হাসপাতালে ভর্তি থাকা নিশ্চিতভাবে মৃদু কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় আইভারমেকটিন অথবা এর সাথে অ্যান্টিবায়োটিক ডক্সিসাইক্লিন ব্যবহারের নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা বিষয়ে এ গবেষণার ফলাফল সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে আইসিডিডিআর,বি আয়োজিত সেমিনারে তুলে ধরা হয়।
আইসিডিডিআর,বি তাদের গবেষণার আওতায় ঢাকার তিনটি হাসপাতালে ভর্তি থাকা ৬৮ কোভিড-১৯ রোগীর মধ্যে ২২ জনকে শুধুমাত্র মুখে খাওয়ার আইভারমেকটিন (১২ মিগ্রা দিনে একবার করে ৫ দিন), ২৩ জনকে এক ডোজের আইভারমেকটিনের (১২ মিগ্রা) সাথে ডক্সিসাইক্লিন (২০০ মিগ্রা ডক্সিসাইক্লিন প্রথম দিন এবং পরবর্তীতে ১০০ মিগ্রা দিনে দুবার করে ৪ দিন) এবং ২৩ জনকে প্লাসিবো (ওষুধ সদৃশ বস্তু) দিয়ে চিকিৎসার নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা তুলনা করে দেখেছে।
গবেষণাটি কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অংশগ্রহণে সম্পন্ন হয়েছে। এটি ছিল র্যান্ডোমাইজড, ডাবল-ব্লাইন্ড, প্লাসিবো-কন্ট্রোলড ট্রায়াল।
গবেষণায় দেখা যায় যে ৫ দিন ধরে শুধুমাত্র আইভারমেকটিন পাওয়া রোগীদের ৭৭ শতাংশ ১৪ দিনের মাথায় সার্স-কোভ-২-এর ক্লিয়ারেন্স হয়েছে অর্থাৎ আরটি-পিসিআর টেস্টে তারা কোভিড-১৯ মুক্ত বলে প্রমাণিত হয়েছেন। অন্যদিকে আইভারমেকটিন ও ডক্সিসাইক্লিন পাওয়া ৬১ শতাংশ এবং প্লাসিবো পাওয়া ৩৯ শতাংশ রোগীর ভাইরাল ক্লিয়ারেন্স দেখা যায়।
এছাড়াও দেখা যায় যে তৃতীয় দিনে শুধু আইভারমেকটিন পাওয়া দলে ১৮ শতাংশ, আইভারমেকটিন ও ডক্সিসাইক্লিন পাওয়া দলে ৩ শতাংশ এবং প্লাসিবো দলে ৩ শতাংশ রোগীর ভাইরাল ক্লিয়ারেন্স ছিল। সপ্তম দিনে এটি ছিল যথাক্রমে ৫০ শতাংশ, ৩০ শতাংশ এবং ১৩ শতাংশ।
আইভারমেকটিন ও ডক্সিসাইক্লিন এবং প্লাসিবোর চিকিৎসার তুলনায় ৫ দিনের আইভারমেকটিন চিকিৎসায় রোগীর ক্লিনিক্যাল অবস্থার উন্নতিও ছিল সম্ভাবনাময়, যেখানে রক্তের বিভিন্ন বায়োমার্কারের উন্নতির মাধ্যমে নির্দেশিত সংক্রমণের তীব্রতার মাত্রা কমার লক্ষণ দেখা যায়।
শুরু থেকে ৭ দিনের মাথায় শুধুমাত্র ৫ দিন আইভারমেকটিন প্রাপ্ত দলে অন্য দুটি দলের তুলনায় সি-রিঅ্যাক্টিভ প্রোটিন (সিআরপি) ও ল্যাকটেইট ডিহাইড্রোজিনেস (এলডিএইচ) এবং ফেরিটিন লক্ষণীয়ভাবে কমতে দেখা যায়।
মৃদু কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে আইভারমেকটিনের কার্যকারিতা যথেষ্ট আশাব্যঞ্জক এবং এর ব্যবহার নিরাপদ বলে গবেষণায় প্রতীয়মান হয়।
গবেষণার ফলাফলের ওপর একটি আর্টিকেল ডিসেম্বরের ২ তারিখে ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব ইনফেকশাস ডিজিজেসে (আইজেআইডি) প্রকাশ করা হয়েছে।
সেমিনারে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিলের (বিএমআরসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী বিশেষ অতিথি হিসেবে যুক্ত ছিলেন অনলাইনের মাধ্যমে এবং আইসিডিডিআর,বি-র ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক ও নিউট্রিশন অ্যান্ড ক্লিনিক্যাল সার্ভিসেস বিভাগের সিনিয়র ডিরেক্টর ড. তাহমিদ আহমেদ এবং অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিরা সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন।
আইসিডিডিআর,বি-র এন্টারিক অ্যান্ড রেসপিরেটরি ডিজিজিস-এর সিনিয়র ফিজিশিয়ান সায়েন্টিস্ট এবং এ গবেষণার প্রধান গবেষক ড. ওয়াসিফ আলী খান গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন।
তিনি বলেন, ‘যদিও কোনো সুদৃঢ় উপসংহারে পৌঁছানোর বিবেচনায় এ গবেষণায় অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা কম তবুও প্রাপ্তবয়স্ক কোভিড-১৯ রোগীর চিকিৎসার শুরুতে আইভারমেকটিন ব্যবহারের উপকারিতা এ গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে। পরবর্তীতে আইভারমেকটিন নিয়ে বড় ধরনের ট্রায়ালের জন্য এ গবেষণালব্ধ জ্ঞান নিঃসন্দেহে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও এ ফলাফল কোভিড-১৯-এর চিকিৎসায় আইভারমেকটিনের ব্যবহার-সংক্রান্ত বিশ্বব্যাপী অন্যান্য গবেষণার ফলাফলের সাথেও সামঞ্জস্যপূর্ণ।’
ড. তাহমিদ আহমেদ বলেন, ‘বাংলাদেশের মতো নিম্ন ও মাঝারি আয়ের দেশগুলোতে এ মহামারি মোকাবিলায় একটি সাশ্রয়ী এবং সহজে ব্যবহারযোগ্য চিকিৎসা ব্যবস্থা খুঁজে বের করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কোভিড-১৯-এর চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের সাহায্য করার উদ্দেশ্যে শুধু আইভারমেকটিন ব্যবহার করে আরও বড় মাপের একটি ট্রায়াল পরিচালনা করার জন্য আমরা সহায়তা সন্ধান করছি।’
অনুষ্ঠানের সব বক্তাই কোভিড-১৯ আক্রান্তদের রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে পরামর্শ দিয়েছেন।