চলতি মাসের শুরুতে ইসরায়েলে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের প্রতিশোধ নিতে ইরানের সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েল।
ইরানের রাজধানী তেহরানে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। তবে এই হামলায় ক্ষয়ক্ষতি বা হতাহতের বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
ইসরায়েলের এই হামলার কারণে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ক্রমবর্ধমান সহিংসতার সময় পরস্পর চিরশত্রুদের সর্বাত্মক যুদ্ধের কাছাকাছি ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি তৈরি করেছে। যেখানে গাজার হামাসসহ ইরান সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো এবং লেবাননের হিজবুল্লাহ ইতোমধ্যেই ইসরাইলের সঙ্গে যুদ্ধ করছে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী শনিবার বলেছে, তারা ‘সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে সুনির্দিষ্ট হামলা’ চালিয়েছে। তবে পারমাণবিক বা তেল স্থাপনাগুলোকে হামলার লক্ষ্যবস্তু করা হয়নি বলে দুই ইসরায়েলি কর্মকর্তা জানিয়েছেন। পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে চলমান অভিযান নিয়ে কথা বলেছেন ওই কর্মকর্তারা।
আরও পড়ুন: গাজার স্কুলে ইসরায়েলি বোমা হামলায় ১৭ ফিলিস্তিনি নিহত
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি শনিবার এক ভিডিওতে বলেন, ‘গত ৭ অক্টোবর থেকে ইরান ও এ অঞ্চলে তাদের সমর্থিত বাহিনী ইসরাইলের ওপর অব্যাহতভাবে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে ইরানের মাটি থেকে সরাসরি হামলা অন্যতম। বিশ্বের অন্য সব সার্বভৌম দেশের মতো ইসরায়েল রাষ্ট্রেরও জবাব দেওয়ার অধিকার ও কর্তব্য রয়েছে বলে জানান তিনি।’
প্রাথমিকভাবে, ইরানের ১ অক্টোবরের হামলার প্রতিক্রিয়ার জন্য ইসরায়েলের হামলার সম্ভাব্য লক্ষ্যবস্তু হিসেবে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা এবং তেল স্থাপনাগুলো সবই দেখা হয়েছিল। তবে অক্টোবরের মাঝামাঝি ইসরায়েলের কাছ থেকে বাইডেন প্রশাসন আশ্বাস পায় যে তারা এ জাতীয় লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানবে না।
তেহরানে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে বলে স্বীকার করেছে ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম। এছাড়া কিছু শব্দ শহরের আশপাশের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা থেকে এসেছে বলে জানিয়েছে।
তবে সংক্ষিপ্ত উদ্বৃতি ছাড়া ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন এ বিষয়ে বিস্তারিত আর কিছু জানায়নি এবং এমনকি তেহরানের একটি সবজি বাজারে লোকজনের ট্রাক লোড করার লাইভ ফুটেজও দেখিয়েছে।
তেহরানের এক বাসিন্দা বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে (এপি) জানিয়েছেন, অন্তত সাতটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে ওই বাসিন্দা কথা বলেছেন।
আরও পড়ুন: লেবাননে ইসরায়েলি বিমান হামলায় ৩ গণমাধ্যমকর্মী নিহত
তেহরানের লোকজন বিস্ফোরণের শব্দের সঙ্গে সঙ্গে আকাশে আগুনের আভাস দেখতে পাচ্ছিল। অন্যান্য ফুটেজে দেখা গেছে, ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র আকাশের দিকে ছুটছে এবং অন্যান্য বিস্ফোরণ ঘটছে।
ইরান শনিবার ভোরে দেশের আকাশসীমা বন্ধ করে দিয়েছে এবং অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের ফ্লাইট-ট্র্যাকিং ডেটা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে যে বাণিজ্যিক বিমান সংস্থাগুলো ইরান এবং ইরাক, সিরিয়া এবং লেবাননের আকাশ এড়িয়ে গেছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলায় প্রায় ১২০০ মানুষ নিহত হয় এবং ২৫০ জনকে জিম্মি করে গাজায় আনা হয়। গাজা ও ইসরায়েলের চলমান যুদ্ধের মধ্যে ইসরায়েলের হামলায় হামাস ও হিজবুল্লাহর শীর্ষ নেতৃত্ব ইসমাইল হানিয়া ও হাসান নাসরুল্লাহ নিহত হওয়ার প্রতিক্রিয়ায় দেশটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান।
বেসামরিক নাগরিক ও যোদ্ধাদের পৃথক না করে স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছে, এই সময়ের মধ্যে গাজায় ইসরায়েলের হামলায় ৪২ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
এদিকে লেবাননের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ইসরায়েলি হামলায় তিন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন।
আরও পড়ুন: হিজবুল্লার হামলায় দক্ষিণ লেবাননে ৫ ইসরায়েলি সেনা নিহত