চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় মারামারির ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে হিজলগাড়ি পুলিশ ক্যাম্প পুলিশ ও স্থানীয়দের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে পুলিশের বিরুদ্ধে অন্তঃসত্ত্বা নারীসহ সাতজনকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে সদর উপজেলার বেগমপুর ইউনিয়নের কুন্দিপুর গ্রামে এঘটনা ঘটে।
আহতদের উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
তারা হলেন- কুন্দিপুর গ্রামের বেলে মাঠাপাড়ার মৃত আব্দুল মান্নানের স্ত্রী জোমেলা খাতুন (৬৫), তার তিন ছেলে ইসরাফিল (৩৪) হোসেন আলী (৪০) ও মূসা করিম (৩০), ইসরাফিলের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী জাকিয়া খাতুন (২২), মূসা করিমের স্ত্রী সাবিনা খাতুন (২৬) এবং হোসেনের স্ত্রী শিউলি খাতুন (২২)।
এর মধ্যে হোসেন আলীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকি ছয়জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাড়ি পাঠানো হয়।
এ ঘটনায় পুলিশ ও আহতরা উভয়ের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছে।
পুলিশের দাবি, গত মঙ্গলবার কুন্দিপুর গ্রামের আব্দুল মান্নানের ছেলে হোসেন আলীর সঙ্গে একই এলাকার কদম আলীর ছেলে মোস্তফার ঈদে গরুর মাংসের জন্য করা সমিতির টাকা দেয়াকে কেন্দ্র করে মারামারি ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আহত মোস্তফা হোসেন আলীকে অভিযুক্ত করে দর্শনা থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। সেই অভিযোগের তদন্ত করতে বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে হিজলগাড়ী পুলিশ ক্যাম্পের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মজিবর রহমান কুন্দিপুর গ্রামে যায়। এতে অভিযুক্ত হোসেন আলী পুলিশ দেখে দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। পরে ধাওয়া করে তাকে ধরার সময় বাড়ির টিনে হোসেনের কপাল কেটে যায়। হোসেন আলীর কপাল কেটে রক্ত বের হতে দেখে পুলিশের ওপর চড়াও হয় পরিবারের লোকজনসহ গ্রামবাসী। একপর্যায়ে হিজলগাড়ী ক্যাম্প পুলিশের সদস্যরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে ফিরে আসে। তবে কাউকে মারধর করা হয়নি।
আরও পড়ুন: চুয়াডাঙ্গায় বিজিবি-বিএসএফের সীমান্ত বৈঠক
আহত জাকিয়া খাতুন বলেন, আমি ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা। আমার স্বামীসহ আমি ঘটনাস্থলে যাই। পুলিশ মনে করেছে যে আমরা তাদের ওপর হামলা করতে গিয়েছি। পরে আমার স্বামীকে খুঁজতে আমার ঘরে আসে পুলিশ। ঘরের মধ্যে আমার স্বামীকে ধরে গুলি করার জন্য বন্দুক তাক করে। আমি সামনে গেলে বন্দুকের বাট দিয়ে আমার পায়ে আঘাত করে এবং ধাক্কা দিয়ে মাটিয়ে ফেলে দেয় পুলিশ সদস্যরা। সেখানে কোনো নারী পুলিশ ছিল না।
আহত সাবিনা খাতুন বলেন, আমার স্বামীর নামে কোনো অভিযোগ ছিল না। তাও আমার স্বামীকে বন্দুকের নল দিয়ে মারধর করায় আমি প্রতিবাদ করি। এ সময় আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে আমাকেও বন্দুকের নল দিয়ে মারধর করে পুলিশ।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত ডা. হাসনাত পারভেজ শুভ বলেন, হোসেন আলীর মাথাসহ চোখ আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে তাকে শক্ত কোন লাঠি দিয়ে আঘাত করা হয়েছে, তবে তিনি শঙ্কামুক্ত। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বাড়ি পাঠানো হয়েছে।
দর্শনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএইচএম লুৎফুল কবীর বলেন, আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। পুলিশ কাউকে মারধর করেনি। একটি অভিযোগের তদন্ত করতে গিয়েছিল হিজলগাড়ি পুলিশ ক্যাম্পের সদস্যরা। পরে পুলিশ দেখে অভিযুক্ত হোসেন আলী প্রাচীর টপকে পালানোর সময় কপাল কেটে যায়।
চুয়াডাঙ্গার পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম বলেন, পুলিশ অভিযান করতে গেলে তারা পুলিশকে ধাওয়া দেয়। পুলিশ আত্মরক্ষার্থে চলে যায়। পরে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছালে অভিযুক্ত হোসেন আলী ভয় পেলে পালানোর সময় টিনের চালে কপাল কেটে যায়। পুলিশ কাউকে মারধর করেনি। পুলিশ আইন প্রয়োগ করতে যায়, কাউকে মারধর করতে যায় না। হতে পারে আত্মরক্ষার্থে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। তারপরেও বিষয়টি তদন্ত করা হবে।
তিনি আরও জানান, পুলিশের পক্ষ থেকেও মামলা হতে পারে। পুলিশের কেউ দোষী থাকলে তাকেও আইনের আওতায় আনা হবে।
আরও পড়ুন: চুয়াডাঙ্গায় মাদরাসাছাত্রীর আত্মহত্যায় প্ররোচনা মামলার আসামি গ্রেপ্তার
চুয়াডাঙ্গায় বখাটের উত্ত্যক্তের জেরে মাদরাসা ছাত্রীর আত্মহত্যা!