মঙ্গলবার এ দাবিতে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচি পালন করা হয় সদরপুর ও ফরিদপুরে। ৩৪টি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোগে ‘বাইশরশি জমিদার বাড়ি রক্ষা ও সংরক্ষণ আন্দোলন’-এর অংশ হিসেবে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
আরও পড়ুন:ফরিদপুরে ইটভাটার মাটিতে রাস্তার ক্ষতি, বৃষ্টিতে সড়ক দুর্ঘটনার আশঙ্কা
‘বাইশ রশি জমিদার বাড়ি, সবাই মিলে রক্ষা করি’- এ স্লোগানে প্রায় দিনব্যাপী কর্মসূচি পালন করেন ফরিদপুরের তরুণ সমাজ। এতে শতাধিক তরুণ অংশ নিয়েছিলেন। এদিন সকাল ১০টার দিকে বাইশরশিতে জমিদার বাড়ির সামনের সড়কে প্রথমে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়।
আরও পড়ুন:পদ্মায় নাব্যতা সংকটে লোকসানে ফরিদপুরে পণ্যবাহী নৌযান চলাচল
আন্দোলনকারীরা জমিদার বাড়ির চত্ত্বরে ঢুকে মানব বলয় রচনা করে দীপ্ত কণ্ঠে শপথ নেন, ‘দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন চলবে। আন্দোলন যতদিন চলবে, ততদিন রাস্তায় থাকবো। বিজয় না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরে যাব না।’
বাইশরশি জমিদার বাড়ির সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি চলাকালে এ আন্দোলনের সাথে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য দেন সদরপুর ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘বাইশরশি জমিদার বাড়ি শুধু সদরপুরের নয় সারা দেশের একটি ঐতিহ্য। এ ঐতিহ্য রক্ষা করতে যা যা প্রয়োজন তা আমরা করব।’
আরও পড়ুন:ফরিদপুরে অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেই শহীদ মিনার
তিনি আরও বলেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং এলাকার সাংসদ মুজিবর রহমান চৌধুরী নিক্সনের কাছে অনুরোধ জানাই আমাদের প্রাণের দাবির প্রতি সম্মান দেখিয়ে জমিদার বাড়ি রক্ষা করাসহ এলাকায় একটি পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা হোক।’
এছাড়াও সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন ভাঙ্গা কে এম কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মোশায়েদ হোসেন ঢালী, বাইশরশি উচ্চ বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য এনামুল হক ফকির, কাশিয়ানীর ইয়ার আলী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ শহীদুল ইসলাম, ভাঙ্গা সিপিবির সদস্য প্রভাষ মালো, সংসদ উপনেতা সাজেদা চৌধুরীর সাবেক ব্যাক্তিগত সহকারি তৌহিদুর রহমান, কৃষক গোলাম হুসাইন প্রমুখ।
মানববন্ধন কর্মসূচিতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বাইশরশি জমিদার বাড়ি সংরক্ষণপূর্বক পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান আন্দোলনের মুখপত্র সেপটোস ফোর এর সভাপতি হাওলাদার শামীম আহমেদ।
তিনি বলেন, ‘এ ঐতিহ্য আজ একটি হিংস্র থাবার মুখে পড়েছে। মাটি খুঁড়ে ৫০-১০০ বছরের একটি পুতুল পাওয়া গেলে তা নিয়ে গবেষণা করে প্রত্মতত্ত্ব বিভাগ। অথচ দুইশ বছরের পুরনো এই বাড়িটি রক্ষা না করে আজ বিক্রি করে দেয়ার পাঁয়তারা চলছে।’
বাইশরশি জমিদার বাড়ির সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি শেষে আন্দোলনকারীরা সদরপুর উপজেরা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে এসে ইউএনও পূরবী গোলদারের হাতে দাবি সম্বলিত একটি স্মারকলিপি তুলে দেন।
এরপর আন্দোলকারীরা দুপুর দেড়টার দিকে ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সামনে মুজিব সড়কে কিছু সময়ের জন্য মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন।
যে ৩৪টি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোগে এ আন্দোলন পরিচালিত হয়েছে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- সেপটোস ফোর, ঘুরি-ফিরি ফরিদপুর, উৎস ফরিদপুর, বাংলা থিযেটার, উৎসর্গ পরিবার, ইউ কেয়ার, মানবকল্যাণ সমিতি, ফরিদপুর ফটোগ্রাফিক সোসাইটি প্রভৃতি।
এদিকে সোমবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে এ আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানাতে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ট্রাভেলগ্রাম বাংলাদেশ, হিমাদ্রী ট্রাভেল, কানামাছি ভোঁ ভোঁ ও জাহাজী নামের চারটি ভ্রমণ ও পরিবেশবাদী সংগঠনের ১৬ জন সদস্য বাইশরশি জমিদার বাড়িতে আসেন। তারা জমিদার বাড়ির বিভিন্ন ঘর পরিষ্কার করেন এবং বাড়ির চত্ত্বরে মশাল প্রজ্জ্বলন করেন।
সদরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পূরবী গোলদার বলেন, ওই সম্পত্তি ‘ক’ তালিকাভুক্ত অর্পিত সম্পত্তি। এটি এ অঞ্চলের জমিদারদের সর্বশেষ নিদর্শন। এটি বেহাত হয়ে গেলে এ এলাকায় বাইশরশি জমিদারদের কোনো অস্তিত্ব থাকবে না।