তিনি বলেন, ‘সিটি নির্বাচনে আমাদের প্রার্থীদের সাথে বিপুল সংখ্যক মানুষ মাঠে নামছেন, এ নামাটাই তো আমাদের বিজয়। যেখানে আমরা নামতে পারি না, চলতে পারি না, পুলিশ বাধা দেয়, সেখানে নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা বেরিয়ে আসছি। নেত্রীর (খালেদা জিয়া) মুক্তির কথা বলতে পারছি, ধানের শীষের বিজয়ের কথা বলতে পারছি। এটাই আমাদের বিজয়। এ বিজয়কে আমরা যদি আরও সুসংগঠিত করতে পারি তাহলে তাদের (ক্ষমতাসীন দল) পরাজিত করা সম্ভব হতেও পারে।’
বৃহস্পতিবার নীলফামারী জেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপিকে উদারপন্থী রাজনৈতিক দল হিসেবে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিএনপি গণতন্ত্রকে বিশ্বাস করে। বিএনপি কোনো দাঙ্গাবাজ, উগ্রবাদ বা বিপ্লবী রাজনৈতিক দল নয়। আমাদের হাতে পিস্তল ও বন্দুক নেই, আমাদের জনগণকে সংগঠিত করে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। ওটাই আমাদের কাজ। এ জন্যই আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছি।’
‘এ সরকার ফ্যাসিবাদী সরকার, এ সরকার নির্বাচন কমিশনকে নিয়ন্ত্রণ করছে। এ সরকার পুলিশ ও র্যাবসহ অন্যান্য বাহিনী দিয়ে নির্বাচনের ফলাফল তাদের পক্ষে নিয়ে যাওয়ার জন্য অতীতে কাজ করেছে, বর্তমানেও সেই চেষ্টা করবে। কিন্তু আমরা মুখ বুঝে বসে থাকব না, আমরা নির্বাচনকে আন্দোলনের অংশ হিসেবে নিয়েছি,’ যোগ করেন তিনি।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমি সহজে তার প্রশ্নের উত্তর দেই না। এ জন্য দেই না যে আমি তার প্রশ্ন আমলেই নেই না। তিনি অনেক কথা বলেন যার সাথে রাজনীতি ও বাস্তবতার কোনো সম্পর্ক থাকে না। তিনি এখন তার ঘড়ি সমাচারে সাংঘাতিকভাবে চিন্তিত। লাখ লাখ টাকার ঘড়ি তার হাতে আছে, এ নিয়ে কথা হচ্ছে। এ নিয়ে তিনি বিব্রত অবস্থায় আছেন।’
বর্তমানে পুরো দেশ কঠিন রাজনৈতিক সংকটে আছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘সেই সংকটটি হচ্ছে বাংলাদেশে এখন গণতন্ত্র নেই। আমরা ৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছিলাম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য, গণতান্ত্রিক সমাজের জন্য, আমাদের দেশ আমরা শাসন করব এ জন্য। কিন্তু স্বাধীনতার ৪৮ বছর পরে কেউ বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবে কি আমরা যে স্বপ্ন দেখে, যে চিন্তা-চেতনায় যুদ্ধ করেছিলাম তা পূরণ হয়েছে? তা হয়নি।’
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতাদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আপনারা কথায় কথায় মুক্তিযুদ্ধের কথা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলেন। কিন্তু জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়া, জনগণের অধিকার কেড়ে নিয়ে, জনগণকে হত্যা করে অবৈধভাবে ক্ষমতায় যেয়ে যে শাসন করছেন সেই শাসন মুক্তিযুদ্ধের শাসন নয়। আপনারা আজকে মুক্তিযুদ্ধকে অপমান করছেন। আপনারা মুক্তিযুদ্ধের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করছেন।’
সংবিধান লঙ্ঘনের জন্য সরকারি দলের নেতাদের একদিন বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ আগে ত্রাণ চুরি করত। আজ তারা ব্যাংক চুরি করছে, শেয়ার বাজার চুরি করছে। আজ লুট ছাড়া কিছু নেই। আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রকে আজ চোর রাষ্ট্রে পরিণত করেছে।’
‘২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও তারা (সরকার) নির্বাচন করেছে ২৯ তারিখে। নির্বাচন কমিশনকে তারা যা বলছে তাই করছে। র্যাব, পুলিশ, প্রশাসন সব কিছুকে ব্যবহার করেছে। এমনকি বিচার বিভাগকে ছাড় দেয়নি। আজ বিচার বিভাগও স্বাধীন নেই। তারা জোর করে ক্ষমতায় রয়েছে।’
আওয়ামী লীগের ‘দুঃশাসন’ থেকে দেশকে রক্ষার জন্য নেতা-কর্মীদের গ্রাম-গঞ্জে সর্বত্র দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।
নীলফামারী শিল্পকলা একাডেমিতে আয়োজিত সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আলমগীর সরকার। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল খালেক ও জাহাঙ্গীর আলম।