার মাধ্যমে তার সুস্থ্য হওয়ার সম্ভাবনা কম। রাজনীতির সব মত পার্থক্যের ঊর্ধ্বে উঠে, অতীতের ভুল ভ্রান্তিকে ভুলে গিয়ে একান্তভাবে মানবিকতার দৃষ্টান্ত স্বরুপ সহমর্মীতা প্রদর্শন করে সরকার যেন বেগম জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি দেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে ব্যক্তিগত আবেদন।’
‘তিনি (প্রধানমন্ত্রী) অনুমতি দিলে হয় সরকার বন্দোবস্ত করে পাঠাবে অথবা পরিবার বা দল বন্দোবস্ত করে পাঠাবে। এই কাজটি যদি করা হয় বাংলাদেশের ৫০ বছরের ইতিহাসে এটা সর্বশ্রেষ্ঠ মানবিকতার, উদারতার সৌজন্যবোধের দৃষ্টান্ত হিসেবে থাকবে, ইতিহাসে লিপিবদ্ধ থাকবে’, এমন মন্তব্য করেন ইব্রাহিম।
বঙ্গবন্ধুর উদারতার দৃষ্টান্ত তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ আমি ব্যক্তিগতভাবে স্বাক্ষী যেহেতু আমি একজন রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা। বঙ্গবন্ধুর আমলে আমি সেনাবাহিনীতে ছিলাম, তার আমলেই বীরপ্রতিক খেতাব পেয়েছি। তিনি কত উদার ও মহৎ ছিলেন, বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের ভুলভ্রান্তিকে কিভাবে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখতেন। তাই আমরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেছি, প্রধানমন্ত্রীকে বলেছি, আপনি বঙ্গবন্ধুর কন্যা আপনি তার দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে এই মহানুভবতা প্রদর্শন করুন।’
অতীতে এমন কোনো উদাহরণ আছে কিনা জানতে চাইলে ইব্রাহিম বলেন, ‘আমরা বলেছি অতীতের কোনো রেফারেন্স কোনো আইন দৃষ্টান্তের প্রয়োজন নেই। আপনি (প্রধানমন্ত্রী) এককভাবে এ সিদ্ধান্ত নিন।’
আরও পড়ুন: খালেদা জিয়ার জন্য যে কোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত আছি: ফখরুল
এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য -
২০ দলের পাঁচ নেতা খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠানোর আবেদন করলেও আইনে এই ধরনের কোনো সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। পাঁচ দলের নেতাদের সাথে কথা শেষে তাদের দেয়া আবেদনের বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে।
এ সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, ‘এরা পাঁচ দলের পাঁচ প্রতিনিধি, যারা বিএনপির ২০ দলের জোটের সদস্য তারা এসেছিলেন। তাদের আবেদন ছিল, খালেদা জিয়া অসুস্থ্য তিনি চিকিৎসা নিচ্ছেন, তিনি একদম জীবনের শেষ প্রান্তে এসেছেন। সুতরাং তাকে আরও উন্নত চিকিৎসা দেয়ার জন্য বিদেশে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়া যায় কিনা, প্রধানমন্ত্রীর কাছে সে আবেদন নিয়ে এসেছিলেন।’
তিনি বলেন, ‘আমি বলেছি, এর আগেও খালেদা জিয়ার ছোট ভাই একটি আবেদন করেছিলেন সেটিও আমি আইন মন্ত্রণালয়ে মতামতের জন্য পাঠিয়েছিলাম। আইনমন্ত্রী যথাযথভাবে পার্লামেন্টে প্রশ্ন উত্তরের সময় বিস্তারিত বলেছেন। আমি এটা বলার পরেও তারা বলছেন, এটা মানবিক কারণে দেয়া যায় কিনা সে পত্র দিয়েছেন। এটা আমি যথাযথভাবে আবার যেখানে প্রয়োজন পাঠিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়ে দেবো।’
‘বিদেশ থেকে চিকিৎসক আনা যাবে বলে আইনমন্ত্রী যে মন্তব্য করেছেন সে বিষয়টি তাদের জানানো হয়েছে কিনা জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এখন তো যে কোনো বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এখানে আসতে পারেন। আমাদের হাসপাতালগুলো ওয়েল ইকুইপড। কাজেই বিদেশি ডাক্তার আসলে যে চিকিৎসা বিদেশে করা যায় সেটা এখানেও করতে পারেন’, বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
তিনি আরও বলেন, ‘জেনারেল ইব্রাহিম আমাকে বলেছেন এটা কোনো উদাহরণ বা আইন নয় এটা প্রধানমন্ত্রী যেভাবে ছুটে গিয়েছিলেন কোকোর ইন্তেকালের পর আমি তাকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছি। সে সময় কিন্তু খালেদা জিয়ার বাসভবনের গেটটিও খোলা হয় নি। এগুলো সবই তারা জানেন। তারপরও তারা এটা বলছেন। ওনারা বলেছেন অতীতে যা ঘটেছে সেগুলোকে ভুলে গিয়ে তিনি যেন উদাহরণ তৈরি করেন সেটা বলেছেন।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এটার আইন অনুযায়ী কোনো স্কোপ নেই। প্রধানমন্ত্রী ইচ্ছা করলে করতে পারেন এটা ওনারা বলে গেছেন। কিন্তু আইনের ভাষায় বলতে গেলে এটার কোনো স্কোপ নেই।’
আরও পড়ুন: খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার দাবিতে সোমবার বিএনপির সমাবেশ