প্রস্তাবিত বাজেট
প্রস্তাবিত বাজেটে নেই দুর্নীতি ও অর্থপাচার প্রতিরোধ এবং সুশাসন-ন্যায্যতা বিষয়ক কোনো দিকনির্দেশনা: টিআইবির উদ্বেগ
চলমান অর্থনৈতিক সংকট, ক্রমবর্ধমান আয়-বৈষম্য ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমার মূল কারণ লাগামহীন দুর্নীতি ও অর্থপাচারের মতো মরণব্যাধিকে প্রস্তাবিত বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী একেবারেই স্বীকার করেননি। একইভাবে সুশাসন ও ন্যায্যতার ভাবনাকেও নির্বাসনে পাঠিয়েছেন বলে মন্তব্য করে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
সংস্থাটি বলছে, কোভিড সংকট ও ইউক্রেন যুদ্ধপ্রসূত বৈশ্বিক সংকটের ফলে অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে সন্দেহ নেই; কিন্তু দেশে টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের পথে মূল অন্তরায় যে অবারিত দুর্নীতি ও গগণচুম্বি অর্থপাচার, তা নিয়ন্ত্রণে কোনো প্রকার দিকনির্দেশনাহীন উচ্চাভিলাষী বাজেট কীভাবে অর্থবহ বাস্তবায়িত হবে তা যেমন পরিস্কার নয়, তেমনিভাবে ক্ষমতার বলয়ের বাইরে দেশের আপামর জনগণের জন্য এই বাজেট কোনো ভূমিকা রাখবে, এমন আশা একেবারেই অমূলক।
শুক্রবার টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান একটি বিবৃতিতে বলেন, ‘অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তব্যে ডলার সংকট মোকাবিলা এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পুনর্গঠনের জন্য আমদানিতে কঠোরতা, ঋণপত্রে নজরদারি অব্যাহত রাখা এবং একাধিক মুদ্রা বিনিময় হার থেকে সরে আসার ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু বৈদেশিক মুদ্রার সংকটের পাশাপাশি দেশের সার্বিক অর্থনীতির অন্তর্নিহিত মরণব্যাধি দুর্নীতি ও অব্যাহত মুদ্রাপাচারের বিষয়টিকে নির্বিকার এড়িয়ে গেলেন। অথচ সরকারের অজানা নয় যে, বাংলাদেশে যদি মধ্যম মাত্রায় দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হতো তাহলে জাতীয় আয়ের প্রবৃদ্ধি কমপক্ষে ২ থেকে ৩ শতাংশ বেশি হতো ও জনগণের জন্য অর্থবহ হতো; অন্যদিকে অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য প্রাক্কলন অনুযায়ী বছর গড়ে বাংলাদেশ থেকে পাচার হচ্ছে কমপক্ষে ১২ বিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ অর্থ। দুর্নীতি ও অর্থপাচারের বিশাল দুষ্টচক্রকে নিয়ন্ত্রণের দিকনির্দেশনাহীন বাজেট যে আরো দুর্নীতি ও অর্থপাচার সহায়ক হবে তাতে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই।’
পাচার করা অর্থ বিনা প্রশ্নে ফেরত আনতে বিগত বাজেটে দেওয়া অনৈতিক সুবিধার মেয়াদ আর না বাড়ানোর চিন্তাকে দেরিতে হলেও সরকারের শুভ বুদ্ধির উদয় হিসেবে আখ্যা দিয়ে, প্লট ও ফ্ল্যাটে বিনিয়োগে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ অব্যাহত না রাখার আহবান জানাচ্ছে টিআইবি। প্লট ও ফ্ল্যাটে বিনিয়োগসহ অন্য যে কোনোভাবে কালো টাকা সাদা করার অসাংবিধানিক, বৈষম্যমূলক ও দুর্নীতিসহায়ক সুযোগ যেন নতুন করে আয়কর আইনে স্থান না পায় এমন আহবান জানিয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা বলে, বার বার সুযোগ দিয়েও দেশের অর্থনীতিতে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ করে দিয়ে কোনো সরকারই কাঙিক্ষত মাত্রায় রাজস্ব আদায় করতে পারেনি। বরং এর মাধ্যমে দুর্নীতিবাজ কালো টাকার মালিকদেরই শুধু সুরক্ষা দেওয়া গেছে এবং বাস্তবে দুর্নীতির গভীরতার বিস্তারে অবদান রেখেছে; সরকারের দুর্নীতিবিরোধী অবস্থানের নৈতিক ভিত্তি দুর্বলতর হয়েছে। তাই এই সুযোগটি যেন স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর চাপে আবারো না দেওয়া হয় সে ব্যাপারে সরকার দৃঢ়তা দেখাবে এমনটাই প্রত্যাশা।’
আরও পড়ুন: আদানি গ্রুপের সঙ্গে ঢাকার বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি নজিরবিহীন বৈষম্যমূলক: টিআইবি
মূলত দুর্নীতির বৈষম্যমূলক প্রভাবে দেশে ক্রমবর্ধমান আয়-বৈষম্যের প্রেক্ষিতে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে বরাদ্দ ও সুবিধাভোগীর সংখ্যা এবং ভর্তুকি বরাদ্দের ব্যয় ব্যবস্থাপনার দিক থেকেও প্রস্তাবিত বাজেট ন্যায্যতা রাখতে ব্যর্থ হয়েছে উল্লেখ করে টিআইবি বলছে, আয়হীন ও নিম্নআয়ের মানুষ যতোটা চাপে রয়েছে, সে তুলনায় সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা বা সুবিধাভোগীর সংখ্যা বাড়েনি। ভাতার পরিমাণও কোনো কোনো ক্ষেত্রে নামমাত্র বাড়ানোর প্রস্তাব করা হলেও বাস্তবে তা কোনোভাবেই অর্থবহ হবে না। আবার সরকার বাজেটে সাড়ে চুরাশি হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি ও প্রণোদনা ব্যয়ের যে প্রস্তাবনা রেখেছে সেখানে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকাই রাখা হয়েছে জনপ্রশাসনের জন্য। সামাজিক নিরাপত্তায় ভর্তুকি ও প্রণোদনা মাত্র ৫ হাজার কোটি টাকা। টিআইবি প্রত্যাশা করে বাজেট পাসের আগেই এসব ক্ষেত্রে সরকার ন্যায্যতা বিধান করবে এবং বিশেষ করে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিনির্ভর সুশাসন, এবং দুর্নীতি ও অর্থপাচার নিয়ন্ত্রণের কার্যকর পথরেখা বাজেটের মূলধারায় অন্তর্ভুক্ত করবে।
