রাজধানীর সংসদ ভবন এলাকায় সরকারি বাসভবনে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সরকারের উদ্যোগ চলমান রয়েছে এবং মিয়ানমারের সাম্প্রতিক পটপরিবর্তন এবং এর পরবর্তী পরিস্থিতির উপর সরকার দৃষ্টি রাখছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় পরিস্থিতির গভীরতা অনুভব করে বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে চলমান তৎপরতা আরও বেগবান করবে।’
এসময় তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে প্রশ্ন রেখে বলেন, বাংলাদেশ আর কতকাল এ বোঝা বহন করবে?
করোনার টিকা নিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, একটি মহল করোনার টিকা নিয়ে এখনও সংশয় সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
আরও পড়ুন: আল জাজিরার প্রতিবেদন অপপ্রচারের নোংরা বহিঃপ্রকাশ: কাদের
তাদের কথা কানে না নেয়ার আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, টিকার নেতিবাচক কোনো প্রতিক্রিয়া এখনও পাওয়া যায়নি। তাই সকলকে উৎসাহের সাথে টিকা গ্রহণে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান মন্ত্রী।
আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে সারাদেশে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিব বর্ষ উপলক্ষে সভা, সমাবেশ, প্রতিনিধি সভা ও গণসংযোগ কর্মসূচি পালন করার আহ্বান জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
এসকল কর্মসূচি পালনে মূলদলের সাথে সঙ্গতি রেখে সহযোগী সংগঠনগুলোকেও ঘোষিত কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানান তিনি।
আরও পড়ুন: বিদ্রোহী প্রার্থীদের মদদ দেয়ায় জনপ্রতিনিধিরা জড়িত থাকলে ব্যবস্থা: কাদের
প্রায় তিন বছর আগে মিয়ামারের সেনারা রোহিঙ্গাদের টার্গেট করে ‘হত্যা ও ধর্ষণ’ চালিয়েছিল এবং রোহিঙ্গা গ্রামগুলো পুড়িয়ে দিয়েছিল। জাতিসংঘ, রিফিউজি ইন্টারন্যাশনাল, ইউনাটেড স্টেটস হলোকাস্ট মেমোরিয়াল মিউজিয়াম, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর এবং আরও অনেককেই এ বিষয়টি দেখিয়েছে।
সেসময় ৮ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা ‘সহিংস গণহত্যা’ থেকে বাঁচতে পালিয়ে এসেছিল এবং বাংলাদেশ এখন প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে জায়গা দিয়েছে।
রোহিঙ্গা সঙ্কটের স্থায়ী সমাধানের জন্য বাংলাদেশ একাধিক উপায়ে- দ্বিপক্ষীয়, বহুপক্ষীয়, ত্রিপক্ষীয় এবং বিচার ব্যবস্থা মাধ্যমে চেষ্টা করে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ ও মিয়ানমার ২০১৭ সালের ২৩ নভেম্বর প্রত্যাবাসন চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। ২০১৮ সালের ১৬ জানুায়ারি ‘ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট’ সম্পর্কিত একটি চুক্তিতেও স্বাক্ষর করে ঢাকা-নেপিদো, যা রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নিতে সহায়ক হবে বলে মনে করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন: ত্যাগীদের রাজনীতিতে সুযোগ করে দেয়ার আহ্বান কাদেরের
মিয়ানমার সরকারের প্রতি রোহিঙ্গাদের আস্থার অভাবের কারণে ২০১৮ সালের নভেম্বরে এবং ২০১৯ সালের আগস্টে দুবার প্রত্যাবাসন প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।
সম্প্রতি মিয়ানমারের ক্ষমতা দখল করে নিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী। সেনা অভ্যুত্থানের কারণ ব্যাখ্যা করে ইয়াঙ্গুনে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে মিয়ানমারের সামরিক সরকার বাংলাদেশকে চিঠি দিয়েছে বলে জানিয়েছেন পরররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন।
চিঠিতে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জানায়, গত বছরের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত মিয়ানমারের জাতীয় নির্বাচনে প্রায় ১০.৪ মিলিয়ন জাল ভোট পড়েছিল।
শনিবার রাজধানীতে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা একটি চিঠি পেয়েছি। তারা আমাদের রাষ্ট্রদূতকে এই চিঠি দিয়েছে।’
আরও পড়ুন: স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্নে কোনো আপস নেই: কাদের
রাষ্ট্রের ক্ষমতা গ্রহণ করার পর মিয়ানমারের সামরিক প্রশাসন রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের সাথে ‘যোগাযোগ’ করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বিষয়টিকে রোহিঙ্গাদের নিজ ভূমিতে ফিরিয়ে আনার জন্য তাদের মাঝে আস্থা তৈরি করতে রাখাইন রাজ্যে সামরিক জান্তার ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থা ফেরানোর আকাঙ্ক্ষা হিসেবে দেখা হচ্ছে। এগুলো ভালো সংবাদ। এটি একটি ভালো সূচনা।’
ইউএনবিকে এক কূটনৈতিক সূত্র বলেন, ‘রাখাইন ও রোহিঙ্গাদের বিষয়ে সেনাবাহিনীর নতুন দৃষ্টিভঙ্গি যেমনই হোক না কেন, সেটি একটি কাঠামোতে আসতে সময় লাগবে।’
ড. মোমেন বলেন, রাখাইনের এ সংবাদে কুতুপালং রোহিঙ্গাদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ দেখা দিয়েছে। তারা আনন্দ প্রকাশ করেছেন।
কর্মকর্তারা বলছেন, স্বেচ্ছা প্রত্যাবাসন শুরুর জন্য নিজ দেশে ফিরে যেতে আগ্রহী রোহিঙ্গাদের মাঝে আস্থা তৈরি করা গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চির পতনের খবরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন কক্সবাজার শিবিরের রোহিঙ্গারা।
এর আগে বাংলাদেশের সাথে ২০১৭ সালে সম্পাদিত দ্বিপক্ষীয় চুক্তির ভিত্তিতে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরু করতে মিয়ানমার অঙ্গীকারাবদ্ধ বলে দেশটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, যাচাই বাছাইয়ের জন্য ৮ লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গার একটি তালিকা মিয়ানমারের কাছে হস্তান্তর করেছে বাংলাদেশ।
‘কিন্তু মিয়ানমার মাত্র ৪২ হাজার মানুষের তথ্য যাচাই করেছে। এ বিষয়ে তাদের গুরুত্বের অভাব রয়েছে,’ বলেন তিনি।
ড. মোমেন বলেন, বাংলাদেশ যথাযথভাবে তার দায়িত্ব পালন করলেও মিয়ানমার তা করছে না।
তবে প্রত্যাবাসন শুরুর বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। কারণ ১৯৭৮ এবং ১৯৯২ সালে নিজ নাগরিকদের ফিরিয়ে নিয়েছিল মিয়ানমার।