পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, বার্ধক্যজনিত জটিলতায় প্রবীণ এ ঔপন্যাসিক তার বনানীর নিজ বাড়িতে ইন্তেকাল করেন।
তার মরদেহ সোমবার দুপুর ১২টা থেকে বাংলা একাডেমিতে রাখা হবে এবং বিকাল ৩টায় তার নামাজে জানাজা রাজধানীর তেজগাঁওয়ে চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হবে।
আরও পড়ুন: করোনায় মারা গেলেন ওস্তাদ শাহাদাত হোসেন খান
এরপর আসর নামাজের শেষে বনানী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।
১৯৩৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের বিক্রমপুরে (বর্তমানে মুন্সীগঞ্জ জেলা) মৌলভী মোহাম্মদ মুল্লুক চাঁদ এবং মা হামিদা খাতুনের পরিবারে তার জন্ম।
আরও পড়ুন: মারা গেলেন খুলনার প্রবীণ সাংবাদিক পান্না
ছয় দশকেরও বেশি সময় ধরে লেখালেখির জীবনে রাবেয়া খাতুন বিভিন্ন বিষেয়ের উপর ৫০টিরও বেশি উপন্যাস এবং ৪০০টিরও বেশি ছোটগল্প লিখেছেন। এছাড়াও ভ্রমণ-বিষয়ক অনেক সাহিত্য রয়েছে তার।
রাবেয়া খাতুনের লেখা প্রথম গল্প ‘প্রশ্ন’ সাপ্তাহিক যুগের দাবি ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয় এবং প্রথম উপন্যাস ‘রাজারবাগ’ প্রকাশিত হয় বেগম ম্যাগাজিনে। রাবেয়া খাতুনের প্রথম উপন্যাস ‘মধুমতী’ প্রকাশিত হয় ১৯৬৩ সালে। ক্ষয়িষ্ণু তাঁতী সম্প্রদায়ের জীবন সংকট ও উঠতি মধ্যবিত্ত জীবনের অস্তিত্ব নিয়ে লেখা এই উপন্যাসই তাকে কথাসাহিত্যিক হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়।
আরও পড়ুন: অধ্যাপক আনিসুজ্জামান: একজন আদর্শবান মানুষের বিদায়
তার অন্যতম উল্লেখযোগ্য রচনা হলো একাত্তরের নয় মাস (১৯৯০)। যেখানে তিনি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকথা তুলে ধরেছেন। তার লেখা তিনটি বই নিয়ে- কখনো মেঘ কখনো বৃষ্টি (২০০৩), মেঘের পরে মেঘ (২০০৪) ) এবং মধুমতি (২০১১) ফিচার ফিল্ম তৈরি করা করা হয়েছে।
রাবেয়া খাতুন সাংবাদিকতাও করেছেন। জাহানারা ইমাম সম্পাদিত ম্যাগাজিনে কাজ করেছেন। এরপরে তিনি কিংবদন্তি চলচ্চিত্র নির্মাতা জহির রায়হানের সাথে ‘সিনেমা’ ম্যাগাজিনের সাহিত্য বিভাগের সম্পাদক হিসেবে কাজ করেছিলেন এবং পরে পঞ্চাশ দশকে ‘অঙ্গনা’ নামের একটি মাসিক পত্রিকা সম্পাদক হন তিনি।
আরও পড়ুন: আলী যাকেরের মৃত্যুতে চলচ্চিত্র তারকাদের শোক
বাংলা সাহিত্যে অসামান্য অবদানের জন্য রাবেয়া খাতুন ১৯৭৩ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরষ্কার, ১৯৯৩ সালে একুশে পদক এবং বাংলাদেশ সরকার ২০০৭ সালে তাকে স্বাধীনতা দিবস পুরষ্কারে ভূষিত করেন।
১৯৫২ সালের ২৩ জুলাই সম্পাদক ও চিত্র পরিচালক এটিএম ফজলুল হকের (১৯৯০ সালে তিনি মারা গেছেন) সাথে রাবেয়া খাতুনের বিয়ে হয়। তিনি একাধারে সাংবাদিক, সমালোচক এবং চলচ্চিত্র নির্মাতা যিনি বাংলাদেশের শিশুদের জন্য প্রথম চলচ্চিত্র ‘প্রেসিডেন্ট’ নিমার্ণ করেছিলেন।
আরও পড়ুন: করোনায় মারা গেলেন চিত্রশিল্পী মুর্তজা বশীর
তার চার সন্তানের মধ্যে বড় ছেলে ফরিদুর রেজা সাগর বিশিষ্ট শিশুসাহিত্যিক ও টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব এবং ইমপ্রেস টেলিফিল্ম লিমিটেড ও চ্যানেল আই-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক, কেকা ফেরদৌসী একজন প্রখ্যাত শেফ এবং টেলিভিশন রান্না অনুষ্ঠানের উপস্থাপক, ফরহাদুর রেজা প্রবাল একজন স্থপতি এবং তার কনিষ্ঠ কন্যা ফারহানা কাকলী একজন গৃহিনী।
আরও পড়ুন: ফিরে দেখা ২০২০: মহামারির বছরে যাদের হারাল বাংলাদেশ