খুলনার কয়রায় গ্রীষ্মের শুরুতেই পানির জন্য রীতিমতো হাহাকার চলছে। চারদিকে পানি আর পানি, কিন্তু সবটাই লবণাক্ত। নারী-পুরুষ এমনকি শিশুরাও পরিবারের জন্য সুপেয় পানি সংগ্রহে পাড়ি দিচ্ছে মাইলের পর মাইল। অনেকে বাধ্য হয়ে পান করছেন পুকুরের কাঁদামিশ্রিত ও লবণযুক্ত পানি।
চৈত্রের খরায় প্রাকৃতিক উৎসগুলো শুকিয়ে যাওয়া, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব, লবণাক্ততা বেড়ে সুপেয় পানির আধার নষ্ট হওয়া, গভীর নলকূপের পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার কারণে মিলছে না সুপেয় পানি। দীর্ঘদিনের এ সমস্যায় উপকূলে জনপদের দৈনন্দিন জীবনে প্রভাব ফেলেছে।
উপজেলার মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের কালিকাপুর বটতলা সরকারি পুকুরপাড়ে মহেশ্বরীপুর গ্রাম থেকে পাঁচ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে পানি নিতে এসেছেন ষাটোর্ধ্ব জোরিনা খাতুন। বয়সের ভারে অনেক পথ হেঁটে আসায় হাঁপিয়ে উঠেছেন তিনি। ক্লান্তি দূর করতে কলসি রেখে বসে বিশ্রাম নিচ্ছেন।
তিনি বলেন, ‘পানির অনেক কষ্ট আমাদের। প্রতিদিন চার কলস পানি লাগে আমার। একবারে চার কলস পানি নিতে পারি না। তাই বাধ্য হয়ে দুইবার আসতে হয় এখানে। পানি নিতে আমি আর আমার মেয়ে আসি। দুজন দু’কলস করে পানি নিয়ে যাই।’
তিনি আরও বলেন, বয়স হয়ে গেছে এখন আর হাঁটতে পারিনা। দুই বার পানি আনতে দিনের আধা বেলা লেগে যায়। আমাদের আশেপাশে আর কোথাও মিষ্টি পানি না থাকায় এই পানি দিয়ে খাওয়া ও রান্নার কাজ করতে হয়।
সাতহালিয়া গ্রামের নাসির মোড়ল বলেন, আমার বয়স ৭৭ বছর।এই ৭৭ বছর পার করলাম পুকুরের পানি খেয়ে। কারণ আমাদের এখানে টিউবওয়েলের পানি ভাল হয় না। আমরা সবাই মিলে একবার একটা টিউবওয়েল বসানোর ব্যবস্থা করেছিলাম, কিন্তু তিন হাজার ফুট নিচেও মিষ্টি পানি পাইনি।
আরও পড়ুন: পানির অপচয় রোধে রিসাইক্লিং করার উদ্যোগ নিতে হবে: স্থানীয় সরকার মন্ত্রী