ভোলায় সাদপন্থীদের কার্যক্রম বন্ধের দাবিতে তাবলীগ জামায়াতের অবস্থান কর্মসূচিতে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় আমার দেশ পত্রিকার ভোলা জেলা প্রতিনিধি গুরুতর আহত হয়েছেন।
মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে জেলার শহরের বরিশাল দালান এলাকায় ঘটনাটি ঘটে।
আহত ওই সাংবাদিকের নাম মো. ইউনুস শরীফ। হামলায় তার মাথা ফেটে গেছে। এতে চারটি সেলাই লেগেছে। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, সকাল ১০টার দিকে শহরের সদর রোডে সাদপন্থীদের কার্যক্রম বন্ধের দাবিতে ওলামা মাশায়েখ ও তৌহিদী জনতার ব্যানারে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন তাবলীগ জামায়াতের লোকজন। এ সময় শহরের বাংলা স্কুল মোড় থেকে কালিনাথ বাজার মোড় পর্যন্ত পুরো সদর রোড ব্যারিকেড দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।
কর্মূসূচির অংশ হিসেবে বরিশাল দালানের সামনে ট্রাকের ওপর মঞ্চ করে বক্তব্য দেন স্থানীয় আলেম-ওলামারা। বক্তব্য চলাকালে হাবিব মেডিকেলের সামনে থেকে মহাজনপট্টি পর্যন্ত এলাকাজুড়ে কয়েক হাজার মানুষ সড়ক অবরোধ করে বসে পড়েন।
আরও পড়ুন: নাটোরে তাবলীগ জামাতের দুপক্ষের সংঘর্ষে আহত ৪০
এ সময় তাবলীগ জামায়াতের অবস্থান কর্মসূচির সংবাদ কভারেজ করতে যান সাংবাদিক ইউনুস শরীফ। সেখানে পথচারীদের চলাচলের ফুটপাত আটকানো নিয়ে কর্তব্যরত এক স্বেচ্ছাসেবকের সঙ্গে তার বাকবিতণ্ডা হয়। এর একপর্যায়ে অন্য স্বেচ্ছাসেবকসহ উপস্থিত মুসল্লীদের মধ্য থেকে তার ওপর অতর্কিত হামলা চালানো হয়। হামলায় একপর্যায়ে স্বেচ্ছাসেবকদের হাতে থাকা লাঠি দিয়ে ইউনুসের মাথায় আঘাত করলে তার মাথা ফেটে যায়। এ সময় তার সঙ্গে থাকা অন্য সাংবাদিকরা তাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে একটি দোকানে মধ্যে নিয়ে যান।
ইউনুস শরীফ বলেন, ‘ফুটপাত দিয়ে যাওয়ার সময় রাস্তায় আটকে থাকা কয়েকজন নারীদের যাওয়ার জন্য স্বেচ্ছাসেবকদের ফুটপাতের পথ ছেড়ে দিতে বললে তারা লাঠি ও পাইপ দিয়ে আমার মাথায় আঘাত করে।’
‘এই সমাবেশ ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য নয়, সন্ত্রাসীদের সমাবেশ। আমি আইনগত ব্যবস্থা নেব। আমি এই সন্ত্রাসীদের বিচার চাই।’
তিনি বলেন, এটা যদি সন্ত্রাসীদের সমাবেশ না হয়, তা হলে লোহার রড, লাঠি তাদের হাতে থাকবে কেন? আমি তো খারাপ কিছু বলিনি, শুধু বলেছি- ফুটপাত ছেড়ে দেন, নারীদের আসা-যাওয়ার পথ করে দেন।’
এদিকে সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনায় ভোলার সাংবাদিকরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে হামলাকারীকে দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানান।
তবে বিষয়টি ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ আখ্যা দিয়ে আয়োজক কমিটির পক্ষে ভোলা জেলা হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম সম্পাদক মাওলানা মিজানুর রহমান বলেন, ‘তারাও মাইকে উপস্থিত মুসল্লীদের ফুটপাত ছেড়ে দেওয়ার কথা বারবার বলছিলেন। বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিক ইউনুস শরীফ ভাইয়ের সঙ্গে একজন স্বেচ্ছাসেবকের কথা কাটাকাটি হয়েছে। মঞ্চ থেকে বিষয়টি নিরসনের চেষ্টা করা হয়েছিল। তবে এরমধ্যেই সাংবাদিক ভাই টান দিয়ে একজন স্বেচ্ছাসেবকের মাথার পাগড়ি খুলে ফেললে অন্যরাও উত্তেজিত হয়ে যায়। তারপরই এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটি ঘটে।’
আরও পড়ুন: ভারতে কারাভোগের পর দেশে ফিরলেন তাবলীগ জামায়াতের ১৪ জন
তবে তিনি বিষয়টি নিয়ে আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেন এবং হামলায় জড়িতদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দেন।
ভোলা সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু সাহাদাৎ মো. হাচনাইন পারভেজ জানান, তিনি হাসপাতালে গিয়ে আহত সাংবাদিকের খোঁজখবর নিয়েছেন। এ বিষয়ে এখনও কোনো লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।