তারা হলেন- রাজবাড়ী সদর উপজেলার ধুঞ্চি গ্রামের মৃত ইয়াদ আলী মন্ডলের ছেলে আমির হোসেন (৪৫) ও গোয়ালন্দের উত্তর দৌলতদিয়া নুরু চেয়ারম্যান পাড়ার আকবর আলী মন্ডলের ছেলে কবির হোসেন (৪২)।
পুলিশ জানায়, গত ১৯ জানুয়ারি রাতে দৌলতদিয়া যৌনপল্লিতে মামলার বাদীর ঘরে এক খরিদ্দার প্রবেশ করে। তার কাছে যৌনপল্লি থেকে উদ্ধারের আকুতি জানায়। ওই ব্যক্তি ৯৯৯ এ ফোন করে বিষয়টি অবগত করেন। ৯৯৯ থেকে গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল তায়াবীরকে জানায়। ওসি তরুণীর সাথে ফোনে বিস্তারিত জানার পর রাত সাড়ে ১১টার দিকে অভিযান চালায়।
আরও পড়ুন: খুলনায় যৌনপল্লিতে বিদ্যালয় সম্প্রসারণ কাজের উদ্বোধন
পরে পল্লির প্রভাবশালী নাজমা বেগমের বাড়ি থেকে ওই তরুণীকে উদ্ধার করে। একই সাথে পাশের কক্ষ থেকে কান্নার আওয়াজ পেয়ে পুলিশ আরও দুই কিশোরীকে উদ্ধার করে। তাদেরকে থানায় জিজ্ঞাসাবাদের পর বেশকিছু তথ্য পায়।
তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী নাজমার বাড়ির পাশে বিশেষভাবে তৈরি গোডাউনে বেশ কয়েকজন কিশোরী আছে বলে জানতে পারে। রাত আড়াইটার দিকে দ্বিতীয় দফা অভিযান চালিয়ে অন্ধকার কক্ষ থেকে আরও ১১ জন কিশোরীকে উদ্ধার করে। তাদের দেখাশুনার দায়িত্বে থাকা নাজমার মেয়ে ঝর্না বেগম (২৫) ও বাড়ির তত্বাবধায়ক আনন্দ পালিয়ে যায়।
পরে ২০ জানুয়ারি রাজবাড়ী পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার এম এম শাকিলুজ্জামান ১৪ কিশোরী ও তরুণী উদ্ধারের বিষয়টি গণমাধ্যমে বিস্তারিত তুলে ধরেন।
উদ্ধারকৃত কয়েকজন জানায়, পার্লারে, বাসা বাড়িতে কাজ দেয়ার কথা বলে ৫ থেকে ৯ মাস আগে যৌনপল্লিতে বিক্রি করা হয় তাদের। এখানে তাদেরকে অন্ধকার কক্ষে আটকে রাখা হতো। দিনে সাধারণ খাবারের পাশাপাশি মোটাতাজা করণের ওষুধ খাওয়ানো হতো। বাড়িওয়ালী ও তত্বাবধায়কের কথামতো পতিতাবৃত্তিতে নামানো হতো, তাদের কথায় রাজি না হলে নির্যাতন করা হতো। কান্নার আওয়াজ যাতে কেউ শুনতে না পারে এজন্য উচ্চ শব্দে সাউন্ডবক্স বাজাতো। এমন নির্মম নির্যাতনের শিকার হতো সবাই। সবাই এ অন্ধকার জীবন থেকে উদ্ধার হয়ে নিজের পরিবারের কাছে ফিরে যেতে চায়।
আরও পড়ুন: মোবাইলে প্রেম: সিলেটে তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার ২
৯৯৯ এ মায়ের ফোন: মেয়েকে ধর্ষণের চেষ্টাকারী ব্যক্তি আটক
এর আগে থানা পুলিশ গত বছর ১৬ নভেম্বর নাজমা বেগমের বাড়ি থেকে এক কিশোরীকে উদ্ধার করে। ওই ঘটনায় নাজমাকে গ্রেপ্তার করে মানবপাচার আইনের মামলায় জেলে পাঠায়। এখন পর্যন্ত নাজমা বেগম জেলেই রয়েছেন।
গোয়ালন্দ ঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল তায়াবীর বলেন, অন্ধকার কক্ষে আটকে রেখে জোরপূর্বক পতিতাবৃত্তি করানোর অভিযোগ পেয়ে ১৯ জানুয়ারি গভীর রাতে দুই দফা অভিযানে ১৪ কিশোরী ও তরুণীকে উদ্ধার করা হয়েছে। অভিযানকালে নাজমার মেয়ে ও তত্বাবধায়ক পালিয়ে যাওয়ায় এখনো গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। মানব পাচারের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে দুজনকে ২০ জানুয়ারি দায়ের করা মানব পাচার মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।