বৃহস্পতিবার ঢাকার সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালের বিচারক আস সামশ জগলুল হোসেন ওসি মোয়াজ্জেমকে আট বছর কারাদণ্ড দেন। এছাড়া তাকে ১৫ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ডও দিয়েছেন বিচারক।
ওসি মোয়াজ্জেমকে গ্রেপ্তার করে আইনের মাধ্যমে বিচারের আওতায় আনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মামলার বাদী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনসহ পুলিশ ডিপার্টমেন্টের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছেন নুসরাতের মা শিরিন আক্তার।
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার মেয়ে হত্যার বিচারের দায়িত্ব নিয়েছেন। উনার কারণে নুসরাত হত্যা মামলার কার্যক্রম দ্রুততার সাথে হয়েছে।’ এজন্য তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
নুসরাতের মা আরও বলেন, ‘ওসি মোয়াজ্জেম আমার মেয়েকে থানায় হেনস্থা করেছে। অবৈধভাবে ভিডিও ধারণ করেছে। আমরা এর আগেও ওসি মোয়াজ্জেমের বিচার চেয়েছি। আমি আজ তার বিচার পেয়েছি।’
‘ওসি মোয়াজ্জেম আমার মেয়ের হত্যাকে আত্মহত্যা বলে প্রচার করেছে। তা প্রতিষ্ঠিত করতে অবৈধভাবে ভিডিও ধারণ করেছেন,’ যোগ করেন তিনি।
নুসরাতের বড় ভাই ও নুসরাত হত্যা মামলার বাদী মাহমুদুল হাসান নোমান বলেন, ‘ওসি মোয়াজ্জেম নুসরাতকে তার অফিসে নিয়ে যে আপত্তিকর নাজেহাল করেছে সেটা অত্যন্ত দুঃখজনক। এ বিচারের মধ্য দিয়ে পুলিশের গ্রহণযোগ্যতা আরও বেড়ে গেছে।’
নুসরাতের ছোটভাই রাশেদুল হাসান রায়হান রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে বলেন, তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে বিচারের মাধ্যমে সত্যের জয় হলো।
নুসরাত হত্যা মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শাহজাহান সাজু বলেন, ওসি মোয়াজ্জেমের বিচারের মধ্য দিয়ে প্রমাণ হয়েছে অপরাধ করলে যতই ক্ষমতাশালী হোক আইনের আওতায় আসতে হবে।
নুসরাত জাহান রাফির জবানবন্দির ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় সাবেক ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে গত ১৫ এপ্রিল সাইবার ট্রাইব্যুনালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।
পরে ১৬ জুন রাজধানীর শাহবাগ এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গত ১৭ জুলাই সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মাদ আস সামছ জগলুল হোসেন এ মামলায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।
চলতি বছরের ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা সিরাজ-উদ দৌলার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগে মামলা করেন ভুক্তভোগী নুসরাতের মা। পরে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
যৌন হয়রানির অভিযোগ করতে যাওয়ার পর সোনাগাজী থানার তৎকালীন ওসি মোয়াজ্জেমের কক্ষে ফের হয়রানির শিকার হতে হয় নুসরাতকে। ‘নিয়ম না মেনে’ জেরা করতে করতেই নুসরাতের বক্তব্য ভিডিও করেন ওসি। মৌখিক অভিযোগ নেয়ার সময় দুজন পুরুষের কণ্ঠ শোনা গেলেও সেখানে নুসরাত ছাড়া অন্য কোনো নারী বা তার আইনজীবী ছিলেন না।
গত ৬ এপ্রিল আলিম পরীক্ষার আগ মুহূর্তে বান্ধবীকে মারধরের কথা বলে নুসরাতকে মাদরাসার ছাদে ডেকে নিয়ে অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ দৌলার বিরুদ্ধে মামলা তুলে নিতে চাপ দেয় দুর্বৃত্তরা। মামলা তুলে নিতে অস্বীকৃতি জানালে নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায় তারা। ওইদিন তাকে উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতাল এবং পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে গত ১০ এপ্রিল চিকিৎসাধীন অবস্থায় নুসরাতের মৃত্যু হয়।
গত ২৪ অক্টোবর ফেনীর একটি ট্রাইব্যুনাল নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় ১৬ আসামিকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছে।