বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তাদের দল সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের আলোকে নির্দলীয় নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের একটি ফর্মুলা পেশ করবে।
তিনি বলেন, ‘আপনারা সঠিক সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা জানতে পারবেন। আপনারা আরও জানতে পারবেন কখন আমরা একযোগে আন্দোলন শুরু করতে যাচ্ছি।’
বৃহস্পতিবার তিনি ২০ দলীয় জোটের দুই শরিক দল বাংলাদেশ লেবার পার্টি ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) সঙ্গে আলোচনার পর সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
আরও পড়ুন: মির্জা ফখরুলের সঙ্গে জাপানের রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা
এই বিএনপি নেতা বলেন, ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের ৫৮ (বি) (সি) (ডি) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী তাদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ফর্মুলা তৈরি করা হচ্ছে। ‘এই রূপরেখাটি (১৩তম সংশোধনীর) সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তৈরি করা হবে।"’
ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের জন্য জাতীয় ঐক্য গড়তে তাদের দ্বিতীয় পর্বের আলোচনার অংশ হিসেবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সকাল ১০টায় লেবার পার্টির সঙ্গে এবং বেলা ১১টায় বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে এনপিপির সঙ্গে বৈঠক করেন।
১৯৯৪ সালে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের তত্ত্বাবধানে একটি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য প্রচারণা চালায় আওয়ামী লীগ এবং ১৯৯৬ সালে তীব্র আন্দোলনের মুখে বিএনপিকে তা মেনে নিতে বাধ্য করে।
ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচনে একতরফা জয়লাভ করে বিএনপি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় এবং ১৯৯৬ সালের ২৭শে মার্চ সংবিধানের ১৩তম সংশোধনী পাস করে, নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করে।
কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট সংবিধানের ১৩ তম সংশোধনীকে বেআইনি বলে বাতিল করায় ২০১১ সালে ১৫তম সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্ত করা হয়।
গত দুটি সাধারণ নির্বাচন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হয়।
ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের পর থেকে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্থা পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে নেমেছে বিএনপি।
আরও পড়ুন: অচিরেই দেশব্যাপী সরকার পতন আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে: মির্জা ফখরুল
দুই রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে ফখরুল বলেন, তারা লেবার পার্টি ও এনপিপির সঙ্গে খসড়া দাবি ও আসন্ন যুগপৎ আন্দোলনে যে বিষয়গুলো তুলে ধরা হবে তা নিয়ে আলোচনা করেছেন। ‘মূল দাবির মধ্যে অবৈধ ফ্যাসিবাদী সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন, সংসদ ভেঙে দেয়া, নতুন নির্বাচন কমিশনের অধীনে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ কয়েকটি দাবিতে আমরা একমত হয়েছি। খালেদা জিয়া ও আমাদের গ্রেপ্তারকৃত নেতাকর্মীদের মুক্তি দিন।’
পর্যায়ক্রমে অন্যান্য দলের সঙ্গে আলোচনার পর বিএনপি মহাসচিব বলেন, দাবি ও ইস্যু চূড়ান্ত করে তারা যুগপৎ আন্দোলনে যাবেন।
লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান তার দলের ১০ সদস্যের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন এবং ফরিদুজ্জামান ফরহাদ এনপিপির ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। দুই দলের সঙ্গে বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ২০ দলের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খানও উপস্থিত ছিলেন।
গত রবিবার কল্যাণ পার্টির সঙ্গে প্রথম বৈঠকের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় ধাপের সংলাপ শুরু করে বিএনপি। সরকারবিরোধী আন্দোলনের দাবি ও ইস্যু চূড়ান্ত করতে জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) ও অলি আহমেদের এলডিপির সঙ্গেও সংলাপে বসে দলটি।
এর আগে, গণতন্ত্র ও জনগণের ভোটাধিকার ‘পুনরুদ্ধার' করতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন শুরু করার রূপরেখা তৈরি করতে ২৪ মে থেকে শুরু হওয়া সংলাপের প্রথম পর্বে ২৩টি দলের সঙ্গে আলোচনা করেছে বিএনপি।
আরও পড়ুন: সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য হাস্যকর: মির্জা ফখরুল