বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেছেন, সরকার ক্ষমতায় থাকার চেষ্টার অংশ হিসেবে ‘সন্ত্রাসী’ কর্মকাণ্ড এবং বিরোধী দলের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হামলা চালিয়ে দেশে অরাজকতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে।
রবিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিভিন্ন কর্মসূচিতে সাম্প্রতিক হামলার প্রতিবাদে এবং গ্রেপ্তার বিরোধী নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে সমাবেশের আয়োজন করে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণ যখন তাদের অধিকার পুনরুদ্ধারের সংগ্রাম শুরু করেছে, তখন তারা (সরকার) সহজে ক্ষমতায় আঁকড়ে থাকতে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করছে, মানুষ হত্যা করছে এবং মিছিল-মিটিং বানচাল করছে।’
আরও পড়ুন: আ.লীগ সরকার সংবিধানকে আওয়ামী সংবিধানে পরিণত করেছে: মির্জা ফখরুল
সমাবেশে বিএনপি নেতা আরও বলেন, জ্বালানি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কমানো এবং গণতন্ত্র ও জনগণের ভোট এবং অন্যান্য অধিকার পুনরুদ্ধারের দাবিতে আন্দোলন শুরু করায় মানুষকে গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের ‘ক্যাডাররা’ গণতন্ত্রকে বিলুপ্ত করতে, গণতন্ত্রকামী জনগণকে আতঙ্কিত করতে এবং গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে নস্যাৎ করতে সারাদেশে ‘সন্ত্রাসের রাজত্ব’ কায়েম করেছে।
ফখরুল আরও বলেন, ‘আমরা বলি আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসী দল। তারা সন্ত্রাসের মাধ্যমে জন্মগ্রহণ করে। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত না হয়ে তারা ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। তারা সন্ত্রাস, নিপীড়নমূলক কর্মকাণ্ড এবং ভয়ভীতির পথ অবলম্বন করে টানা ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় রয়েছে। তাদের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো মানুষকে আতঙ্কিত করা। সে কারণেই আওয়ামী সরকার তার সন্ত্রাসী ও ঘাতক বাহিনীকে আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হামলা চালাতে লেলিয়ে দিয়েছে।’
গত আগস্ট থেকে বিএনপি জনগণের বিভিন্ন ইস্যুতে আন্দোলন করছে উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, ভোলা ও নারায়ণগঞ্জে তাদের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের তিন নেতা নিহত হয়েছেন এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ক্ষমতাসীনদের দলীয় কর্মীদের হামলায় আহত হয়েছেন অনেকে।
শনিবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল ও ভাইস চেয়ারম্যান বরকতুল্লাহ বুলুর ওপর হামলার নিন্দা জানান তিনি। ‘এমনকি তারা আমাদের নারী নেত্রীদেরও রেহাই দেয়নি এবং তাদের ওপর হামলা করেছে।’
আরও পড়ুন: অচিরেই দেশব্যাপী সরকার পতন আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে: মির্জা ফখরুল
বিএনপি নেতা বলেন, গত ১৫ বছরে বাংলাদেশের অধিকাংশ অর্জন আওয়ামী লীগ ধ্বংস করেছে। ‘তারা লুণ্ঠনের রাজত্ব কায়েম করে নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, অর্থনীতি এবং জনগণের বেঁচে থাকার সব উপায় ধ্বংস করেছে। তারা প্রতিটি খাতে লুটপাট করে বিদেশে টাকা পাচার করছে।
তিনি সরকারের বিরুদ্ধে মানুষকে গুম করে মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতাসহ জনগণের অধিকার কেড়ে নেয়ার অভিযোগও করেন। ‘এনফোর্সড ডিসপিয়ারেন্স বিষয়ক জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রুপ বলেছে, বাংলাদেশে জোরপূর্বক গুমের ঘটনা বাড়ছে।’
ফখরুল অভিযোগ করেন, সরকার অনেক এলাকায় বিএনপিকে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করার অনুমতি দিচ্ছে না, অথচ ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তাদের কর্মসূচি বানচালের চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, ‘আমি বলতে চাই, এসব করবেন না। বাংলাদেশের জনগণকে এভাবে নিপীড়ন করে দমন করা যাবে না। তুমুল গণআন্দোলনের মাধ্যমে আপনারা পরাজিত হবেন।’
তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, মিয়ানমার বাংলাদেশের অভ্যন্তরে মর্টার শেল নিক্ষেপ করে মানুষ হত্যা করছে, কিন্তু সরকার নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে।
‘আসলে তাদের (সরকার) মেরুদণ্ড নেই। যেহেতু তারা জনগণের দ্বারা নির্বাচিত নয়, তাই তারা মিয়ানমারের মর্টার শেল নিক্ষেপের বিরুদ্ধে জোরালো প্রতিবাদ করতে পারে না এবং তারা বিশ্ব সম্প্রদায়ের সমর্থন জোগাড় করতে পারে না।’
এ পরিস্থিতিতে একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে সংসদ ভেঙে দিয়ে নতুন নির্বাচন কমিশনের অধীনে একটি বিশ্বাসযোগ্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথ প্রশস্ত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান ফখরুল।
তিনি বর্তমান আওয়ামী লীগ শাসনকে পরাজিত করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠায় সকল রাজনৈতিক দল ও গণতন্ত্রকামী জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।