স্থানীয়রা জানায়, চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলার ওই বৃদ্ধ ঢাকার কামরাঙ্গীরচরে একটি প্রাইভেট কারখানার কর্মচারী হিসেবে কাজ করতেন। কয়েকদিন ধরে তিনি জ্বর, কাশিতে ভুগছিলেন। সুস্থ না হওয়ায় করোনা আক্রান্ত সন্দেহে তার সহকর্মীরা ও এলাকাবাসী তাকে গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেন।
বাধ্য হয়ে কর্মস্থল ছেড়ে শনিবার সকালেই চলে আসেন নিজ বাড়ি মতলব উত্তর উপজেলার সাদুল্লাপুর ইউনিয়নের উত্তর গোপালকান্দি গ্রামে। তার স্ত্রী জীবিত নেই। নেই কোনো ছেলে সন্তান। নিজ বাড়িতে ছোট্ট একটি ঘর তার শেষ আশ্রয়স্থল।
কিন্তু করোনা কবলিত ঢাকা থেকে এসেছেন এবং জ্বর, কাশি থাকায় বাড়ির লোকজন তাকে নিজ ঘরে থাকতে বাধা দেয়। অনেক আকুতি-মিনতি করেও পৈত্রিক ভিটেবাড়িতে থাকার সুযোগ হয়নি তার।
নিরুপায় হয়ে মজিবুর রহমান চলে যান তার একমাত্র সন্তান মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে, যা একই ইউনিয়নের মুক্তিরকান্দি গ্রামে। কিন্তু করোনা উপসর্গ থাকায় সেখানেও ঠাঁই হয়নি তার। ওই বাড়ি ও আশপাশের মানুষ তাকে মেয়ের বাড়িতেও থাকতে দেয়নি। এতে তিনি শারীরিক ও মানসিকভাবে আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন।
পরে শনিবার দুপুর ২টায় মুক্তিরকান্দি গ্রামের লোকজন তাকে স্থানীয় হাজী মার্কেটের পাশের একটি ঈদগাহ মাঠে রেখে যান। তাদেরই কয়েকজন মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নুশরাত জাহান মিথেনকে ওই বৃদ্ধের করোনা সন্দেহের ব্যাপারে অবগত করে তার অবস্থানের কথা জানান।
ডা. নুশরাত জাহান মিথেন বিষয়টি তাৎক্ষণিক চাঁদপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো. সাখাওয়াত উল্লাহকে জানান। তার নির্দেশে জরুরি অ্যাম্বুলেন্স পাঠিয়ে ওই বৃদ্ধকে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় এবং আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়।
সিভিল সার্জন বলেন, ‘নিজ ভিটায় আশ্রয়হীন বৃদ্ধ লোকটি এ হাসপাতালে আশ্রয়, খাবার ও চিকিৎসা পাবে।’
চাঁদপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ও করোনা বিষয়ক ফোকাল পার্সন ডা. এ এইচ এম সুজাউদ্দৌলা রুবেল ইউএনবিকে জানান, মুজিবুর রহমানের প্রাথমিক পরীক্ষার পরে দেখা গেছে যে, তার জ্বর, কাশি আছে, তবে তেমন গুরুতর নয়। করোনায় আক্রান্তের উপসর্গও তেমন নেই। তারপরও যেহেতু তিনি করোনা কবলিত এলাকা থেকে (ভায়া নারায়ণগঞ্জ) এসেছেন, সেজন্য তাকে আইসোলেশন ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে। রবিতার নমুনা সংগ্রহ করা হবে।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. সাখাওয়াত উল্লাহ জানান, জেলায় নতুন কোনো করোনা শনাক্ত রোগী নেই। হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন মোট ১ হাজার ২৬৩ জন।