রাষ্ট্র ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনতে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার নির্বাহী ক্ষমতার ভারসাম্য আনা, উচ্চ কক্ষের আইনসভা প্রবর্তনসহ ২৭ দফার ‘রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের রূপরেখা’ ঘোষণা করেছে বিএনপি।
সোমবার বিকালে গুলশানের ওয়েস্টিন হোটেলের বলরুমে রাজনীতিবিদ-পেশাজীবী-সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে এক সম্মেলনে স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন ২৭ দফার এই রূপরেখা ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, ‘বর্তমান কর্তৃত্ববাদী সরকার বাংলাদেশের রাষ্ট্র কাঠামোকে ভেঙে চুরমার করে ফেলেছে। এই রাষ্ট্রকে মেরামত ও পুনঃগঠন করতে হবে। দেশের জনগণের হাতেই দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দেয়ার লক্ষ্যে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে জয়লাভের পর বর্তমান ফ্যাসিস্ট সরকার হটানোর আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বয়ে একটি জনকল্যাণমূলক জাতীয় ঐক্যমত্যের সকার প্রতিষ্ঠা করা হবে।’
তিনি আরও বলেন, এই ‘জাতীয় ঐক্যমত্যের সরকার’ রাষ্ট্রের রূপান্তরমূলক সংস্কার কার্যক্রম গ্রহণ করবে।
খন্দকার মোশাররফ জানান, জিয়াউর রহমান ঘোষিত ১৯ দফা এবং বেগম খালেদা জিয়া ঘোষিত বিএনপির ভিশন-২০৩০ এর আলো এই রূপরেখা প্রণয়ন করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: বিএনপির ৫ সংসদ সদস্যের শূন্য আসনে উপনির্বাচন ১ ফ্রেব্রুয়ারি
তিনি জানান, গত আগস্ট মাস থেকে এই রূপরেখা প্রণয়নে সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর কয়েক দফা সংলাপও করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। যা আজকে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা হলো।
তিনি আরও জানান, রাষ্ট্র ব্যবস্থা পরিবর্তনের ২৭ দফা কর্ম পরিকল্পনার মধ্যে নির্বাচনকালীন দল নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন, প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি ও মন্ত্রিসভার নির্বাহী ক্ষমতার ভারসাম্য আনা, পরপর দুই টার্মের অতিরিক্ত কেউ রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন না করা, উচ্চ কক্ষের আইনসভা, সংবিধান সংস্কার কমিশন গঠন, সংবিধানে গণভোট ব্যবস্থা পুণঃপ্রবর্তন, সংসদ সদস্যদের স্বাধীন মতামত প্রদানের সুযোগ দিতে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ আইন সংশোধন, জুডিশিয়াল কমিশন গঠন, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন, মিডিয়া কমিশন ও অর্থনৈতিক সংস্কার কমিশন গঠনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের কথা রয়েছে।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ এই নেতা বলেন, এছাড়া সকল মত ও পথের সমন্বয়ে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, বৈষ্যমহীন ও সম্প্রীতিমূলক ‘রেইনবো নেশন’ প্রতিষ্ঠা করার কথাও রূপরেখায় বলা হয়েছে। এজন্য অব্যাহত আলোচনা, মতবিনিময় ও পারস্পরিক বোঝাপড়ার ভিত্তিতে ভবিষ্যমুখী এক নতুন ধারার সামাজিক চুক্তিতে পৌঁছাতে ‘ন্যাশনাল রিকনসিলিয়েশন কমিশন’ গঠন করা হবে বলে বলা হয়েছে।
খন্দকার মোশাররফ বলেন, সবার জন্য স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে যুক্তরাজ্যের ‘এনএইচএস’ আদলে সার্বজনীন স্বাস্থ্য সেবা প্রর্বতন, এক বছরব্যাপী বা আত্মকর্মসংস্থান না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষিত বেকারদের বেকার ভাতা প্রদান, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধি করার কথা বিবেচনায় থাকবে বলে রূপরেখায় উল্লেখ করা হয়েছে।
