বানভাসি মানুষের দুর্ভোগ কমেনি। শুকনা খাবার, বিশুদ্ধ পানি, জ্বালানি ও গো-খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। পানিবন্দী প্রায় দুই লাখ মানুষ পড়েছে চরম দুর্ভোগে। এখন পর্যন্ত সরকারি কিংবা বেসরকারি পর্যায়ে ত্রাণ তৎপরতা চোখে পড়েনি। চলতি বন্যায় জেলায় নদী ভাঙনের শিকার হয়ে ভিটেমাটি হারিয়েছে ৫০০ পরিবার।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম জানান, বুধবার ধরলার পানি কুড়িগ্রাম সেতু পয়েন্টে বিপদসীমার ৪৩ সেন্টিমিটার এবং ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ৬৪ সেন্টিমিটার ও নুনখাওয়া পয়েন্টে ৫৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ভাঙন দেখা দিয়েছে নাগড়াকুড়ার টি-বাঁধ, সারডোব, নুনখাওয়া ও মোগলবাসা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে।
হাতিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবিএম আবুল হোসেন জানান, তার ইউনিয়নের তিন হাজার পরিবার প্রায় পাঁচ দিন ধরে বন্যার পানিতে ভাসছে। সাত শতাধিক পরিবার বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছে বাঁধের রাস্তায়।
‘সোমবার উপজেলা পরিষদে সভা করে হাতিয়া ইউনিয়নে ৩৫০ প্যাকেট ত্রাণ বরাদ্দ দেয়া হয়। যা এখনও হাতে পাইনি। বুধবার হাতে পেলেই বিতরণ করা হবে। প্রতি প্যাকেটে রয়েছে ২০ কেজি চাল এবং এক কেজি করে তেল, ডাল, লবণ ও চিনি,’ যোগ করেন তিনি।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা দিলীপ কুমার সাহা বলেন, ‘জেলার তিন পৌরসভা ও ৭৩ ইউনিয়নের মধ্যে ৫৫টি বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। ৩৫৭টি গ্রাম বন্যার পানিতে ভাসছে। এ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সাড়ে ২৯ কিলোমিটার বাঁধ ও ৩৭ কিলোমিটার গ্রামীণ কাঁচা রাস্তা। ভাঙনের শিকার হয়ে ভিটেমাটি হারিয়েছে পাঁচ শ পরিবার। ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তিন হাজার ৯২২ হেক্টর। এখন পর্যন্ত দুর্গত মানুষদের সহায়তার জন্য নয় উপজেলায় ৩০২ মেট্রিক টন চাল ও ৩৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এখনও মজুদ আছে এক হাজার ২৫ মেট্রিক টন চাল ও ১০ লাখ টাকা।’
এদিকে, বন্যার পানিতে ডুবে এ পর্যন্ত তিন শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে কুড়িগ্রাম সিভিল সার্জন হাবিবুর রহমান জানিয়েছেন। তারা হলো- উলিপুর উপজেলার জানজায়গির গ্রামের সাইফুল ইসলামের ছেলে মোস্তাকিম (১৪ মাস), নাগেশ্বরী উপজেলার মোল্লাপাড়া গ্রামের আমীর হোসেনের ছেলে বেলাল হোসেন (৮) ও চিলমারী উপজেলার কড়াইবরিশাল গ্রামের জাহেদুল ইসলামের ছেলে শান্ত ইসলাম (৭)।