এদিকে, তিস্তার ভাঙনে উলিপুরের নাগরাকুড়া টি বাঁধের ব্লক পিচিংসহ ৫০ মিটার নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানায়, ধরলা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি বাড়তে থাকায় এ দুটি নদীর অববাহিকার ৫০টি চরগ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। জেলার ৫৫টি ইউনিয়নের সাড়ে তিনশ চর ও নদী সংলগ্ন ৩৫৭ গ্রামের দুই লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। নদী ভাঙনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ ৫শ পরিবার ঘরবাড়ি হারিয়েছে। প্রায় ৩০ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধসহ ৩৭ কিলোমিটার কাঁচা সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নদ-নদীর প্রবল স্রোতের কারণে ঘরে টিকতে না পেরে অনেকেই রাস্তা, বাঁধ ও উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। এসব মানুষের খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকটের পাশাপাশি বৃষ্টির কারণে ভোগান্তি বাড়ছে।
তিস্তার ভাঙনে উলিপুরের নাগরাকুড়া টি বাঁধের ব্লক পিচিংসহ ৫০ মিটার অংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। সারডোব, নুনখাওয়া মোগলবাসা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধসহ ১৫টি স্পটে ভাঙন দেখা দিয়েছে। পানির চাপে বাঁধ ভেঙে রৌমারী উপজেলা শহর প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিএম আবুল হোসেন বলেন, 'আমার ইউনিয়নের প্রায় ১৪ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।'
উলিপুরের বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বেলাল হোসেন জানান, বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের পুরোটাই বন্যা কবলিত। প্রায় ১৩ হাজার মানুষ পানিবন্দি।
সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী সরকার জানান, যাত্রাপুর ইউনিয়নে ১৫ হাজার মানুষ গত চারদিন ধরে পানিবন্দি জীবন যাপন করছে। জরুরিভাবে খাদ্য সহায়তা দেয়া প্রয়োজন। তবে এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে চাল বা শুকনো খাবার বরাদ্দ পাননি বলেও তিনি জানান।
যাত্রাপুর ইউনিয়নের বদলীপাড়া এলাকার বাসিন্দা ছকিনা বেওয়া ও শাহাজাহান জানান, গত চারদিন ধরে পানিবন্দি হয়ে আছি। হাতে কাজ নেই, ঘরে খাবারও নেই। এ অবস্থা পরিবার পরিজন নিয়ে খুব কষ্টে দিন পার করছেন তারা।
যাত্রাপুর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ময়নুদ্দিন ভোলা জানান, তার ওয়ার্ডের পানিবন্দি মানুষেরা কষ্টে থাকলেও এখন পর্যন্ত বরাদ্দ না পাওয়ায় তাদেরকে কোনো খাদ্য সহায়তা দেয়া সম্ভব হয়নি।
উলিপুরের সাহেবের আলগা ইউনিয়নের ২৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি বলে জানান চেয়ারম্যান সিদ্দিক মন্ডল।
সাহেবের আলগা ইউনিয়নের দই খাওয়ার চরের রমজান আলী জানান, পানি আরও বাড়লে বাড়িতে থাকার উপায় থাকবে না। আশপাশে কোনো শুকনো জায়গাও নেই।
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. রেজাউল করিম জানান, বন্যা কবলিত এসব মানুষের জন্য সরকারিভাবে ৩০২ মেট্রিক টন চাল ও শুকনো খাবারের জন্য ৩৬ লাখ ৬৮ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যা উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে চেয়ারম্যানদের মাঝে বিতরণ শুরু হয়েছে।
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. মোস্তাফিজার রহমান প্রধান জানান, জেলয় ৫ হাজার ৬৫৮ হেক্টর জমির আমন বীজতলা, আউশ, শাক-সবজি, পাটসহ অন্যান্য ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। পানি নেমে যাওয়ার পর ক্ষয়ক্ষতি নিরুপন করা হবে।
কুড়িগ্রামের বন্যা পরিস্থিতি দেখতে এসে রংপুর বিভাগীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী জ্যোতি প্রসাদ ঘোষ জানান, আগামী ৪-৫ জুলাই পর্যন্ত পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে এবং ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার ১ মিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। ধরলা ও তিস্তার পানিও বিপদসীমার ৫০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। এ সময় নদ-নদীর ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।