গুলশানে ওয়েস্টিন হোটেলে রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের রূপরেখার ঘোষণার আগে লন্ডন থেকে স্কাইপেতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আগামীতে জাতীয় সরকার গঠন এবং দলের প্রণীত রূপরেখাটি সুধী সমাজের কাছে তুলে ধরেন।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য জমির উদ্দিন সরকার, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লা্হ আল নোমান, শাহজাহান ওমর, বরকত উল্লাহ বুলু, মোহাম্মদ শাহজাহান, আবদুল আউয়াল মিন্টু, শামসুজ্জামান দুদু, এজেডএম জাহিদ হোসেন, জয়নাল আবেদীন, আহমেদ আজম খান, নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, মিজানুর রহমান মিনু, গোলাম আকবর খন্দকার, হাবিবুর রহমান হাবিব, জয়নুল আবদিন ফারুক, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, আবদুল কাইয়ুম, কেন্দ্রীয় নেতা আসাদুজ্জামান রিপন, মাহবুবউদ্দিন খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, হাবিব উন নবী খান সোহেল, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, আবদুস সালাম আজাদ, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, মাহবুবে রহমান শামীম, বিলকিস জাহান শিরিন, শ্যামা ওবায়েদ, অনিন্দ্র ইসলাম অমিত, আসাদুজ্জামান, আফরোজা আব্বাস, হেলেন জেরিন খান, তাইফুল ইসলাম টিপু, হাসান জাফির তুহিন, শহিদুল ইসলাম বাবুল, মিডিয়া সেলের জহির উদ্দিন স্বপন, শাম্মী আখতার, রুমিন ফারহানা, শায়রুল কবির খান, চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ের এবিএম আবদুস সাত্তার, রিয়াজউদ্দিন নসু, শামসুদ্দিন দিদার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, গণফোরামে মোস্তফা মোহসীন মন্টু, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, সুব্রত চৌধুরী, গণঅধিকার পরিষদের রেজা কিবরিয়া, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের ইমরান ইমন, হাসিব উদ্দিন হোসেন, জেএসডির কামাল উদ্দিন পাটোয়ারী, ২০ দলীয় জোটের জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, এলডিপির রেদোয়ান আহমেদ, শাহাদাত হোসেন সেলিম, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা, ইসলামী ঐক্যজোটের মাওলানা আবদুল করিম খান, জাগপার ব্যারিস্টার তাসমিয়া প্রধান, খন্দকার লুতফর রহমান, ন্যাপ-ভাসানীর আজহারুল ইসলাম, ডিএলের সাইফুদ্দিন মনি, মুসলিম লীগের শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, পিপলস লীগের গরীবে নেওয়াজ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মুফতি গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, বাংলাদেশ ন্যাপের শাওন সাদেকী প্রমুখ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
পেশাজীবীদের মধ্যে- অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ, অধ্যাপক সদরুল আমিন, অধ্যাপক আফম ইউসুফ হায়দার, অধ্যাপক তাজমেরি এস এ ইসলাম, অধ্যাপক একেএম আজিজুল ইসলাম, অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, অধ্যাপক শামসুল আলম, অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজু, হাছিন আহমেদ, অধ্যাপক গোলাম হাফিজ কেনেডি, অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া, অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া, রফিকুল ইসলাম, আশরাফ উদ্দিন উজ্জ্বল, জাহানারা বেগম, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের এজেডএম জাহিদ হোসেন ও কাদের গনি চৌধুরী, সাংবাদিক সোহরাব হাসান, এম আবদুল্লাহ, আবদুল হাই শিকদার, কামাল উদ্দিন সবুজ, মোস্তফা কামাল মজুমদার, সৈয়দ আবদাল আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: নয়াপল্টনে নিজেদের কার্যালয় ভাঙচুরের নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি বিএনপির