মৌলভীবাজারের শ্রীমেঙ্গলে চা বাগানের ভেতর প্রতি বছরের মতো এ বছর উদযাপিত হয়েছে গারো সম্প্রদায়দের ওয়ানগালা নবান্ন উৎসব।
গারো জাতিগোষ্ঠীর বিশ্বাস, ‘মিশি সালজং’ বা শস্যদেবতার ওপর ভরসা রাখলে ফসলের ভালো ফলন হয়। দেবতাকে নতুন ফসলের জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে এবং নতুন ফসল খাওয়ার অনুমতি চেয়ে তারা এই উৎসব উদযাপন করেন। এই উৎসবের মূল উদ্দেশ্য আগামী বছরে যেন ফসল ভালো হয়। তাদের সন্তান ও পরিবার-পরিজনরা যেন ভালো থাকে।
পাহাড়ে বসবাসকারী উপজাতি নৃ-গোষ্ঠি গারোদের নিজস্ব সাংস্কৃতিক ও কৃষ্টির অন্যতম উৎসব হলো নবান্ন বা ওয়ানগালা উৎসব।
আরও পড়ুন: শেরপুরে গারোদের ‘ওয়ানগালা’ শুরু
১ ডিসেম্বর দুপুরে গারো যুব সংগঠনের আয়োজনে শ্রীমঙ্গলের ফুলছড়া চা বাগান মাঠে থক্কা অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে ওয়ানগালা অনুষ্ঠানের সূচনা করা হয়। গারো সমপ্রদায়ের নারীরা নেচে-গেয়ে অতিথিদের বরণ করে নিয়ে আসেন উৎসবস্থলে।
উৎসবের প্রথম পর্বে ক্রুশ চত্বরে বাণী পাঠ, থক্কা প্রদান, জনগণকে থক্কা দেওয়া, পবিত্র খ্রিষ্টযাগ, দান সংগ্রহ, আলোচনা সভা ও জাতির মঙ্গল কামনা করে বিশেষ প্রার্থনা করা হয়।
গারোদের মূল ধর্ম ছিল সাংসারেক। তবে এখন অনেকেই খৃষ্ট ধর্ম গ্রহণ করেছেন। সাধারণত বর্ষার শেষে ও শীতের আগে, নতুন ফসল তোলার পর এ উৎসবের আয়োজন করা হয়। এর আগে নতুন খাদ্যশস্য খাওয়া নিষেধ থাকে এ সম্প্রদায়ের জন্য। তাই অনেকেই একে নবান্ন বা ধন্যবাদের উৎসবও বলা হয়।
ওয়ানগালা উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক পার্থ হাজং, শিক্ষার্থী সালছিনা, থাং সুয়া, কিলি আশকরা, বেবিনা রং দির সঙ্গে কথা হয় প্রতিবেদকের। তারা জানান, দেবতার সন্তুষ্টির পাশাপাশি এই আয়োজনের উদ্দেশ্য তাদের ভাষা-সংস্কৃতিকে জাগ্রত রাখা। নতুন প্রজন্মকে এ সম্পর্কে জানানো আর এই সঙ্গে সবার একই স্থানে একই উদ্দেশ্যে মিলিত হয়ে উৎসবের আনন্দ ভাগাভাগি করা।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে ধর্মীয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানা ছাড়াও আয়োজন করা হয় তাদের ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভা।
আলোচনা পর্বে শ্রীমঙ্গল ক্যাথলিক মিশনের প্রধান পুরোহিত ফাদার ড. জেমস শ্যামল গোমেজের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন শ্রীমঙ্গল উপজলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইসলাম উদ্দিন।
বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য প্রীতম দাশ, ফিনলের উপমহা ব্যবস্থাপক (ডিনস্টন ডিভিশন) হুমায়ুন কবির মজুমদার, মাজদিহি চাবাগানের ব্যবস্থাপক মো. শাহরিয়ার পারভেজ, হরিণছড়া চা বাগানের ব্যবস্থাপক বিকাশ সিনহা প্রমুখ।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গারো কিশোরীরা তাদের ঐতিহ্যবাহী গান ‘ওয়ানগালা ওয়ানগালা’ গানের সঙ্গে নৃত্য করেন। এছাড়াও বিভিন্ন গারো লাইন থেকে আসা কিশোরীরা একেরপর এক নৃত্য পরিবেশন করেন।
এ সময় ফুলছড়া চা বাগান মাঠে ওয়ানগালাটি মিলন মেলায় পরিণত হয়। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও ভাল ফসল লাভের আশায় পালন করা হয় এই ওয়ানগালা। তিন দিনব্যাপী উৎসবকে নিয়ে ছিল নানা বর্ণিল আয়োজন। এ বছর তাদের আয়োজন ছিল সপ্তমবারের মতো। শেষে গারো সম্প্রদায়দের বিভিন্ন সফল কর্মে জড়িত ও অতিথিদের দেওয়া হয় সম্মাননা।
আরও পড়ুন: বনভূমিতে গারোদের অধিকার সংরক্ষণে কাজ করছে সরকার: উপদেষ্টা