সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় বালুবাহী ট্রাক ও শ্রমিক বহনকারী পিকআপের মধ্যে সংঘর্ষে নিহত ১৪ জনের পরিচয় জানা গেছে।
এছাড়া এই সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই মারা যান ১১ জন। পরে হাসপাতালে গিয়ে মারা যান আরও ৩ জন। আহত আরও ১০ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
বুধবার (৭ মে) ভোর সাড়ে ৫টার দিকে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার নাজিরবাজার এলাকার কুতুবপুর নামক স্থানে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
আরও পড়ুন: সিলেটে ট্রাক-পিকআপ মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ১৪
দুর্ঘটনার তথ্য নিশ্চিত করে ফায়ার সার্ভিস সিলেট কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. মনিরুজ্জামান বলেন, হতাহতদের উদ্ধার করে এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
দুর্ঘটনায় নিহতরা হলেন- সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার ভাটিপাড়া গ্রামের মৃত সজিব আলীর ছেলে রশিদ আলী (২৫), শান্তিগঞ্জ উপজেলার মুরাদপুর গ্রামের মৃত হারুন মিয়ার ছেলে দুলাম মিয়া (২৬), একই উপজেলার বাবনগাঁ গ্রামের মৃত ওয়াহাব আলীর ছেলে শাহিন মিয়া (৪০), দিরাই উপজেলার আলীনগর গ্রামের মৃত শিশু মিয়ার ছেলে হারিস মিয়া (৬৫), হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার হলদিউড়া গ্রামের আব্দুর রহিমের স্ত্রী আমিনা বেগম (৪৫), সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার ভাটিপাড়া গ্রামের মৃত মফিজ মিয়ার ছেলে সায়েদ নূর (৫০), শান্তিগঞ্জ উপজেলার তলেরতন গ্রামের মৃত আওলাদ উল্লার ছেলে আওলাদ হোসেন (৬০), দিরাই উপজেলার পাথারিয়া গ্রামের মৃত ছলিম উদ্দিনের ছেলে একলিম মিয়া (৫৫), গচিয়া গ্রামের বারিক উল্লার ছেলে সিজিল মিয়া (৫৫), ভাটিপাড়া গ্রামের সিরাজ মিয়ার ছেলে সৌরভ মিয়া (২৭), নেত্রকোনার ভারহাট্টা উপজেলার দশদার গ্রামের ইসলাম উদ্দিনের ছেলে আওলাদ মিয়া (৩০), সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার ভাটিপাড়া গ্রামের শমসের নুরের মেয়ে মেহের (২৪), দিরাই উপজেলার মধুপুর গ্রামের সোনা মিয়ার ছেলে দুদু মিয়া (৪০), একই গ্রামের শাহজাহানের ছেলে বাদশা (২২) সহ ১৪ জন।
পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, সিলেট মহানগর থেকে পিকআপে করে প্রায় ৩০ জন নারী-পুরুষ নির্মাণশ্রমিক জেলার ওসমানীনগর উপজেলার গোয়ালাবাজার যাচ্ছিলেন।
সকাল সাড়ে ৫টার দিকে দক্ষিণ সুরমার নাজিরবাজার এলাকার কুতুবপুর নামক স্থানে পৌঁছলে মুন্সিগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা সিলেটগামী মালবাহী ট্রাকের সঙ্গে শ্রমিক বহনকারী পিকআপের সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই ১১ জন মারা যান।
আরও পড়ুন: সিলেটে সিএনজি-মোটরসাইকেল মুখোমুখি সংঘর্ষে কলেজছাত্র নিহত, আহত ১
খবর পেয়ে দক্ষিণ সুরমা থানা পুলিশ এবং সিলেট ও ওসমানীনগরের ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের একাধিক ইউনিট ঘটনাস্থলে এসে স্থানীয়দের সহযোগিতায় হতাহতদের উদ্ধার করে ওসমানী হাসপাতালে পাঠান। এরপর হাসপাতালে আরও ৩ জন মারা যান।
এদিকে, দুর্ঘটনার পর নাজিরবাজারের দুই দিকে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কে কয়েক কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশের তৎপরতায় ৩ ঘণ্টা পর সাড়ে ৮টার দিকে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সিলেটের উপ-পরিচালক মনিরুজ্জামান বলেন, আমরা খবর পেয়েই ঘটনাস্থলেই ছুটে আসি এবং সকাল ৭টা পর্যন্ত ১১ জনের লাশ ও অন্তত ১০ জন গুরুতর আহতকে উদ্ধার করে ওসমানী হাসপাতালে পাঠাই। এরপর হাসপাতালে আরও ৩ জন মারা গেছেন।
তিনি আরও বলেন, আমরা আসার আগে স্থানীয়রা আরও আহত কয়েকজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠিয়েছেন। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। আমরা অনুসন্ধান চালাচ্ছি, আর কোনো হতাহত পড়ে আছেন কি না দেখার জন্য।
এদিকে সকালে ওসমানী হাসপাতাল ফাঁড়ি ইনচার্জ জুয়েল আহমদ জানান, তিনি অন্য একটি দুর্ঘটনায় নিহত একজনকে এই ঘটনার সঙ্গে মিলিয়ে ফেলেছিলেন। তাই প্রথমে তিনি জানিয়েছিলেন যে দুর্ঘটনায় আহত চারজন হাসপাতালে মারা গেছেন। কিন্তু মূলত হাসপাতালে ৩ জন মারা গেছেন।