বুধবার রাতে হামলার পর বৃহস্পতিবার সকালে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের কার্যনির্বাহী সদস্য মো. মোশারাফুল হক চৌধুরী পাভেল বাদী হয়ে বিএনপির ৪৫ জনের নাম উল্লেখ করে কোতোয়ালি থানায় মামলাটি দায়ের করেন।
মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিএমপির কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নেজাম উদ্দীন।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে বিএনপি অফিসে হামলা, ভাঙচুরের অভিযোগ
তিনি বলেন, ‘গতকাল রাতে বিএনপির মহানগর অফিস নাসিমন ভবনের সামনে দিয়ে মিছিল নিয়ে যাওয়ার সময় দলীয় কার্যালয় থেকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা হয়েছে অভিযোগে মামলা হয়েছে। আমরা এ অভিযোগটির তদন্ত করছি।’
মামলার এজাহারভুক্ত আসামিদের মধ্যে রয়েছেন- স্বেচ্ছাসেবক দলের নগর সভাপতি- এইচ এম রাশেদ খান (৪০), বিএনপি নেতা হারুন অর রশিদ (৪৫)
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির কার্যালয় ‘নাসিমন ভবনে’ বুধবার রাতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ইটপাটকেল ও কঁচের বোতল নিক্ষেপ, ককটেল বিস্ফোরণ এবং গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
আরও পড়ুন: চসিক নির্বাচন: সিএমপির ৫ ওসি পদে রদবদল
হামলাকালে পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং নিজ কার্যালয়ে রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত আটকা পড়েন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে (চসিক) বিএনপির মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাতসহ শতাধিক নেতা-কর্মী।
বিএনপির নেতারা জানান, রাত সাড়ে ১০টার দিকে কয়েকজন দুর্বৃত্ত এসে প্রথমে নাসিমন ভবনের সামনে রাস্তার ওপর ককটেল ফাটিয়ে পালিয়ে যায়। এসময় বিএনপি অফিসে সিনিয়র নেতারাসহ কয়েকশ নেতা-কর্মী অবস্থান করছিল। ককটেল বিস্ফোরণের পরপরই নেতা-র্মীরা রাস্তায় নেমে দুর্বৃত্তদের ধাওয়া করে।
আরও পড়ুন: চসিক নির্বাচন: আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের গোলাগুলিতে নিহত ১
চসিক নির্বাচন: আ’লীগের দুপক্ষের সংঘর্ষে আহত ১২
তাদের অভিযোগ, এ ঘটনার প্রায় ১ ঘণ্টা পর রাত সাড়ে ১১টার দিকে মিছিল নিয়ে জয় বাংলা শ্লোগান দিয়ে এসে নাসিমন ভবনে ঢুকে ব্যাপক তাণ্ডব চালায়। দলীয় কার্যালয়ের সামনে থাকা বিএনপির মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেনের পাজেরো গাড়ি, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বাক আবু সুফিয়ানের প্রাইভেটকারসহ অন্তত ৫টি গাড়ি ভাঙচুর করে। অতর্কিত এ হামলার ঘটনায় বিএনপির মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন, বিএনপির সেক্রেটারি আবুল হাশেম বক্করসহ নেতা-কর্মীরা দলীয় কার্যালয়ে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন।
নগর বিএনপির দপ্তর সম্পাদক ইদ্রীস আলী বলেন, ‘আমাদের মেয়র প্রার্থীসহ আমরা পার্টি অফিসে অবস্থান করছিলাম। এরইমধ্যে আওয়ামী লীগের একটি মিছিল হঠাৎ পার্টি অফিসের সামনে এসে ককটেল, ইট নিক্ষেপ করতে থাকে। শাহাদাত ভাইয়ের গাড়িসহ ভাঙচুর চালিয়েছে।’
আরও পড়ুন: চসিক প্রশাসক সুজন সস্ত্রীক করোনা আক্রান্ত
২৭ জানুয়ারী চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন
রাত ১২টার দিকে দলীয় কার্যালয়ে থাকা ডা. শাহাদাত হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘দলীয় কার্যালয়ে এসে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ছেলেরা হামলা করছে এবং নির্বাচনের পরিবেশকে তারা অশান্ত করে তুলছে।’
তিনি বলেন, ‘কোনো কারণ ছাড়াই এ হামলা করা হয়েছে। ধানের শীষের বিজয় তারা আঁচ করতে পেরে এভাবে হামলা মামলা শুরু করে দিয়েছে।’
এদিকে পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার পর রাত ১টার দিকে মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত, আবুল হাসেম বক্কর, কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল, আবু সুফিয়ানসহ নেতা-কর্মীরা দলীয় কার্যালয় ছেড়ে যান।
করোনাভাইরাস মহামারির কারণে স্থগিত হয়ে যাওয়া চসিক নির্বাচন আগামী ২৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে। ভোটগ্রহণ চলবে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। প্রত্যেকটি কেন্দ্রে ইভিএমের মাধ্যমে ভোট নেয়া হবে।
আরও পড়ুন: চসিক নির্বাচন: আ’লীগ প্রার্থীর অঙ্গীকার স্বচ্ছ-স্মার্ট সিটি গড়া, বিএনপি প্রার্থী চান ইসির নিরপেক্ষতা
এর আগে, ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন হয়। ওই নির্বাচিত করপোরেশনের মেয়াদ শেষ হয় ২০২০ সালের ৫ আগস্ট।
নির্বাচনী আইন অনুযায়ী, ৫ আগস্টের পূর্ববর্তী ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা ছিল। সে হিসেবে ইসির সিদ্ধান্ত অনুসারে ২৯ মার্চ এ সিটির ভোটগ্রহণ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কোভিড-১৯-এর কারণে পরে নির্বাচন স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন। এখন করোনা পরিস্থিতির সঙ্গে জনগণ কিছুটা মানিয়ে ওঠায় নির্বাচন কমিশন ভোটগ্রহণের তারিখ ঘোষণা করেছে।