সাবেক প্রেমিকাকে জোর করে হোটেলে নিয়ে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগে মো. সামছুল হুদা জিকু (২৬) নামে ইসলামী ব্যাংকের এক কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
জিকু চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার আব্দুর রশিদের ছেলে। তিনি বর্তমানে ইসলামী ব্যাংক বগুড়া জেলার কাহালু শাখায় এসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার পদে কর্মরত।
রবিবার নগরীর কোতোয়ালী থানা এলাকার নিউ মেঘনা নামের একটি আবাসিক হোটেল থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। মামলা দায়েরের পর রবিবার রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেন কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নেজাম উদ্দীন।
মামলার বিবরণে জানা যায়-জুলিয়া (ছদ্মনাম) ও মো. সামছুল হুদা জিকু খুবই ভাল বন্ধু এবং প্রেমিক প্রেমিকা। তাদের ২০১৮ সালে পরিচয়, ভালো লাগা, বন্ধুত্ব এবং একপর্যায়ে প্রেমের সম্পর্ক হয়। সামছুল হুদা জিকু (২৬) জানত জুলিয়ার পিতা মাতা নেই, তার পালক পিতা মাতা আছে। তারই সুযোগ নেয় সে। জুলিয়ার সাথে প্রেমের সম্পর্কের কারণে তারা প্রায় সময়ই বাইরে বেড়াতে যেত, ঘোরাফেরা করত, বিভিন্ন স্থানে গিয়ে ছবি তুলত। পরবর্তীতে ২০২০ সালে সামছুল হুদা জিকুর ইসলামী ব্যাংক, বাংলাদেশ লিমিটেডে চাকরি হয় এসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার, গ্রেড-৩ পদে। চাকরি হওয়ার পর জুলিয়া সামছুল হুদা জিকুকে বিবাহ করার প্রস্তাব দিলে সামছুল হুদা জিকু জুলিয়াকে বিবাহ করবে না বলে জানায়। জিকু একপর্যায়ে জুলিয়াকে বিয়ে করতে রাজি হলেও কয়েকটি শর্ত জুড়ে দেয়। প্রথম শর্ত হল জুলিয়াকে বিয়ে করে সামছুলের কর্মস্থল তথা বগুড়া জেলায় জুলিয়াকে রাখবে তবে সে চট্টগ্রামের পটিয়া এলাকায় সামাজিকভাবে আরেকটি বিবাহ করবে। আর ২য় শর্ত হল জুলিয়ার সাথে বিয়ের বিষয়টি কেউ জানতে পারবে না। জুলিয়া সামছুলের দেয়ায় প্রস্তাবটি মেনে না নেয়ায় তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয় এবং যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পর জুলিয়া আরেকজনের সাথে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হয়। মার্চ/২০২১ইং মাসে তাদের বিয়ে হয়। এর পর থেকে জুলিয়া স্বামীর সাথে সুখী দাম্পত্য জীবনযাপন করতে থাকে। কিন্তু কিছুদিন আগে সামছুল জুলিয়াকে তার সাথে কথা বলার জন্য চাপ প্রয়োগ করে অন্যথায় তার কাছে থাকা জুলিয়ার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তোলা ছবি সে জুলিয়ার স্বামীর কাছে পাঠিয়ে দিবে এবং স্বামীর পরিবারের লোকজনের কাছে পাঠিয়ে দিবে বলে জানায়। জুলিয়া তার মান সম্মানের কথা চিন্তা করে অনিচ্ছা সত্ত্বেও সামছুলের সাথে কথা বলে। সামছুল তাকে ঈদের আগের দিন ইমো সফটওয়্যারে মেসেজ পাঠিয়ে ১৬ মে কোতোয়ালী মোড়ে দেখা করতে বলে।
জুলিয়া তাতে অসম্মতি দিলে সামছুল পুনরায় ছবি ভাইরাল করে দিবে বলে হুমকি প্রদান করে। জুলিয়া মান সম্মানের কথা চিন্তা করে সামছুলের কথামতে ১৬ মে সকাল পৌনে ১১টায় কোতোয়ালী মোড়স্থ খাদি ঘর দোকানের সামনে সামছুলের সাথে দেখা করলে সে জুলিয়াকে তার সাথে নিউ মেঘনা আবাসিক হোটেলে গিয়ে বসে কথা বলার প্রস্তাব দেয়। জুলিয়া তার কথায় রাজি না হলে আসামি জুলিয়াকে তার ছবি স্বামী এবং স্বামীর পরিবারের অন্য লোকজনের কাছে পাঠিয়ে দিবে বলে এবং পুনরায় ভয়ভীতি প্রদর্শন করে অপহরণপূর্বক নিউ মেঘনা আবাসিক হোটেলের ২০২নং রুমে নিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে সামছুল জুলিয়াকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করার চেষ্টা করলে জুলিয়া চিৎকার করতে থাকে।
এক পর্যায়ে হোটেল কর্তৃপক্ষ চিৎকার শুনতে পেয়ে হোটেল রুমে গিয়ে জুলিয়ার কাছ থেকে ঘটনার বিস্তারিত শুনে সামছুল হুদা জিকুকে আটক করে কোতোয়ালী থানায় খবর দিলে পুলিশ গিয়ে তাদের দুজনকে থানায় নিয়ে যায় এবং জুলিয়ার থেকে ঘটনার বিস্তারিত জেনে সামছুল হুদা জিকুকে আটক করে।
কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নেজাম উদ্দীন বলেন, থানায় জিজ্ঞাসাবাদে আসামি জিকু তার নাম ঠিকানা প্রকাশ করে এবং জুলিয়ার সাথে ঘটনার কথা স্বীকার করে। পরে জুলিয়া তার বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন মামলা করেছে।