বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার এক সংবাদ সম্মেলনে আরও বলেন, খালেদা জিয়ার কোনো সাজাই চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি হয়নি। তাই তাকে জামিন না দিয়ে কারাগারে রাখা সম্পূর্ণভাবে সংবিধান ও মানবাধিকার পরিপন্থী।
খালেদা জিয়ার কারামুক্তি এবং সুচিকিৎসার দাবিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটি দলের নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
জমির উদ্দিন বলেন, ‘কারাগারের দূষণযুক্ত পরিবেশে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য, সুস্থতা ও জীবন সবই অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তিনি এখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে।’
‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ মামলায় খালেদা জিয়াকে সাজা দেয়ার ক্ষেত্রে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি বলে দাবি করেন তিনি।
সাবেক স্পিকার জমির উদ্দিন বলেন, কারাগারের বিরূপ ও নিপীড়নমূলক পরিবেশ এবং অস্বাভাবিক মানসিক চাপের ফলে তাদের চেয়ারপার্সনের আকস্মিক হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
তিনি জানান, ডায়াবেটিসের কারণে ইতিমধ্যে খালেদা জিয়ার মুখে ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে এবং এ জন্য তিনি স্বাভাবিক খাওয়া-দাওয়া করতে পারছেন না, কোনো রকমে জাউ খেয়ে জীবন ধারণ করছেন।
বিএনপির এ নেতা আরও বলেন, তাদের নেত্রী অনেক আগে থেকেই বাম কাঁধ ও হাতের ব্যথায় ভুগতেন। ‘এখন সেই ব্যথা ডান কাঁধ ও হাতেও সম্প্রসারিত হয়ে মারাত্মক রূপ ধারণ করেছে। তিনি এখন দুই হাতেই নিদারুণ যন্ত্রণা ভোগ করছেন।’
ইনসুলিন ব্যবহারের পরেও খালেদা জিয়ার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ তো হচ্ছেই না, বরং তা বিপজ্জনক মাত্রায় অবস্থান করছে, বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমালোচনা করে জমির উদ্দিন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলছেন যে বেগম জিয়া আয়েশ করে পায়েস খাচ্ছেন। তিনি অসুস্থতার নামে নাটক করছেন। দেশের একজন বর্ষীয়ান ও জনপ্রিয় রাজনীতিবিদের অসুস্থতা নিয়ে দেশের প্রধানমন্ত্রী যে ধরনের বিদ্রুপ ও রসিকতা করে আসছেন তা নজিরবিহীন। এ ধরনের দৃষ্টান্ত সভ্য দেশ ও সমাজে একেবারেই বিরল।’
‘এছাড়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, বেগম জিয়ার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এ বক্তব্য একজন বন্দীর মানবাধিকারকে অবজ্ঞা করার শামিল এবং এ বক্তব্য কেবলমাত্র প্রধানমন্ত্রীকে খুশি করার জন্য। বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নিষ্ঠুর রসিকতায় একটি স্বৈরাচারী সরকারের ভয়াবহ রূপটিই ফুটে ওঠে,’ যোগ করেন তিনি।
জমির উদ্দিন বলেন, প্রধানমন্ত্রী লন্ডনে নিজ দলের উপস্থিত নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখার এক পর্যায়ে বলেছিলেন যে বেগম জিয়া কোনো দিনই কারাগার থেকে বের হবেন না। ‘তিনি দেশে এসে সেটি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বাস্তবায়ন করছেন।’
বিএনপির এ নেতার অভিযোগ, দেশ কর্তৃত্ববাদী শাসনের এক মহা শৃঙ্খলের মধ্যে আবদ্ধ আছে বলেই ন্যায় বিচার নিরুদ্দেশ হয়েছে। ‘আর সেই কারণে অন্যায় এবং অবিচারের এক চরম বহিঃপ্রকাশের ফলশ্রুতি হচ্ছে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি না দেয়া।’
তিনি অবিলম্বে খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি এবং তার পছন্দ অনুযায়ী হাসপাতালে সুচিকিৎসার জোর দাবি জানান।
এক প্রশ্নের জবাবে জমির উদ্দিন জানান, খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির আবেদন বিষয়ে তাদের এখন কোনো পরিকল্পনা নেই।
এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ বলেন, সরকার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে খালেদা জিয়াকে কেরানীগঞ্জের কারাগারে নেয়ার চেষ্টা করছে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস জানান, তাদের দাবি পূরণ এবং খালেদা জিয়ার কারামুক্তির জন্য আওয়ামী লীগ সরকারকে বাধ্য করতে তারা যথাসময়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেবেন।
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এবং নজরুল ইসলাম খানও সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।