সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলায় সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের আওতায় ‘বয়স্ক ভাতা’প্রাপ্তিতে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন দু’শতাধিক প্রবীণ।
করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি ও লকডাউনের মধ্যে সকাল-সন্ধ্যা অপেক্ষা করেও ভাতা পাচ্ছেন না তারা। সংশ্লিষ্টদের অপব্যবস্থাপনার কারণে দিনের পর দিন ধর্না দিয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যান বয়স্ক এসব নারী-পুরুষ।
বুধবার সরেজমিন উপজেলা সদরের ডিজিটাল ডাক ঘরের ‘ব্যাংক এশিয়ার’ এজেন্ট শাখায় গিয়ে দেখা গেছে, ডাক ঘরের সামনে ভাতা নিতে আসা বয়স্ক নারী-পুরুষের ভিড়। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ভাতার জন্যে সকাল থেকেই ওখানে অবস্থান নিয়েছেন তারা। করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি থাকলেও, কাউকে সামাজিক দূরত্ব মানতে দেখা যায়নি। অনেকেই আবার মাস্কও পরেননি। দীর্ঘ অপেক্ষায় ক্লান্ত তারা। কখনও দাঁড়িয়ে, কখনও বসে বার্ধক্যের শরীর নিয়ে চরম বিরক্তির সময় কাটছিল তাদের।
আরও পড়ুন: জীবনযুদ্ধে হার না মানা প্রতিবন্ধী মাজহারুল, অনেক ঘুরেও পাননি সরকারি ভাতা
অনেকে দাঁড়িয়ে থেকে অসুস্থ বোধ করছিলেন। সময় তখন সাড়ে ১১টা হলেও তখনও অনুপস্থিত, ডাক ঘরের উদ্যোক্তা ও ভাতা প্রদানকারী কর্তা কৃপেশ দেবনাথ।
কথা হয় ভাতাভোগী রাজনগর গ্রামের ৬৫ বছর বয়সি মছব্বির আলীর সাথে।
তিনি বলেন, চলমান পরিস্থিতির মধ্যে আমাদের বাইরে আসা উচিত নয়। আমরা গরীব মানুষ, তাই ঝুঁকি নিয়ে এসেও নিরাশ হয়ে ফিরে যাই বার বার। লকডাউনের মধ্যে এ নিয়ে চারদিন এসেছি। উদ্যোক্তা (কৃপেশ দেবনাথ) প্রতিবারই ল্যাপটপে সমস্যা বলে ফিরিয়ে দেন। আর প্রতিদিন অল্প কয়েক জনকে ভাতা দিয়েই চলে যান তিনি।
মুফতির গাঁও গ্রামের ৮০ বছর বয়সি আমরুজা বেগম বলেন, আমাকে প্রথমে একটি ‘বিশেষ টোকেন’ দিয়ে সোনালী ব্যাংক থেকে ভাতা নিতে বলা হয়। পরে সোনালী ব্যাংকে গেলে তারা আবার ব্যাংক এশিয়ায় পুনরায় আমাকে পাঠান। অসুস্থ শরীর নিয়ে কয়দিন ধরে আমি এভাবেই ঘুরছি।
আরও পড়ুন: মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা ২০ হাজার করার প্রস্তাব
ভাতা প্রদানকারী ডিজিটাল ডাক ঘরের উদ্যোক্তা ও ব্যাংক এশিয়ার এজেন্টের পরিচালক কৃপেশ দেবনাথ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, প্রত্যেক ইউনিয়নে ব্যাংক এশিয়ার এজেন্ট রয়েছে, সবাই ঠিক মতো সেবা দিচ্ছে না। ভাতা প্রদান কার্যক্রম সবাই অব্যাহত রাখলে এ সমস্যার সৃষ্টি হতো না। উপজেলা পর্যায়ে সার্ভিস দেয়ার জন্যই লকডাউনের মধ্যেও আমি সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার চেষ্টা করছি। মাঝে মধ্যে সার্ভার সমস্যার কারণে বিড়ম্বনার সৃষ্টি হয়।
বিশ্বনাথ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুমন চন্দ্র দাশ বলেন, ‘বিষয়টি আমি দেখছি।’
কোন ধরনের ভোগান্তি ছাড়াই যাতে প্রবীণরা ভাতা পান সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।