সিলেটের বিয়ানীবাজারে বন্যার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় উপজেলায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। কুশিয়ারা নদীর শেওলা পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৭২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একই সঙ্গে কুশিয়ারা নদীর ডাইক উপচে এবং কয়েকটি স্থানে ভাঙা ডাইক দিয়ে হুহু করে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে।
নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় দুবাগ, শেওলা, কুড়ারবাজার, মাথিউরা, তিলপাড়া ও মোল্লাপুর, ইউনিয়নের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এতে এসব ইউনিয়নের নতুন করে ৯০ গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
এদিকে বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলার কুড়ারবাজার ইউনিয়নের বৈরাগী খশির এলাকার বসতঘর থেকে পানিতে ভাসমান অবস্থায় একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। বাহার উদ্দিন (৪০) নামের ওই আব্দুল্লাহপুর নয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। নিহত ব্যক্তি ওই পরিবারের গৃহকর্তা বলে জানা গেছে।
আরও পড়ুন: বন্যা: ৬ দিন পর সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরে ফ্লাইট উঠা-নামা শুরু
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহ থেকে বাহার উদ্দিনের ঘরে পানি উঠে। পরে তিনি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে স্থানীয় বৈরাগীবাজার সিনিয়র মাদরাসা আশ্রয় কেন্দ্রে ওঠেন। বুধবার বিকালে তিনি তার ডুবে যাওয়া ঘর দেখতে যান। এরপর পরিবারের সদস্যদের মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জানান- তিনি বাড়িতে রাত্রিযাপন করবেন। বৃহস্পতিবার সকালে তার খোঁজ না পেয়ে পরিবারের সদস্যরা বাড়িতে এসে দেখেন, ঘরে পানির মধ্যে তার লাশ ভাসছে। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় বাহারের লাশ উদ্ধার করে বৈরাগীবাজার সিনিয়র মাদরাসা আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়।
অপরদিকে উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার নব্বইভাগের বেশি মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় মানববেতর জীবন যাপন করছেন। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত উপজেলার ৯৮৭টি পরিবারের প্রায় ছয় হাজার আশ্রয় কেন্দ্রে উঠেছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশিক নূর জানান, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় কুশিয়ারা নদীর পানি বিয়ানীবাজারের শেওলা পয়েন্টে বিপৎসীমার ৭২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসনের প্রস্তুত করা ৫৩টি অস্থায়ী আশ্রয় ১০টি ইউনিয়ন ও একটি আশ্রয় কেন্দ্রে ৯৮৭ পরিবারের পাঁচ হাজার ৯২২ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। এসব পরিবারের ৬২০টি গবাদিপশুও আশ্রয় কেন্দ্রের বাইরে রাখা হয়েছে।
আরও পড়ুন: আরও বৃষ্টির পূর্বাভাস, তবে বৃহস্পতিবার সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে
বিয়ানীবাজার পৌরশহর ছাড়া উপজেলার অন্যান্য হাটবাজারে বন্যার পানি ওঠেছে। রাস্তা-ঘাট তলিয়ে যাওয়ায় বিভিন্ন এলাকায় সাধারণ মানুষকে জরুরি প্রয়োজনে নৌকা ব্যবহার করতে দেখা গেছে। বৈরাগীবাজার ও কাকরদিয়া এলাকায় প্রধান সড়ক দিয়ে নৌকা চলাচল করতে দেখা গেছে।
সোনাই নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বিয়ানীবাজার উপজেলার লাউতা, মুড়িয়া ও তিলপাড়া ইউনিয়নের বহুগ্রাম প্লাবিত হয়েছে। সোনাই নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জলঢুপ-লাতু সড়কের সিংহভাগ তলিয়ে গেছে। একই সঙ্গে টিলাবেষ্টিত নাওয়ালা, দক্ষিণ পাহাড়িবহরসহ আশপাশ এলাকা ডুবে গেছে।
আরও পড়ুন: কুশিয়ারায় পানি বাড়ায় সিলেটের ৬ উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি