পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিশ্বের ২৬টি দেশের কারাগারে ৯ হাজার ৩৭০ জন বাংলাদেশি প্রবাসী শ্রমিক আটক রয়েছেন।
সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সংসদের অধিবেশনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ তথ্য জানান।
সিলেট-৫ আসন থেকে নির্বাচিত স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মোহাম্মদ হুছামউদ্দিন চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, সৌদি আরবের বিভিন্ন কারাগারে সর্বোচ্চ ৫ হাজার ৭৪৬ জন বাংলাদেশি এবং তুরস্কের বিভিন্ন কারাগারে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫০৮ জন বাংলাদেশি আটক রয়েছে।
আরও পড়ুন: মিউনিখ সিকিউরিটি কনফারেন্সে মনোযোগের প্রধান কেন্দ্রবিন্দুতে প্রধানমন্ত্রী: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
২৪টি দেশের মধ্যে পর্তুগালে একজন, আলজেরিয়ায় একজন, জাপানে ২ জন, শ্রীলঙ্কায় ৩ জন, থাইল্যান্ডে ৪ জন, কোরিয়ায় ৬ জন, মিশরে ৬ জন, চীন (কুনমিং) ৭ জন, লিবিয়ায় ৯ জন, ইতালিতে ৮১ জন, দক্ষিণ আফ্রিকায় ৩৮৫ জন, কাতারে ৪১৫ জন, স্পেনে ১৯ জন, হংকংয়ে ১২২ জন, সিঙ্গাপুরে ৬৬ জন, ব্রুনাইয়ে ১৬ জন, চীনে (বেইজিং) ১৮৪ জন, আবুধাবিতে ৪০৪ জন, ইন্দোনেশিয়ায় ৪৯ জন, মালয়েশিয়ায় ২১৯ জন, লেবাননে ২৮ জন, গ্রিসে ৪১৪ জন, ইরাকে ২১৭ জন, মিয়ানমারে ৩৫৮ ও জর্ডানে ১০০ জন আটক রয়েছে।
মাহমুদ বলেন, ২০২৩ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত লিবিয়া থেকে মোট ১ হাজার ২২৬ জন, ফ্রান্সসহ ইউরোপের অন্য দেশের কারাগার থেকে ৫১ জনকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
ভারত, মিয়ানমার ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন কারাগার থেকে আরও ১ হাজার ৯৫০ বাংলাদেশিকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন দেশের কারাগার বা বন্দিশালায় আটক প্রবাসী বাংলাদেশিদের মুক্তির জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়, বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস এবং আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এছাড়া বিভিন্ন দেশে ফৌজদারি অপরাধে আটক অভিবাসী শ্রমিকদের বিরুদ্ধে অভিযোগের দ্রুত ও সুষ্ঠু তদন্তের জন্য সংশ্লিষ্ট থানা ও পাবলিক প্রসিকিউশন অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: ঢাকায় পৌঁছেছেন ঘানার পররাষ্ট্রমন্ত্রী
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, কারাগারে আটক শ্রমিক বা প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য বিশেষ ও সাধারণ ক্ষমার বিষয়ে সরকার সংশ্লিষ্ট দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে।
ভোলা-৩ আসন থেকে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরীর এক প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী জানান, ৮১টি দূতাবাসের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকার অন্যান্য দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখছে, যেখানে বাংলাদেশের কোনো দূতাবাস নেই।
চট্টগ্রাম-১১ আসনের এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক মনোযোগ ধরে রাখতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'এর ফলে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও ভাসানচরে বিভিন্ন দেশের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদের নিয়মিত পরিদর্শন রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এছাড়া বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রে কার্যকর আন্তর্জাতিক উদ্যোগ গ্রহণেও ভূমিকা রাখছে।’
লতিফের অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ৮ লাখের বেশি ব্রিটিশ-বাংলাদেশি যুক্তরাজ্যে বসবাস করছেন এবং যুক্তরাজ্যের রাজনীতি, অর্থনীতি ও সংস্কৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন।
তিনি বলেন, ব্রেক্সিট পরবর্তী যুক্তরাজ্যের শ্রমবাজারের প্রেক্ষাপটে আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশ থেকে দক্ষ কর্মী পাঠানোর সুযোগ এখনো রয়েছে। তবে তা হতে হবে বৈধ ও সুশৃঙ্খল অভিবাসন প্রক্রিয়ায়।
আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন খানের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পলাতক খুনিদের দেশে ফিরিয়ে আনতে প্রচলিত কূটনীতির পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, 'প্রক্রিয়া চলমান থাকায় এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।’