রবিবার সকালে চন্দ্রিমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মো. গোলাম মোস্তফা জানান, শনিবার রাতে অধ্যক্ষ ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বাদী হয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীর নাম উল্লেখসহ ৫০ জন অজ্ঞাত শিক্ষার্থীর নামে মামলা করেন। এরপর রাতেই নগরীর বিভিন্ন ছাত্রাবাস থেকে ২৫ জনকে আটক করে থানায় আনা হয়েছে।
ওসি বলেন, আটক ছাত্রদের সঙ্গে ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজে পাওয়া ছবি সাথে মিলিয়ে দেখা হচ্ছে। ঘটনার সঙ্গে কারও সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে এ মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হবে। পরে আজই তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হবে বলে জানান তিনি।
এর আগে এ ঘটনায় শনিবার রাতে রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগ এক জরুরি সভা করেছে। সভায় মহানগর সভাপতি রকি কুমার ঘোষ এবং সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহমেদসহ অন্যান্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সভায় সর্বসম্মতিক্রমে অভিযুক্ত কামাল হোসেন সৌরভকে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কারের সুপারিশ করা হয়েছে। একই সঙ্গে পলিটেকনিক শাখায় ছাত্রলীগের কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।
নগর ছাত্রলীগের সভাপতি রকি কুমার ঘোষ বলেন, ঘটনার সাথে সৌরভের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এই কারণে তাকে বহিষ্কারের জন্য ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে সুপারিশ করা হয়েছে।
এ ঘটনায় মহানগর ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি কল্যাণ কুমার জয়ের নেতৃত্বে ছয় সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। তদন্তে ছাত্রলীগের আর কারও বিরুদ্ধে ঘটনার সাথে সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান রকি কুমার ঘোষ।
এছাড়া অধ্যক্ষকে লাঞ্ছিত ও পুকুরে ফেলে দেয়ার ঘটনায় পলিটেকনিকের শিক্ষক ও কর্মচারীরাও বৈঠক করেছেন। শনিবার রাতের মধ্যে দোষীদের গ্রেপ্তার করা না হলে রবিবার সকাল থেকে ক্লাস বর্জন ও কর্মবিরতির ঘোষণা দেন তারা। তবে পুলিশ ২৫ জনকে আটক করেছে।
প্রসঙ্গত, শনিবার দুপুরে অকৃতকার্য শিক্ষার্থী ছাত্রলীগ নেতা সৌরভকে পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ না দেয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে অধ্যক্ষ ফরিদ উদ্দিনের সঙ্গে তার কার্যালয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের তর্কবিতর্ক হয়। পরে দুপুরে অধ্যক্ষ ফরিদ উদ্দীন আহমেদ মসজিদ থেকে নামাজ পড়ে নিজের কার্যালয়ে যাওয়ার সময় ছাত্রলীগ নেতা সৌরভ এবং তার সহযোগীরা অধ্যক্ষকে লাঞ্ছিত করে টেনেহিঁচড়ে ক্যাম্পাসের ভেতরের একটি পুকুরের পানিতে ফেলে দেয়।
ঘটনাস্থলে থাকা ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, অন্তত ১০ জন তরুণ অধ্যক্ষকে দ্রুতগতিতে পুকুরের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। কেউ অধ্যক্ষের হাত ধরে টানছিল আবার কেউ পেছন থেকে ধাক্কা দিচ্ছিল। মুহূর্তের মধ্যেই অধ্যক্ষকে পুকুরে ফেলে দিয়ে তারা পালিয়ে যায়। পরে ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা গিয়ে অধ্যক্ষকে পুকুর থেকে টেনে তোলেন।