আরও পড়ুন: ওয়াসা চেয়ারম্যানকে অপসারণের নিন্দা টিআইবি’র
বড় মাইক্রোবাসেও সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার চায় বারভিডা
২০২১-২০২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে মাইক্রোবাস এবং হাইব্রিড কার ও জিপ আমদানিতে শুল্ক কমানো ও পুনর্বিন্যাস করায় প্রধানমন্ত্রী এবং অর্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছে রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানিকারকদের সংগঠন বারভিডা।
একই সাথে গণপরিবহন হিসেবে বহুল ব্যবহৃত ১০-১৫ আসন সেগমেন্টের মাইক্রোবাস (এইচ এস কোড ৮৭ দশমিক ০২), যা নগর ও গ্রামীণ জীবনে বিশেষ প্রভাব রাখছে তা আমদানির ক্ষেত্রে সম্পূরক শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
বুধবার সংগঠনের কার্যালয়ে বাজেট পরবর্তী এক সংবাদ সম্মেলনে বারভিডা মহাসচিব মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম এ দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য দেন সংগঠনের প্রেসিডেন্ট আবদুল হক।
বারভিডা মহাসচিব বলেন, রিকন্ডিশন্ড মোটরযান আমদানির ক্ষেত্রে আমরা ৪৫ শতাংশ অবচয় সুবিধা এবং বছরভিত্তিক অবচয় সুবিধা চেয়েছিলাম। কিন্তু তা প্রস্তাবিত বাজেটে অন্তর্ভুক্ত হয়নি। আসন্ন বাজেটে সুবিধাটি প্রদানে সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর আর্তমানবতামূলক কার্যক্রমে অ্যাম্বুলেন্স দিল বারভিডা
তিনি বলেন, নতুন ও রিকন্ডিশন্ড গাড়ির শুল্কায়ন মূল্যে চরম বৈষম্যের ফলে নতুন গাড়ির চেয়ে রিকন্ডিশন্ড গাড়ির দাম কোনো কোনো ক্ষেত্রে বেশি হয়ে যাচ্ছে। ফলে ক্রেতা কমে যাচ্ছে, আমদানি হ্রাস পাচ্ছে এবং এ খাতের ব্যবসায়ীরা মারাত্মক আর্থিক সঙ্কটে পড়ছেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আমদানি ক্রমাগত কমতে থাকায় যেখানে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ২০ হাজার ১৪৯টি এবং ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২৩ হাজার ৭৫টি গাড়ি আমদানি হয়, সেখানে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আমদানি কমে ১২ হাজার ৫০২টিতে নেমে আসে। ২০১৯-২০ অর্থবছরেও আমদানি হ্রাসের ধারা অব্যাহত রয়েছে।
প্রস্তাবিত বাজেট মন্ত্রিসভায় অনুমোদন
আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত ৫০তম জাতীয় বাজেটের অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
বৃহস্পতিবার সংসদ ভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠক এ অনুমোদন দেয়া হয়।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীরা বৈঠকে অংশ নেন।
আরও পড়ুন: ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট পেশ হবে আজ
বিকাল ৩টা থেকে সংসদে এই বাজেট প্রস্তাব পেশ করার কথা রয়েছে অর্থমন্ত্রীর। করোনাকালে এটি দ্বিতীয় বাজেট।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ের পর ক্ষমতাসীন সরকারে এটি তৃতীয় বাজেট।
প্রস্তাবিত বাজেটে টেলিযোগাযোগ খাতে বাড়তি কর বাতিলের দাবি
প্রস্তাবিত বাজেটে টেলিযোগাযোগ খাতে ৫ শতাংশ বাড়তি কর আরোপের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন।
‘গতানুগতিক’ ধারার বাজেট এটা নয়: অর্থমন্ত্রী
২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটকে ‘মানুষকে রক্ষা করার’ বাজেট হিসেবে বর্ণনা করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। সেই সাথে অর্থনীতিবিদদের করা মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বলেছেন, এ বাজেট ‘গতানুগতিক’ ধারার বাজেট নয়।
বাজেটে দরিদ্র মায়েদের জন্য বরাদ্দের দাবি ডর্পের
করোনা পরিস্থির কারণে দারিদ্র্র্যের হার বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে এমন আশঙ্কা করে দারিদ্র বিমোচনে আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে দরিদ্র মায়েদের জন্য বাজেট বরাদ্দ দাবি করেছে বেসরকারি সংস্থা ডর্প।