সেই সাথে দগ্ধদের উন্নত চিকিৎসা সেবা দেয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্থানীয় সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন তারা।
মঙ্গলবার দুপুরে তল্লায় এক সংবাদ সম্মেলনে হতাহত পরিবারের সদস্যদের পক্ষে এই দাবি জানান বিস্ফোরণের ঘটনায় নিহত মসজিদের ইমাম আব্দুল মালেকের ছেলে নাঈম ইসলাম। এই সময় তারা এ মর্মান্তিক ঘটনায় দায়ীদের শাস্তির আওতায় আনারও দাবি জানান।
নাঈম ইসলাম বলেন, ‘এখানে অনেক পরিবার আছে যাদের গত কয়েকদিন চুলা জ্বলেনি। আমাদের এই পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়ানোর জন্য সরকারের কাছে বিনীত অনুরোধ করছি। আমাদের পরিবারের উপার্জনকারীদের আমরা হারিয়েছি। এইসব পরিবারকে যেন আর্থিকভাবে সহযোগিতা করা হয় এবং আমরা যারা কাজ করতে সক্ষম তাদের যেন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়।’
সরকারের পক্ষ থেকে নিহত পরিবার প্রতি ৫০ লাখ টাকা করে দেয়ার দাবি জানিয়ে নাঈম বলেন, ‘টাইলস মিস্ত্রি মনির ভাই মসজিদের মেসে থাকতেন। ওনার পরিবার এখানে না থাকায় সে কোনো সাহায্য, সহযোগিতা পাচ্ছেন না। এখনো অনেকে বার্ন ইউনিটে শয্যায় আছেন। তাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা করা হোক। আমার বাবার যখন চিকিৎসা চলে তখন আমার বাবার জন্য ৬-৭ হাজার টাকার ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হয়েছিল। যারা হাসপাতালে এখনও ভর্তি আছেন তাদের ওষুধ কেনার টাকার ব্যবস্থা যেন সরকার করে।’
তিনি বলেন, সেদিন এশার নামাজে আমিও ছিলাম। নামাজ পড়ে বের হওয়ার সাথে সাথে বিস্ফোরণ ঘটে। সেদিন মোয়াজ্জিন কয়েকজনকে বাঁচানোর জন্য কি পরিমাণ চেষ্টা করেছেন তা আমি মুখে বলে বুঝাতে পারব না। তার শরীর সাদা হয়ে গিয়েছিল। তিনি পোড়া অবস্থায় দুই-তিনজনকে বের করেছিলেন মসজিদ থেকে।
নাঈম বলেন, আমার বন্ধু সাব্বির ও তার ভাই জুবায়ের সব সময় নামাজ শেষ করে তালিম করে মসজিদ থেকে বের হতো। সেদিন তারা দুজনই মারা গেছে। এখন তাদের মায়ের কি হবে? ইব্রাহিম বিশ্বাস নামে এক ভাই ছিলেন। সেদিন আমি তাকে চিনতেই পারছিলাম না। সম্পূর্ণ শরীর কালো হয়ে গিয়েছিল তার। উনি তখনো বলছিল ইমাম সাহেবকে ধরো, ইমাম সাহেবকে বাঁচাও। সেদিন আমার আব্বুও (ইমাম) পুড়ে যান।
বার্ন ইউনিটের চিকিৎসা সেবা নিয়ে তিনি বলেন, ‘বার্ন নিউনিটে কেউ কারো স্বার্থ দেখেনি। আমি সেই বার্ন ইউনিটে মানবিকতা দেখছি। আমি সেই মানুষগুলোর জন্য দোয়া করি।’
ইমামের আরেক ছেলে ফাহিম বলেন, ‘এ মর্মান্তিক ঘটনায় যদি তিতাসের কোনো ভুল থেকে থাকে তাহলে তাদের শাস্তির আওতায় আনা হোক। যাতে আমাদের মতো অন্য কাউকে তার স্বজনদের হারাতে না হয়।’
এদিকে, ফতুল্লার তল্লা বাইতুস সালাত জামে মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হান্নান (৫০) নামে আরও একজন মারা গেছেন। এনিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ২৮ জনে। হাসপাতালে ভর্তি আছেন দগ্ধ আরও ৯ জন।
গতকালও তিতাসের পক্ষ থেকে মসজিদের আশপাশে গ্যাসের লাইনের সংযোগ আছে কিনা তা খুঁজে দেখার জন্য খুড়াখুড়ি করা হয়েছে। একাধিক তদন্ত কমিটি তাদের নিজস্ব সদস্যদের নিয়ে তদন্ত কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
বিএনপির একটি প্রতিনিধি দলও ঘটনাস্থল পরির্দশন করেন। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে নিহতদের পরিবারকে ২০ হাজার ও মহানগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ১০ হাজার করে টাকা অনুদান প্রদানের ঘোষণা দেন।
তিতাস গ্যাসের একাধিক কর্মকর্তা তাদের গ্যাস লাইনে কোথাওয় লিকেজ ছিল না এমন দাবি করলেও গত সোমবার তিতাস গ্যাসের লাইনে দুইটি লিকেজ পাওয়া যায়। সোমবার সন্ধ্যায়ই ফতুল্লা জোনের ৮ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
এদিকে তিতাস গ্যাসের অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। নারায়ণগঞ্জে তিতাস কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতি অনেকটাই ওপেন-সিক্রেট।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই তিতাস গ্যাসের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের হুমকি দিয়ে বলেন, এদের চিহিৃত করে বরখাস্ত করতে হবে।
তদন্ত কমিটির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, বৈদ্যুতিক সুইচ অফ-অন করতে গিয়ে স্পার্ক থেকে জমে থাকা গ্যাসের সংস্পর্সে এ দুর্ঘটনার সূত্রপাত ঘটে। তবে মসজিদের ভিতর দিয়ে গ্যাসের লাইন গিয়েছে কিনা তা এখনো দেখা হয়নি।
মসজিদের ঘটনার পরে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তিতাসের দুর্নীতি ও অনিয়ম খতিয়ে দেখার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, মসজিদে দুর্ঘটনার জন্য তিতাস কর্তৃপক্ষ কোনো অবস্থাতেই দায় এড়াতে পারে না।