লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, বাংলাদেশের আর্থিক খাত এখন রেড জোনে প্রবেশ করেছে।
শনিবার (১৮ মে) বিকালে রাজধানীর মগবাজারে নিজ দলের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি।
হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে কর্নেল অলি বলেন, বিদ্যমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে এটি দেশের অগ্রগতি ও উন্নয়নকে গভীরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে এবং জাতির সামাজিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত করতে পারে।
তিনি আরও বলেন, ‘স্থানীয় মুদ্রার তারল্য সংকটের মধ্যে বাংলাদেশের ব্যাংকের রিজার্ভ এখন আশঙ্কাজনকভাবে কমছে। মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশ ছাড়িয়ে যাওয়ায় ব্যবসায় স্থবিরতা বিরাজ করছে। গত দুই বছরে স্থানীয় মুদ্রার ৩৮-৫১ শতাংশ অবমূল্যায়ন হয়েয়েছে। ব্যাংকগুলোর মধ্যে নগদ প্রবাহও কমেছে। বাংলাদেশের আর্থিক খাত রেড জোনে প্রবেশ করেছে- যা উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক ঝুঁকির ইঙ্গিত দেয়।’
প্রবীণ এই রাজনীতিবিদ আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, দেশের অর্থনীতি এখন অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাওয়ায় যেকোনো সময় মারাত্মকভাবে ভেঙে পড়তে পারে। ‘আমরা মনে করি, এ অবস্থা দীর্ঘদিন চলতে থাকলে দেশ আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে, যা অনিবার্য বিশৃঙ্খলার দিকে ধাবিত হবে। এমনকি এটি নিয়ন্ত্রণের বাইরেও চলে যেতে পারে।’
আরও পড়ুন: কুমিল্লায় ছাত্রলীগ ও এলডিপির সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ ২, এলডিপি মহাসচিব আটক
দেশ পরিচালনায় সরকারের ব্যর্থতার জন্যও দেশের বর্তমান অবস্থাকে দায়ী করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকার গত ১৫ বছর ধরে বাকশালী নীতিতে দেশ শাসন করছে। আমি তাদের বলব, আল্লাহর ওয়াস্তে, এটা বন্ধ করুন এবং জনগণকে তাদের ভোটের মাধ্যমে সরকার গঠনের সুযোগ দিন।’
তাকে ছাড়া দেশ চলবে না- এমন ভুল ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আহ্বান জানান এলডিপি নেতা।
সাবেক মন্ত্রী কর্নেল অলি ক্রমবর্ধমান বেকারত্বের হার, বৈদেশিক ঋণ, খেলাপি ঋণ, দুর্নীতি, অনিয়ন্ত্রিত দ্রব্যমূল্য, মাদকের বিস্তার, রাস্তাঘাটের অব্যবস্থাপনা, শিক্ষা ব্যবস্থার বেহাল দশা, বিরোধী নেতাকর্মীদের ওপর জুলুম-নির্যাতনসহ বিভিন্ন মামলায় জড়ানো ও মিথ্যা মামলায় জেলে ঢোকানোর মতো বিষয়গুলো উল্লেখ করে দেশের করুণ অবস্থার চিত্র তুলে ধরেন।
তিনি অভিযোগ করেন, সরকার প্রতিপক্ষ ও সাধারণ মানুষকে নির্যাতন ও দমন করে অবৈধভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকার ইচ্ছামতো নতুন আইন প্রণয়ন করছে। ‘দেশে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে দেশে আর কখনো শান্তি ফিরে আসবে না, অস্বস্তিকর পরিস্থিতি কখনো শেষ হবে না।’
আরও পড়ুন: গুলির ঘটনায় এলডিপির মহাসচিব রেদোয়ানের জামিন নামঞ্জুর
এমতাবস্থায় তিনি কৃষক, শ্রমিক, যুবক, ছাত্রসহ সর্বস্তরের জনগণকে দেশে গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় নতুন উদ্যমে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
কর্নেল অলি বলেন, বিএনপিকে সঙ্গে নিয়ে তাদের দল শিগগিরই বর্তমান সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিতে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবে। ‘সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় এই বাকশাল সরকারকে উৎখাতের প্রস্তুতি নিচ্ছে।’
তিনি ভারত সরকারের সমালোচনা করে বলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র ধ্বংস এবং দেশে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য ভারত সরকার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দায়ী।
অলি বলেন, ‘ভারতের জনগণের প্রতি আমাদের কোনো নেতিবাচক মনোভাব নেই। আমরা আশা করি, বাংলাদেশের জনগণ ও ভারতের জনগণের মধ্যে বন্ধুত্ব স্থাপনের ওপর গুরুত্ব দেবে। ভারত সরকার কোনো বিশেষ ব্যক্তি বা দলের সঙ্গে মেলামেশা করা থেকে বিরত থাকবে।’