খুলনা মহানগরীতে পুলিশ পরিচয়ে তুলে নিয়ে স্বামীকে বেঁধে রেখে স্ত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় চারজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করলে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক।
বুধবার (১৪ ডিসেম্বর) রাত ৯টার দিকে নগরীর আড়ংঘাটা থানার বাইপাস সড়কের একটি বাসায় এ ঘটনা ঘটে।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলো-নগরীর আড়ংঘাটা মোড়লপাড়ার মো. খোরশেদ মোড়লের ছেলে বেল্লাল মোড়ল (৪৬), দেয়ানা মধ্যপাড়ার মৃত ফরুক আলম চৌধুরীর ছেলে মো. আজিজুর রহমান ওরফে মিঠু চৌধুরী (৪০), দিঘলিয়া ব্রহ্মগাতী গ্রামের রেজা মুন্সির ছেলে মো. জিহাদ মুন্সি (২৪) ও আড়ংঘাটা দক্ষিণপাড়ার মো. আব্দুস সাত্তার শেখের ছেলে মো. রাসেল শেখ (২২)।
র্যাব-৬ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোসতাক আহমেদ জানান, নগরীর আড়ংঘাটা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আরও পড়ুন: এমসি কলেজে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ: মামলা দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালে বদলির নির্দেশ
র্যাব-৬ এর এ কর্মকর্তা জানান, আড়ংঘাটা এলাকায় ভুক্তভোগী স্বামী-স্ত্রী ঘুরতে বের হন। ঘোরাফেরা শেষে রাত সাড়ে ৮টার দিকে আড়ংঘাটা বাজারে যাওয়ার পথে চার ব্যক্তি নিজেদের পুলিশ পরিচয় দিয়ে তাদের গতিরোধ করে। পরে তারা ভয়ভীতি দিয়ে ভুক্তভোগীর স্বামীকে একটি স্থানে আটকে রাখে। পরে ভুক্তভোগী ওই নারীকে চার ব্যক্তি পর্যায়ক্রমে ধর্ষণ করে। এ সময় আসামিরা মোবাইলে ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করে। ধর্ষণের ঘটনাটি কোথাও জানালে ভিডিও ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়ার হুমকি দেয়। পরে গভীর রাতে ভুক্তভোগীকে ছেড়ে দেয়। ভুক্তভোগী ওই নারী বিষয়টি তার স্বামীকে জানায়। পরে ভুক্তভোগীকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি করা হয়।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী নারী আড়ংঘাটা থানায় ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন।
তিনি আরও জানান, এই ঘটনা জানতে পেরে অভিযানে নামে র্যাব। তথ্য প্রযুক্তি ও সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে আসামিদের শনাক্ত করা হয়। পরে তাদের গ্রেফতার করা হয়। আসামিদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
মোবাইলে ধর্ষণের ভিডিও পাওয়া যায়। জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন।
মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ১৩ ডিসেম্বর বিকেল ৫টায় ভিকটিম তার স্বামী জীবন শেখকে নিয়ে ঘোরার উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হয়। সন্ধ্যা ৭টার দিকে তারা দৌলতপুর থেকে একটি ইজিবাইকযোগে আড়ংঘাটা বাইপাস মোড়ে এসে নামে। বাইপাস মোড়ে কিছু সময় ঘোরা ফেরার পর পায়ে হেঁটে তারা আড়ংঘাটা বাজারের দিকে আসার পথে মোড়ল পাড়াস্থ নূরানী জামে মসজিদের নিকট আসলে উল্লেখিত আসামিরা নিজেদের পুলিশ পরিচয় দিয়ে তাদের পথরোধ করে। ভিকটিমের স্বামীকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায় এবং ভিকটিমকে অভিযুক্ত বেল্লাল মোড়লের বাড়ির একতলা ছাদে নিয়ে রাত সাড়ে ৮টা থেকে ১১টা পর্যন্ত পালাক্রমে ধর্ষণ করে।
এ সময় ৪নং আসামি মো. রাসেল শেখ মোবাইলে ভিডিও ধারণ করে। বিষয়টি জানাজানি করলে ধারণ করা ভিডিও ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে তাকে ছেড়ে দেয়।
ভিকটিমের স্বামী জানায়, পুলিশ পরিচয় দিয়ে আমাদেরকে তল্লাশির নাম করে একটি স্থানে নিয়ে যায়। পরে আমাকে চোখ বেঁধে একটি স্থানে আটকে রাখে। আমার স্ত্রী দুই ঘন্টা পর অজ্ঞাত স্থান থেকে আমাকে ফোন দিয়ে কান্নারত অবস্থায় ঘটনার বিবরণ দেয়।
তিনি ধর্ষণের ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিদেরকে বৃহস্পতিবার আদালতে পাঠানো হয়। পরে শুনানি শেষে তাদেরকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয় আদালত।
আরও পড়ুন: লোহাগাড়ায় মাদরাসাছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে যুবক গ্রেপ্তার