আত্মহননের পর যথারীতি নিজের পারিবারিক কবরস্থানে দাফনের কথা থাকলেও গ্রাম্য মোড়ল ও স্থানীয় কুসংস্কারের কারণে নিজের জন্মস্থানে দাফনের সুযোগ হয়নি। ফলে সিলেট নগরীর মানিকপীর টিলায় তার লাশ দাফন করা হয়।
সরেজমিনে জানা গেছে, আত্মহননকারী দাফনের পর ভূত হয়ে স্থানীয়দের জ্বালাতন করবে এ বিশ্বাসে পপির লাশ স্থানীয়ভাবে দাফন করা সম্ভব হয়নি। পুরো গ্রামবাসী এ ব্যাপারে অবগত ঠিকই কিন্তু কেউ মুখ খুলতে সম্পূর্ণ নারাজ। এমনকি নিহত পপির পরিবারও।
জানা গেছে, ২০ বছর আগে অত্র গ্রামের জনৈক জয়বান বিবির (৭০) ছেলে আত্মহত্যা করলে তার লাশও এ গ্রামে দাফন না করে পরিবারের লোকজন নগরীর মানিকপীর টিলায় দাফন করে বলে জানান জয়বান বিবি।
তিনি বলেন, ‘আত্মহত্যাকারী মরার পর ভূত হয়ে স্থানীয়দের ক্ষতি করতে পারে এমন ভয়ে আমার ছেলের লাশ গ্রামে দাফন করা সম্ভব হয়নি।’
নিহত পপির ছোট বোন তাহির আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী রিপা বেগম বলেন, ময়নাতদন্তের পরে আমার বোনের লাশ পরিবারের লোকজন মানিকপীর টিলায় দাফন করেন।’ গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে পপির লাশ কেন দাফন করা হয়নি এ প্রশ্নের জবাবে রিপা হিমশিম খায়।
অন্যদিকে পপির বড় ভাই মনোয়ার হোসেন জানান, দাফন-কাফনের টাকা না থাকায় পারিবারিক সিদ্ধান্তের ভিত্তিতেই তার বোনকে সিলেটের মানিকপীর টিলায় দাফন করা হয়।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আলতাব আলী বলেন, ‘লোকমুখে পপির আত্মহত্যার খবর পেয়েছি।’ তবে গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে কেন পপির লাশ দাফন করা সম্ভব হয়নি এ ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না বলে জানান।
এ ব্যাপারে বিশ্বনাথ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বর্ণালী পাল বলেন, ‘এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। বিষয়টি আজকে আমি শুনেছি। তবে নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে আমাদেরকে এখনও জানানো হয়নি। যদি দাফনের আগে জানানো হতো তাহলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া যেত। তবুও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) আমি বলেছি, ওই পরিবারকে সার্বিক সহযোগিতা করার জন্য।’
উল্লেখ্য, পপি বেগম (১৯) গত ৯ অক্টোবর দিবাগত রাতে তার বোনের বাড়ি দক্ষিণ সুরমা উপজেলার তেতলী চেরাগী গ্রামে গণধর্ষণের শিকার হয়। পরদিন ১০ অক্টোবর সকালে সে বোনের বাড়ি থেকে নিজ বাড়িতে ফিরে আত্মহত্যা করে। তাকে দাফনের দুদিন পর তার ব্যবহৃত ভ্যানেটি ব্যাগে নিজ হাতে লেখা একটি চিরকুট (সুইসাইড নোট) পায় পরিবার। ওই চিরকুটে গণধর্ষণের কথা উল্লেখ করে পপি।
এ ঘটনায় নিহতের বাবা শুকুর আলী চারজনকে আসামি করে গত ১৪ অক্টোবর রাতে বিশ্বনাথ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ওই রাতেই নিহতের ভগ্নিপতি ও তেতলী চেরাগী গ্রামের মৃত আব্দুল মন্নানের ছেলে ফয়জুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরদিন ১৫ অক্টোবর রাতে মামলার অপর আসামি একই গ্রামের মৃত মতছির আলীর ছেলে জাহেদ (২২) ও গত বৃহস্পতিবার রাতে মামলার প্রধান আসামি জাহাঙ্গীর আলমকে (৩৫) গ্রেপ্তার করে র্যাব-৯। তবে মামলার অপর আসামি তেতলী চেরাগী গ্রামের আব্দুল মনাফের ছেলে বারিক মিয়া (৩৭) এখনও পলাতক রয়েছেন।