কুমিল্লার মুরাদনগরে কন্যা সন্তান জন্ম দেয়ায় শ্বশুর-শাশুড়ীর মানসিক নির্যাতন সইতে না পেরে ১৯ দিনের কন্যা শিশুকে পানিতে ফেলে হত্যা করেছে এক মা। উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানাধীন বাইড়া গ্রামে এই ঘটনা ঘটে।
শুক্রবার বিকালে উপজেলার টনকি ইউনিয়নের বাইড়া গ্রামের একটি খাল থেকে শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
অভিযুক্ত রহিমা আক্তার রত্না (২০) ওই গ্রামের প্রবাসী মজিবুর রহমানের স্ত্রী।
আরও পড়ুনঃ ছোটমণি নিবাসে বালিশচাপা দিয়ে শিশু হত্যা: আয়ার দায় স্বীকার
এ ঘটনায় অভিযুক্ত মা রহিমা আক্তার রত্নাকে গ্রেপ্তার করে শনিবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে বাঙ্গরা বাজার থানা পুলিশ।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, জেলার মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানাধীন বাইরা গ্রামের বাচ্চু মিয়ার ছেলে প্রবাসী মজিবুর রহমানের সাথে এক বছর আগে বিয়ে হয় রাহিমা আক্তার রত্নার (২০)। গত ২৫ জুলাই ২০২১ একটি কন্যা সন্তান জন্ম দেন রহিমা।
আরও পড়ুনঃ মুক্তিপণ না পেয়ে শিশু হত্যার অভিযোগে ২ কিশোর আটক
পুলিশ জানায়, রহিমা কন্যা সন্তান জন্ম দেয়ায় তার শ্বশুর-শাশুড়ী প্রায়ই মানসিক নির্যাতন করতো। এদিকে সাংসারে আর্থিক অনটনের কারনেও মানসিকভাবে কষ্ট দিতো। এমতাবস্তায় মানসিক কষ্ট সহ্য করতে না পেরে গত ১২ আগস্ট সকাল ১০টার দিকে রহিমার শ্বশুর, শাশুড়ি, দেবর বাড়ির পাশে জমিতে কৃষি কাজে গেলে এই সুযোগে রাহিমা তার ১৯ দিনের শিশু কন্যাকে বাড়ির পাশের খালের পানিতে ফেলে দেয়।
পরবর্তীতে রহিমার শাশুড়ি জমি থেকে ফিরে তার নাতনীকে না পেয়ে এলাকায় খোঁজাখুজি শুরু করেন। এক পর্যায়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন।
মুরাদনগর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মীর আবিদুর রহমানের নেতৃত্বে বাঙ্গরা বাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুজ্জামান তালুকদার, সাব-ইন্সপেক্টর শাহনেওয়াজ ঘটনাস্থলে যান এবং বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে শিশুটিকে পাওয়া যায়নি। এক পর্যায়ে পুলিশের সন্দেহ হলে ঘটনাস্থলের পাশের খালে জাল ফেলে তল্লাশি চালিয়ে খাল থেকে শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়।
আরও পড়ুনঃ গাইবান্ধায় শিশু হত্যা মামলায় ৫ জনের যাবজ্জীবন
পুলিশ শিশুটির মা রাহিমা, দাদী রহিমা, দাদা বাচ্চু মিয়া, ননদ হালিমাকে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এসময় মা রাহিমা আক্তার রত্না নিজে পানিতে ফেলে হত্যার কথা স্বীকার করে।
তিনি জানায় যে, শিশুটি জন্মের পর থেকেই পারিবারিক বিভিন্ন মানসিক অত্যাচার, শ্বশুর শাশুড়ির নানান কথাবার্তা ও আর্থিক দৈন্যতার কারণে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মানসিক নির্যাতন সইতে না পেরে শিশুটিকে খালে ফেলে দেন।
বাঙ্গরা বাজার থানার ওসি কামরুজ্জামান তালুকদার জানান, এ ঘটনায় নিহতের দাদা বাদী হয়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় বাঙ্গরা বাজার থানায় ৩০২ ধারায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। অভিযুক্ত মা রহিমাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে শনিবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।