চাঁপাইনবাবগঞ্জে মাঠে মাঠে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন বোরো চাষিরা। কেউ জমিতে বোরোর চারা রোপণ করছেন, কেউ চাষ দিয়ে জমি প্রস্তুত করছেন। কেউ বা জমির আইল ঠিক করতে ব্যস্ত রয়েছেন। বিভিন্ন এলাকার ফসলের মাঠে মাঠে এমনই দৃশ্য চোখে পড়বে এখন।
সদর উপজেলার বিলবৈঠা মাঠ এলাকায় ইউএনবির এই প্রতিবেদকের কথা হয় কৃষক কওসার আলীর সঙ্গে। তিনি এবার ৮ বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করছেন।
কওসার বলেন, ‘শীতের জন্য লেবার আসছে দেরিতে। কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। তাছাড়া গতবারের থেকে এবার সবকিছুর খরচ বেড়েছে। কিন্তু ধানের দাম বাড়েনি।’
একই মাঠে কৃষক ময়েজ উদ্দিন বলেন, ‘হালের দাম বেশি, প্যাঠের দাম বেশি, বিড়ির দাম বেশি। গত বছর হালের প্যাঠ ছিল ৩০০ টাকা, এবার হয়েছে ৩৫০ টাকা। তার উপর খাবার ও বিড়ি দিতে হচ্ছে। সময়ে সময়ে চা খাওয়াতে হচ্ছে। কৃষক মানুষ, কী করব! চাষাবাদ করেই চলতে হচ্ছে।’
আরও পড়ুন: চাঁপাইনবাবগঞ্জে ইউটিউব দেখে চিয়া সিড চাষে উদ্বুদ্ধ, লাভের প্রত্যাশা
কৃষি শ্রমিক মদন (৫৫) জানালেন, ‘শীতকালের সকালে আমাদেরকে কষ্ট করতে হয়। বিছন তুলে আমরা জমিতে চারা লাগাই। আমাদের দেয় ৫০০ টাকা। কাজ করি পেটের দায়ে। কিছু করার নাই।’
১৮ বছর বয়সী আদিবাসী নারী কৃষি শ্রমিক সুসমিতা হাসদা বলেন, সকাল বেলা অনেক ঠান্ডা লাগে। তাও আমরা ধান লাগাতে আসি। ধান লাগিয়ে যে ৪শ’ টাকা পাই তা দিয়েই আমাদের সংসার চলে।
কৃষি বিভাগ থেকে জানা গেছে, এ বছর চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় ৫২ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে বেরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১৩ হাজার ২২০ হেক্টর, গোমস্তাপুর উপজেলায় ১৫ হাজার ৭২০ হেক্টর, ভোলাহাট উপজেলায় ৬ হাজার ২৫০ হেক্টর, নাচোল উপজেলায় ৯ হাজর ৬৮০ হেক্টর ও শিবগঞ্জ উপজেলায় ৭ হাজার ৩৩০ হেক্টর।
আরও পড়ুন: নওগাঁয় রঙিন ফুলকপি চাষে সফলতা
এর থেকে সম্ভাব্য উৎপাদন ধরা হয়েছে ২ লাখ ৫৩ হাজার ৭৮০ মেট্রিক টন চাল। বর্তমানে বোরো ধানের আবাদ কার্যক্রম চলছে। ফেব্রুয়ারি মাস জুড়ে চলবে এ আবাদ কার্যক্রম।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. পলাশ সরকার জানান, চাষিরা উফশী ও হাইব্রিড জাতের বোরো আবাদ করছেন। সার, বীজের কোনো সংকাট নেই। সেই সঙ্গে বিদ্যুৎ সরবরাহ ঠিক থাকায় সেচেরও কোনো সংকট নেই।
কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে বোরো চাষিদের সব ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত জেলায় বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
আরও পড়ুন: ঠাকুরগাঁওয়ে সরিষার আবাদ বেশি হওয়ায় মধু সংগ্রহে ব্যস্ত মৌয়ালরা