প্রজনন মৌসুমের কারণে সুন্দরবনে কাঁকড়া ধরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করে প্রশাসন।
সোমবার (১ জানুয়ারি) থেকে সুন্দরবনে কাঁকড়া ধরার উপর দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। বন বিভাগের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যেই জেলেদের কাঁকড়া ধরার পাস (অনুমতিপত্র) বন্ধ রাখা হয়েছে।
১ জানুয়ারি থেকে ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সুন্দরবনের পশ্চিম বিভাগে এ নিষেধাজ্ঞা জারি থাকবে। অবৈধভাবে কেউ যাতে বনে ঢুকতে না পারে সে ব্যাপারেও নেওয়া হয়েছে বন বিভাগের পক্ষে থেকে।
আরও পড়ুন: বরিশালে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইলিশ ধরায় ৪৯ জেলের কারাদণ্ড
বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি এই দুই মাস প্রাকৃতিক মৎস্য সম্পদ মা কাঁকড়ার প্রধান প্রজনন মৌসুম। এ সময়ে প্রজনন বৃদ্ধির লক্ষে সরকারিভাবে সুন্দরবনে কাঁকড়া ধরার পাস (অনুমোদন) বন্ধ রাখার নির্দেশনা রয়েছে। এই দুই মাসে ডিমওয়ালা মেদী-মায়া কাঁকড়া বিভিন্ন নদী খালে কোটি কোটি বাচ্চা ছাড়ে। আর বনের উপকূলীয় এলাকার হাজারো জেলে এই কাঁকড়া ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। এ ছাড়া এই কাঁকড়া বিদেশে রপ্তানি করে ব্যবসায়ীরাও বছরে কোটি টাকা আয় করেন।
বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, সুন্দরবনের ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার বাংলাদেশ অংশে জল ভাগের পরিমাণ ১ হাজার ৮৭৪ দশমিক ১ বর্গ কিলোমিটার। যা পুরো সুন্দরবনের আয়তনের ৩১ দশমিক ১৫ শতাংশ।
সুন্দরবনের জল ভাগে ২১০ প্রজাতির সাদা মাছ, ২৪ প্রজাতির চিংড়ি ও ১৪ প্রজাতির কাঁকড়া রয়েছে। বনের এই প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় এবং মা কাঁকড়ার প্রজনন বৃদ্ধির লক্ষে ৫৯ দিনের জন্য জেলেদের সুন্দরবনে প্রবেশ করে কাঁকড়া ধরার অনুমতি বন্ধ রাখেন।
আরও পড়ুন: ভারতের রপ্তানি নিষেধাজ্ঞায় রাতারাতি পেঁয়াজের দাম কেজি প্রতি ২০০ টাকা ছাড়াল
এদিকে এই দুই মাস কীভাবে পরিবার-পরিজন নিয়ে সংসার চলবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন হাজারো জেলে।
কয়রা উপজেলার ৬ নম্বর কয়রা গ্রামের জেলে শ্যামল কয়াল বলেন, কাঁকড়ার প্রজনন মৌসুম শুরু হয়েছে। বন বিভাগ অনুমোদন বন্ধ করে দিয়েছে তাই সুন্দরবন থেকে তিন দিন আগে কাঁকড়া ধরা বন্ধ করে বাড়ি ফিরে এসেছি। শুধু আমি না আমার মতো সব জেলে নৌকা নিয়ে ফিরে এসেছে। আর্থিকভাবে স্বচ্ছল কোনো লোক জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সুন্দরবনে কাঁকড়া ধরতে যায় না। আর যারা যায় তারা অধিকাংশ অতি দরিদ্র পরিবার।
তিনি আরও বলেন, নিষেধাজ্ঞা চলাকালে এই দুই মাস দরিদ্র পরিবারগুলোর খেয়ে না খেয়ে কষ্টে মানবেতর জীবনযাপন করতে হবে। তারপরও সরকারি নিয়ম তো মানতে হবে। তাছাড়া কাঁকড়া ধরা বন্ধের সময়ে সরকারি কোনো ভাতার ব্যবস্থা থাকলে এমন কষ্ট হতো না। তিনি বন্ধের সময়ে সরকারি সহায়তা দেওয়ার দাবি জানান।
আরও পড়ুন: কুষ্টিয়ায় ডাকাতি মামলায় ৯ আসামির ১০ বছরের কারাদণ্ড
উত্তর বেদকাশি ইউপি চেয়ারম্যান সরদার নুরুল ইসলাম কোম্পানি বলেন, কাঁকড়ার প্রজনন মৌসুমে অনুমোদন বন্ধ থাকায় অসহায় জেলেরা অতি কষ্টে জীবনযাপন করে। তাই এই দুই মাস জেলেদের সহযোগিতা করা প্রয়োজন।
কাশিয়াবাদ স্টেশন কর্মকর্তা নির্মল কুমার মন্ডল বলেন, এলাকায় কাঁকড়া ধরা বন্ধের বিষয় মাইকিং করা হয়েছে।
খুলনা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) এ জেড এম হাছানুর রহমান বলেন, প্রজনন মৌসুমে সুন্দরবনে কাঁকড়া বৃদ্ধির লক্ষে প্রতি বারের মতো এবারও জেলেদের অনুমোদন বন্ধ রাখার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, কাঁকড়ার যখন ডিম হয় তখন কাঁকড়া ধরা খুব সহজ। এই সময়ে কাঁকড়া খুব ক্ষুধার্ত থাকে। এদের সামনে যে খাবার দেওয়া হয় তাই খাওয়ার জন্য দ্রুত এগিয়ে আসে। এই সময় যদি কাঁকড়া ধরা না হয় তাহলে পরের বছর বেশি কাঁকড়া উৎপাদন সম্ভব। যে কারণে কাঁকড়ার প্রজননকাল নির্বিঘ্নে রাখতে এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: মানিকগঞ্জে ট্রাকচাপায় নিহত ৩
তিনি বলেন, এখন শুধু মাছের পাস দেওয়া হচ্ছে। মাছের পাস নিয়ে কেউ কাঁকড়া ধরলে বা কোনো নৌকায় কাঁকড়া ধরা সরঞ্জাম পেলে সেসব জেলের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কাঁকড়ার প্রজনন মৌসুমে বন বিভাগ কঠোর অবস্থা রয়েছে। যাতে করে কেউ কাঁকড়া আহরণ করতে না পারে।