ঝিনাইদহ শহরের পৌর এলাকায় হঠাৎ করেই বেড়েছে ডায়রিয়ার প্রকোপ। গত দুই দিনে জেলা সদর হাসপাতালে দেড় শতাধিক রোগী ভর্তি হয়েছে। হাসপাতালে শয্যা না পেয়ে মেঝে ও বারান্দায় চিকিৎসা নিতে হচ্ছে রোগীদের।
সদর হাসপাতাল কতৃর্পক্ষের দেয়া তথ্য মতে, গত বুধবার রাত থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১৬০ জন রোগী। আর বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে ১১০ জন। যাদের অধিকাংশের বাড়ি শহরের হামদহ, কাঞ্চনপুর, মোল্লাপাড়া এলাকায়।
শুক্রবার সকালে সদর হাসপাতালের মেডিসিনি ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায় বেড কিংবা মেঝেতে নেই তিল ধারণের ঠাঁই। আগে থেকে ভর্তি রোগীর পাশাপাশি প্রতিনিয়ত হাসপাতালে ডায়রিয়ার আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে রোগী। আক্রান্তদের বেশিরভাগই নারী ও বয়স্ক ব্যক্তি।
আলহেরা পাড়া এলাকার জুয়েল নামের এক রোগীর স্বজন বলেন, ‘আমাদের ফ্যামিলিতি তিনজন অসুস্থ হয়েছে। পরশুদিন রাতে ভর্তি করেছি। আমার বোন সুস্থ হয়েছে। বোনের বাচ্চা এখনো সুস্থ হয়নি। কয়দিন থাকা লাগবি তা তো বলতি পারছিনে।’
আরও পড়ুন: বরগুনায় বেড়েই চলছে ডায়রিয়ার প্রকোপ
খন্দকারপাড়া এলাকার সোনালী নামের এক রোগী বলেন, ‘হঠাৎ করে আমার মেয়ের পাতলা পায়খানা হয়েছে। তারপর আমার হাসবেন্ডের এরপর আমার হয়েছে। কিসের জন্যি হলো তা তো বলতি পারিনে। আমরা তো টিউবয়েলের পানি খায়। সাপ্লাই পানি দিয়ে গোসল আর রান্না করি। আমার শুধু একার না। আমার বাড়ির আশপাশের লোকজনেরও হয়েছে।’
চৈতি নামের এক রোগী বলেন, ‘স্যালাইনগুলো আমাদের বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে। ওষুধও আমরা অনেক সময় পাচ্ছি না। অনেক তো রোগী। নার্সরাও সেবা দিতে পারছে না ঠিকমত।’
ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. তাপস কুমার বলেন, ‘ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে যারা আসছেন তারা বয়স্ক। শিশুরা কম আক্রান্ত হচ্ছে। পৌরসভার একটি এলাকা থেকে রোগী বেশি আসছে। বেশি সংখ্যক রোগীকে হাসপাতালে চিকিৎসা দিতে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। যেহেতু আমাদের জনবল কম। তারপরও আমরা সর্বাত্বক ভাবে চেষ্টা করছি তাদের সেবা দিতে।
আরও পড়ুন: খাগড়াছড়িতে নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়ছে, দুই সপ্তাহে ৩ শিশুর মৃত্যু
ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের কনসালটেন্ট (মেডিসিন) ডা. জাকির হোসেন বলেন, রোগীরা বেশিরভাগই একটি নির্দিষ্ট এলাকার। এতে আমরা ধারণা করছি কোন খাবার অথবা পানির মাধ্যমে এটি ছড়িয়ে পড়তে পারে। যারা আক্রান্ত হয়নি তাদের প্রতি আমাদের পরামর্শ তারা যেন পরিস্কার বিশুদ্ধ পানি পান করেন এবং হাত ধৌত করেন। সেই সাথে বাসি—পচা খাবার এড়িয়ে চলেন।
হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. হারুন—অর—রশিদ বলেন, শিশু ডায়রিয়া আগের মতই আছে, বয়স্ক মানুষের ডায়রিয়া হঠাৎ করে বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা সব জায়গায় যোগাযোগ করেছি। আমাদের ওষুধ, স্যালাইন পর্যাপ্ত আছে। আমরা আশা করছি এ পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারব।