ছুটি শেষে গ্রামের বাড়ি থেকে কর্মস্থলে ফিরেই লাশ হলেন ফায়ার সার্ভিসকর্মী মো. আলা উদ্দিন (৩৫)। শনিবার চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারি এলাকার বিএম কনটেইনার ডিপোতে লাগা আগুন নেভাতে গিয়ে অন্যান্য সহকর্মীদের সঙ্গে তিনিও দগ্ধ হয়ে মারা গেছেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর চাটখিলে চলছে শোকের মাতম।
নিহত আলা উদ্দিন নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের বানসা গ্রামের বড় মুন্সি বাড়ির আবদুর রশিদের ছেলে। তাজ উদ্দিন তাহিম নামের ছয় বছরের তার এক ছেলে রয়েছে।
নিহতের বড় ভাই জহির উদ্দিন জানান, পরিবারের ছয় ভাই আর চার বোনের মধ্যে আলাউদ্দিন ছিলেন পঞ্চম। ২০০৭ সালের আগে বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল সার্জন ডিপার্টমেন্টে ফায়ারম্যান হিসেবে যোগদান করেন আলা উদ্দিন। প্রথম কর্মস্থল ছিল ঢাকা এবং পরে ফেনী, নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী, চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ, কুমিল্লা এবং সর্বশেষ চট্টগ্রামের কুমিরা ফায়ার স্টেশনে কর্মরত অবস্থায় গেল সপ্তাহের ছুটিতে বাড়িতে যান আলা উদ্দিন। প্রায় সাতদিনের ছুটি শেষে শনিবার সকালে বাড়ি থেকে চট্টগ্রামের কুমিরা স্টেশনে যোগদান করেন সেই রাতে। বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা জানার পর সর্বপ্রথম যে ইউনিটটি ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে সেই ইউনিটের সদস্য ছিলেন আলাউদ্দিন। সকালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে বাড়িতে প্রথম মৃত্যু সংবাদ আসে। পরে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয় থেকে তার মৃত্যু সংবাদ নিশ্চিত করা হয়।
এদিকে আলা উদ্দিনকে হারিয়ে তার পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। শোকে পাথর হয়ে গেছেন বাবা আবদুর রশিদ, মা মমতাজ বেগম ও স্ত্রী তাসলিমা সুলতানা। স্বজনদের কান্নায় ভারি হয়ে উঠেছে গ্রামের পরিবেশ।
নোয়াখালী ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স নোয়াখালী কার্যালয়ে সহকারী পরিচালক জসীম উদ্দিন মজুমদার জানান, অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ১০ জন ফায়ার ফাইটারের মৃত্যুতে তারা শোকাহত। তার কর্মজীবনে এক সাথে এত ফায়ার ফাইটারের মৃত্যু এই প্রথম। নিহত আলাউদ্দিন তার অধীনে বিভিন্ন ফায়ার স্টেশনে কর্মরত ছিলেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি সৎ, নিষ্ঠাবান ও সাহসী ছিল।
পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, রাতে আলাউদ্দিনের লাশ সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষে গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার বানসা গ্রামের উদ্দেশ্যে পাঠানো হবে এবং সকালে জানাযা শেষে নিজ বাড়ির আঙিনায় দাফন করার কথা রয়েছে।
আরও পড়ুন: ‘আমার জন্য দোয়া করো’, মাকে বলা সর্বশেষ কথা দমকলকর্মী শাকিলের