হেফাজতে ইসলামের সাবেক কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকের বিরুদ্ধে ‘কথিত’ দ্বিতীয় স্ত্রী জান্নাত আরা ঝর্ণার উপস্থিতিতে সাক্ষ্য গ্রহণ হয়েছে।
বুধবার বেলা সোয়া ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক নাজমুল হক শ্যামলের আদালতে সাক্ষ্য গ্রহণ হয়।
আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) রাকিবুজ্জামান রকিব জানান, কথিত দ্বিতীয় স্ত্রী জান্নাত আরা ঝর্ণা সোনারগাঁও থানায় মামুনুল হকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনে মামলা করেন। সেই মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ হয়েছে।
বাদীকে উভয় পক্ষ জেরা করেছেন। আদালতের কাঠগড়ায় প্রথমে মামুনুল হক বার বার বাদীকে উদ্দেশ্য করে দিক নির্দেশনা মূলক কথা বলার চেষ্টা করেছে। পরে অনুরোধ করার পর তিনি চুপ থাকেন।
তিনি আরও বলেন, সাক্ষ্য গ্রহণের শুরুতে আদালত ঝর্ণার মুখের হিজাব খুলতে বলেন। ওই সময়ে মামুনুল হক কিছুটা উচ্চস্বরে বলেন, ‘শরীয়তের হুকুম হিজাব খুলবে না ঝর্ণা।’ ওই সময়ে ঝর্ণা একবার হিজাব খুলে বিচারককে মুখ দেখিয়ে ফের হিজাব দিয়ে মুখ ডেকে রাখেন।
এসময় বাদী ও রাষ্ট্রপক্ষের পিপি রকিবুজ্জামান রাকিবকে সহযোগিতা করেন নারায়ণগঞ্জ আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মোহসিন মিয়া, সাবেক সভাপতি হাসান ফেরদৌস জুয়েলসহ কয়েকজন।
অপর দিকে আসামি পক্ষে ছিলেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-আইন বিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ মো. জয়নুল আবেদীন মেসবাহ্ সহ কয়েকজন।
নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক-সার্কেল) নাজমুল হাসান জানান, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থায় গাজিপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে মামুনুল হককে আদালতে হাজির করা হয়। ২টায় সাক্ষী শেষে মামুনুল হককে ফের কাশিমপুর কারাগারে নেয়া হয়েছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, শহীদুল ইসলামের সাথে ঝর্ণার দাম্পত্য জীবন সুখে-শান্তিতে অতিবাহিত হচ্ছিল। তাদের ১৭ ও ১৩ বছরের দুটি সন্তান আছে। স্বামীর ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে ২০০৫ সালে মামুনুলের সঙ্গে ঝর্ণার পরিচয় হয়। তাদের বাসায় যাতায়াতের সুবাধে সংসারের মতানৈক্যে ভূমিকা রাখেন মামুনুল। এসব কারণে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে মামুনুলের পরামর্শে ২০১৮ সালের ১০ আগস্ট শহীদুলের সঙ্গে তার বিচ্ছেদ হয়।
আরও পড়ুন: ধর্ষণ মামলায় হেফাজত নেতা মামুনুল হকের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন
বাদী অভিযোগ করেন, বিচ্ছেদের পর অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে মামুনুল তাকে ঢাকায় যেতে প্ররোচিত করেন। সেখানে বিভিন্ন অনুসারীর বাসায় রেখে নানাভাবে তাকে কুপ্রস্তাব দেন। পরে মামুনুলের পরামর্শে তিনি কলাবাগানের একটি বাসায় সাবলেট থাকতে শুরু করেন। এ সময় বিয়ের আশ্বাস দিয়ে মামুনুল তার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করেন। কিন্তু বিয়ের কথা বললে সময়ক্ষেপণ করতে থাকেন।
বাদীর অভিযোগ, ঘোরাঘুরির কথা বলে ২০১৮ সাল থেকে মামুনুল বিভিন্ন হোটেল, রিসোর্টে তাকে নিয়ে যেতেন। সর্বশেষ গত ৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে রয়্যাল রিসোর্টে ঘুরতে গিয়েছিলেন। সেখানেও মামুনুল তাকে ধর্ষণ করেন।
প্রসঙ্গত, মামুনুল হক গত ৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে রয়্যাল রিসোর্টে এক নারীর সাথে অবস্থান করছিলেন। ওই সময় স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা গিয়ে তাকে ঘেরাও করেন। পরে ওই রিসোর্টে স্থানীয় হেফাজতের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা ব্যাপক ভাঙচুর করে মামুনুলকে ছিনিয়ে নিয়ে যান। তবে ঘেরাও থাকাবস্থায় এই হেফাজত নেতা জানান, সাথে থাকা নারী তার দ্বিতীয় স্ত্রী। দুই বছর আগে তাকে শরিয়াহ মোতাবেক বিয়ে করেছেন। বিষয়টি তার প্রথম স্ত্রী জানতেন না।
আরও পড়ুন: রিমান্ড শেষে কারাগারে মামুনুল