বাঁধ ধসে বৃহস্পতিবার রাতে উত্তর কেদারপুর গ্রামের ১২টি বসত বাড়ি নদীতে বিলিন হয়েছে। ভাঙনের হুমকিতে থাকা আরও ৫০টি বাড়িঘর সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
ভাঙনের খবর পেয়ে শুক্রবার সকালে ওই এলাকা পরিদর্শন করেছেন পানি সম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম ও পানি উন্নয় বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
ভাঙন রোধের জন্য ওই অংশে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলানো শুরু করেছে পাউবোর শ্রমিকরা। যাদের বাড়ি নদীতে বিলিন হয়েছে তাদের ১০ হাজার টাকা ও যাদের ঘর সরিয়ে নেয়া হচ্ছে তাদের মধ্যে ২৪ জনকে ৫ হাজার করে টাকা দিয়েছেন পানি সম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম।
শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় স্রোত বেড়েছে। স্রোতের কারণে গত ১৯ সেপ্টেম্বর নড়িয়া রক্ষা বাঁধের ৪০ মিটার অংশে ধস দেখা দেয়। ওই ধস ঠেকাতে পাউবোর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সাড়ে ১২ হাজার বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সাধুর বাজারের ওই স্থানের পাশে হঠৎ ধস শুরু হয়। মুহূর্তের মধ্যে তীর উপচে নদীর পানি উঠে যায়। আর বালুভর্তি জিও ব্যাগগুলো নদীতে তলিয়ে যেতে থাকে। আস্তে আস্তে তীরের পাশের মাটি ধসে যেতে থাকে।
কেদারপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ইমাম হোসেন দেওয়ান জানান, তীর রক্ষা বাঁধে ধসের খবরে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সাধুর বাজার এলাকায় শতশত মানুষ জড়ো হয়। আতঙ্কে তীরের মানুষ বাড়িঘর ফেলে নিরাপদ স্থানে সরে যায়। ১২টি বসতঘর ও একটি মসজিদ বিলিন হয়ে যায়।
শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানায়, গত বছর নড়িয়ার আট কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ব্যাপক ভাঙন ছিল। ভাঙনে ওই এলাকার সাড়ে ছয় হাজার পরিবার গৃহহীন হয়। নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ অসংখ্য স্থাপনা বিলিন হয়ে যায়। ভাঙন ঠেকাতে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় এক হাজার ৯৭ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন করে। পানি উন্নয়ন বোর্ড নৌবাহিনীর প্রতিষ্ঠান খুলনা শীপইয়ার্ড লিমিটেডকে ওই কাজের কার্যদেশ প্রদান করেন। যার মধ্যে ৫৫২ কোটি টাকা ব্যয়ে নড়িয়ার সুরেশ্বর হতে জাজিরার কায়ুম খার বাজার পর্যন্ত ৮ দশমিক ৯ কিলোমিটার অংশে নদীর তীর রক্ষার কাজ। বাকি টাকা দিয়ে নদীর চর খনন করা হবে। গত বছর ১২ ডিসেম্বর ওই প্রকল্পের নদীর তীর রক্ষার কাজ শুরু করা হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে তিন বছরে।
শরীয়তপুর পউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী ও ওই প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক প্রকাশ কৃষ্ণ সরকার বলেন, নদীতে পানি ও স্রোত বৃদ্ধি পাওয়া কারণে ৪০ মিটার জায়গায় বালুর জিও ব্যাগ নিচের দিকে দেবে যাচ্ছিল। তখন ওই স্থানে সার্ভে করা হয়। সাথে সাথে জিও ব্যাগ ডাম্পিং শুরু করি। চার দিনের মধ্যেই স্থানটি ঝুঁকি মুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু সাধুর বাজারের পাশে হঠাৎ কেন ধস শুরু হয়েছে তা বুঝতে পারছি না। বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে।
পানি সম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম বলেন, নড়িয়া প্রকল্পটি অনেক বড়। ওই প্রকল্পের কাজ করার কারণে এ বছর নড়িয়ার ভাঙন ঠেকেছে। নদীতে স্রোত ও পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় একটি জায়গায় সমস্যা দেখা দিয়েছে। পাউবো কাজ করছে। আশা করছি দুই-এক দিনের মধ্যেই ভাঙন থেমে যাবে।