চট্টগ্রাম মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় খাবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে। পবিত্র রমজান মাসের শুরুতেই পানি সংকটের কারণে বিপাকে পড়েছে নগরবাসী।
চট্টগ্রাম ওয়াসার পানি উৎপাদন কমে যাওয়ায় নগরীতে এই সংকট দেখা দিয়েছে।
নগরীর অনেক এলাকায় সারা দিনই পানি মিলছে না। উঁচু এলাকায় পানির সংকট আরও বেশি দেখা দিয়েছে।
মহানগরীর চকবাজার, কাতালগঞ্জ, বাকলিয়া, হালিশহর, পতেঙ্গা, কাট্টলী, আগ্রাবাদ, দেওয়ান বাজার ও মুরাদপুর এলাকাসহ বিভিন্ন জায়গার বাসিন্দারা গত কয়েকদিন ধরে ওয়াসার পানি পাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন। অনেকের অভিযোগ, মাঝরাতে সেহরির সময়ও তারা পানি পাননি। এত রাতে দোকানপাটও বন্ধ ছিল। এতে প্রথম সেহরিতেই তাদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।
আরও পড়ুন: নওগাঁয় পানিবন্দি ২ হাজার পরিবার, খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট
বহদ্দার হাটের মর্জিনা আক্তার নামে এক গৃহবধূ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখেন, ‘সোমবার রাত থেকে বাড়িতে পানি নেই। সেহরিতে বোতলজাত পানি কিনে খেয়েছি, কিন্তু ওজু-গোসল কীভাবে করব বুঝতে পারছি না। প্রতি বছর শুনি ওয়াসার নতুন নতুন প্রকল্প হয়, কিন্তু গ্রীষ্মকাল এলেই তাদের সব জারিজুরি শেষ হয়ে যায়। রমজানে পানির সংকটের বিষয়টি আগে থেকেই ভাবা উচিত ছিল। অথচ মাসে মাসে ঠিকই ওয়াসাকে পানির বিল নিচ্ছে।’
ওয়াসার কর্তৃপক্ষ জানান, উৎসগুলো থেকে লবণ পানি উঠে আসায় ওয়াসার পানি পরিশোধন কমে গেছে। তাতে নগরজুড়ে পানি সংকট দেখা দিয়েছে। আবার রোজায় চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বৃহত্তর চট্টগ্রামে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংকটেরও আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ফেব্রুয়ারি থেকে ওয়াসার প্রতি লিটার পানিতে ৪০ থেকে সর্বোচ্চ ২১০০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত লবণ পাওয়া যাচ্ছে। মূলত কাপ্তাই লেকে পানি কমে যাওয়া এবং হালদার বিভিন্ন শাখা খালে বাঁধ দেওয়ায় এই সংকট সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম বলেন, ‘আমরা এখন রেশনিং করে পানি সরবরাহ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এলাকা ভাগ করে একদিন পরপর পানি সরবরাহ দেওয়া হবে। পানির উৎপাদন বাড়ানোর জন্য ৪৫টি গভীর নলকূপ আবার চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। লোডশেডিংয়ের কারণেও পানির উৎপাদন ও সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে।’
তিনি বলেন, কাপ্তাই লেকে স্বাভাবিক অবস্থায় সর্বোচ্চ পানি থাকে ১০৯ ফুট। কিন্তু বর্তমানে পানির স্তর কমে ৮৩ ফুটে নেমে এসেছে। লেকে পানির উচ্চতা কমে যাওয়ায় কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাঁচটি ইউনিটের মধ্যে একটি ইউনিট চালু রাখা হয়েছে। কাপ্তাই লেক থেকে পানি না ছাড়ার কারণে হালদায় লবণাক্ততা বেড়ে গেছে।
ওয়াসা কর্তৃপক্ষ জানায়, চট্টগ্রাম ওয়াসার পানির উৎস হালদা ও কর্ণফুলী নদী। পানির উচ্চতা নিচে নেমে যাওয়ায় ভাটার সময় নদী থেকে পানি নেওয়া যাচ্ছে না। আবার জোয়ারের সময় লবণাক্ততা বেড়ে যায়। এই সমস্যা কাটিয়ে উঠার জন্য ওয়াসার থেকে বিকল্প কোনো সোর্স নেই। এখন দৈনিক প্রায় ৫ কোটি লিটার পানি উৎপাদন কমে গেছে। নগরীতে রেশনিং করে পানি সরবরাহের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ওয়াসা মদুনাঘাটে শেখ রাসেল ও মোহরা পানি শোধনাগারের জন্য হালদা নদী থেকে এবং রাঙ্গুনিয়ায় অবস্থিত কর্ণফুলী শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার ১ ও ২ এর জন্য কর্ণফুলী নদী থেকে পানি সংগ্রহ করে। কিন্তু এখন দুটি নদীতে পানির উচ্চতা কমে গেছে। কাপ্তাই লেকে পানির স্তর কমে যাওয়ায় পানি ছাড়া হচ্ছে না। এতে জোয়ারের সময় হালদার অনেক ভেতরে লবণাক্ত পানি ঢুকে পড়ছে।
নদীর পানিতে লবণাক্ততা বিষয়ে ওয়াসা পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, লবণাক্ততার মাত্রাটা ভবিষ্যতে আরও বাড়বে। লবণাক্ততা দূরীকরণে শোধনাগারের জন্য নদীর যেখান থেকে পানি সংগ্রহ করা হয় সেখানে ‘রিভার্জ অসনোসিস সিস্টেম’ বসানো যেতে পারে। তখন গ্রাহক পর্যায়ে সরবরাহ করা পানিতে লবণের মাত্রা থাকবে না।
চট্টগ্রাম ওয়াসা বর্তমানে শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার-১ থেকে দৈনিক ১৪ কোটি লিটার, শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার-২ থেকে দৈনিক ৯ কোটি লিটার, মোহরা পানি শোধনাগার থেকে দৈনিক ৯ কোটি লিটার, শেখ রাসেল পানি শোধনাগার থেকে দৈনিক ৯ কোটি লিটার ও গভীর নলকূপ থেকে দৈনিক ৪ কোটি লিটার নিয়ে দৈনিক মোট ৪৫ কোটি লিটার পানি উৎপাদন করছে। নগরে বর্তমানে পানির চাহিদা প্রায় ৫৫ কোটি লিটার। কিন্তু লবণাক্ততার কারণে উৎপাদন আরও কমিয়ে আনা হয়েছে। বর্তমানে ওয়াসার আবাসিক সংযোগ ৭৮ হাজার ৫৪২টি ও বাণিজ্যিক সংযোগ ৭ হাজার ৭৬৭টি।