শুধু তাই নয় স্বামীকে সাথে নিয়ে বাড়ির উঠানে তোষকে মুড়িয়ে মাটি চাপা দেয়া হয় লাশ।
পুলিশের কাছে অভিযুক্ত রাজিয়া স্বীকারোক্তি দেয়ার পর হত্যাকাণ্ডের দীর্ঘ একমাস পর রবিবার রাত ১টার দিকে শ্রীপুর থানা পুলিশ মাটি খুড়ে লাশটি উদ্ধার করে এবং স্বামী-স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করে।
নিহত প্রেমিক পিকুল হোসেন (৩৮) মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার চৌগাছি গ্রামের উকিল মোল্যার ছেলে।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান জানান, গত ৩ মার্চ ঢাকার গাজীপুর এক নিকটাত্মীয়ের বাড়ি থেকে ফেরার পথে নিখোঁজ হয় পিকুল হোসেন। এ ঘটনায় মামুনুর রশীদ নামে পিকুলের ওই আত্মীয় গাজীপুরের কাশিমপুর থানায় একটি নিখোঁজ ডায়রি করেন।
ঘটনার সূত্র ধরে মাগুরা পুলিশের একটি টিম পিকুলের মোবাইল ফোনের কললিস্ট ধরে তদন্ত শুরু করে। যেখানে পিকুলের সাথে তার গ্রামের বাড়ির পাশের গ্রাম মহেশপুরের রাজিয়া সুলতানার সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়। এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে শুক্রবার শ্রীপুর থানা পুলিশ মহেশপুর গ্রাম থেকে রাজিয়া সুলতানা এবং তার স্বামী কাজী মোশারফ হোসেনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। এ সময় রাজিয়া সুলতানা পুলিশের জেরার মুখে হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা থেকে শুরু করে লাশ গুম পর্যন্ত লোমহর্ষক কাহিনী স্বীকার করে।
ওসি জানান, রাজিয়া সুলতানার স্বামী গত দুই বছর ধরে কাতারে ছিল। সে সময় রাজিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হয় পিকুলের। কিন্তু সম্প্রতি রাজিয়ার স্বামী মোশারফ হোসেন দেশে ফিরলে বিষয়টি তার কাছে ধরা পড়ে। এ অবস্থায় তিনি স্ত্রীকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিতে চাইলে রাজিয়া নিজের সংসার বাঁচাতে পিকুলকে ধরিয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। সেই অনুযায়ী ঘটনার দিন ঢাকা থেকে পিকুল যখন বাড়ি ফিরছিল তখন রাজিয়া মোবাইল ফোনে পিকুলেকে বাড়িতে ডেকে আনে। রাজিয়াদের উদ্দেশ্য পিকুলকে হত্যা করে লুকিয়ে ফেলবে। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী বাড়ির টিউবওয়েল বিকল হয়ে গেছে এমন কথা প্রতিবেশিদের কাছে প্রচার করে নিজেরাই টিউবওয়েলের পাশে প্রায় ১০ ফুট গভীর গর্ত তৈরি করে।
এদিকে রাজিয়ার আহ্বানে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে পিকুল রাজিয়ার বাড়িতে পৌঁছলে দুধের সঙ্গে তাকে ৮টি ঘুমের ওষুধ খাওয়ানো হয়। এরপর পিকুল অচেতন হয়ে পড়লে মোশারফ দা দিয়ে কুপিয়ে খুন করে। পরে তারা দু’জনে মিলে আগে থেকে উঠানে খুড়ে রাখা সেই গর্তে তোষক মুড়িয়ে মাটি চাপা দেয় তাকে। শুক্রবার রাতে লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ডের এমন সব বর্ণনা পুলিশের কাছে রাজিয়া দেয় বলে জানান ওসি মাহবুব।
মাগুরা পুলিশ সুপার খান মোহাম্মদ রেজোয়ান বলেন, মাগুরার প্রেক্ষাপটে এটি একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনা। আসামিদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী লাশ উদ্ধারের পাশাপাশি সবকিছুই মিলে যাওয়ায় তাদেরকে আইনের আওতায় নেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে শ্রীপুর থানায় হত্যা মামলা রুজু হয়েছে।