বাংলা ভাষা
বাংলা ভাষাকে ‘ধ্রুপদী ভাষা’র মর্যাদা দিল ভারত
ঢাকা, ৪ অক্টোবর (ইউএনবি) - বাংলা, মারাঠি, পালি, প্রাকৃত ও অসমীয়া ভাষাকে ‘ধ্রুপদী ভাষা’র মর্যাদা প্রদানে মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তের প্রশংসা করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
মোদি তার এক্স হ্যান্ডেলে এক বার্তায় বলেন, ‘বাংলা ভাষাকে ধ্রুপদী ভাষার মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। বিশেষত দুর্গাপূজার শুভ সময়ে, এটা খুবই আনন্দের বিষয়।’
তিনি বলেন, বাংলা সাহিত্য বছরের পর বছর অসংখ্য মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছে।
মোদি বলেন, ‘বিশ্বের সব বাংলা ভাষাভাষীকে আমি অভিনন্দন জানাই।’
আরও পড়ুন: জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ড. ইউনূসের বৈঠক হবে না
তিনি আরও বলেন, ‘আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে অসমীয়া ভাষা এখন ধ্রুপদী ভাষার মর্যাদা পাবে, যা কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা অনুমোদন করেছে। অসমীয়া সংস্কৃতি শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সমৃদ্ধ হয়েছে এবং এটি আমাদের সমৃদ্ধ সাহিত্যিক ঐতিহ্য উপহার দিয়েছে। ভবিষ্যতে এই ভাষা আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠুক। আমার অভিনন্দন।’
মোদি আরও বলেন, ‘মারাঠি হলো ভারতের গর্ব।’
ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই অসাধারণ ভাষাকে ধ্রুপদী ভাষার মর্যাদা দেওয়ার জন্য অভিনন্দন। এই সম্মান মারাঠি ভাষার সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক অবদানকে আমাদের জাতির ইতিহাসে স্বীকৃতি দেয়। মারাঠি সর্বদাই ভারতের ঐতিহ্যের একটি প্রধান ভিত্তি হয়ে ছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি নিশ্চিত যে ধ্রুপদী ভাষার মর্যাদা পাওয়ার পর আরও অনেকে এই ভাষা শিখতে অনুপ্রাণিত হবে।’
‘পালি ও প্রাকৃত হলো ভারতের সংস্কৃতির মূল ভিত্তি। এগুলো আধ্যাত্মিকতা, জ্ঞান ও দর্শনের ভাষা। এই ভাষাগুলোর সাহিত্যিক ঐতিহ্যও সুপরিচিত। ধ্রুপদী ভাষা হিসেবে তাদের স্বীকৃতি তাদের কালজয়ী প্রভাবকে ভারতের চিন্তা, সংস্কৃতি ও ইতিহাসে সম্মানিত করে।’
মোদি বলেন, ‘আমি নিশ্চিত যে মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তের পর আরও অনেক মানুষ এই ভাষাগুলি সম্পর্কে জানার জন্য অনুপ্রাণিত হবে। এটি নিঃসন্দেহে একটি আনন্দের মুহূর্ত।’
আরও পড়ুন: নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করে এগোনো হবে: জাতিসংঘে ইউনূস-মোদির বৈঠকের সম্ভাবনা প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে বাইডেন-মোদির আলোচনা, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তায় গুরুত্বারোপ
২ মাস আগে
বাংলা ভাষার আন্তর্জাতিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের প্রতি শ্রদ্ধা লন্ডন মিশনের
বাংলা ভাষার আন্তর্জাতিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক নেতৃত্ব ও বায়ান্নোর অমর ভাষা শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে লন্ডনের বাংলাদেশ হাই কমিশন।
বুধবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় এ উপলক্ষে লন্ডনের রয়্যাল বারা অব কেন্জিংটনে এক কনফারেন্স সেন্টারে আয়োজিত ‘মাল্টিলিঙ্গুয়াল এডওকেশন, দ্যা পিলার অবদ লার্নিং’ শীর্ষক বিশেষ আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
এতে ইউকে ন্যাশনাল কমিশন ফর ইউনেস্কো, কমনওয়েলথ,আন্তর্জাতিক মেরিটাইম অর্গানাইজেশন ও ব্রিটিশ কাউন্সিলের প্রতিনিধিবর্গ এবং যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত আর্জেন্টিনা, বাহামা, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিস্তিন, গ্রীস, গুয়েতেমালা, কেনিয়া, কোরিয়া প্রজাতন্ত্র, মালয়েশিয়া, মঙ্গোলিয়া, মরক্কো, মিশর, রোমানিয়া, সাইপ্রাস, সার্বিয়া, শ্রীলঙ্কা ও ইউক্রেনসহ বিভিন্ন দেশের হাইকমিশনার, রাষ্ট্রদূত ও উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিগণ অংশগ্রহণ করেন ও বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠানে ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইউক্রেন, সার্বিয়া, মালয়েশিয়া, মরোক্কো, সাইপ্রাস ও শ্রীলঙ্কা দূতাবাসের প্রতিনিধিত্বকারী শিল্পীরা মহান ভাষা শহিদদের উৎসর্গ করে নিজ নিজ ভাষায় মনোজ্ঞ সঙ্গীত, আবৃত্তি ও নৃত্য পরিবেশন করেন।
অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণ ছিল ব্রিটিশ-বাংলাদেশি শিশু-কিশোর শিল্পীদের সমবেত কন্ঠে জাতিসংঘের ৬টি ভাষায় ‘আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ অমর সঙ্গীতটির পরিবেশনা।
লন্ডনে বসবাসকারী ১৯৭১ সালের বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং ব্রিটিশ-বাংলাদেশি কমিউনিটিসহ বিভিন্ন দেশের ভিন্ন ভিন্ন ভাষাভাষীর প্রায় পাঁচশ নারী, পুরুষ ও শিশু-কিশোর অংশ নেন অনুষ্ঠানে।
আলোচনা অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনীম।
এতে আরও বক্তব্য দেন ইউকে ন্যাশনাল কমিশন ফর ইউনেস্কোর প্রধান নির্বাহী জেমস ব্রিজ, আন্তর্জাতিক মেরিটাইম অর্গানাইজেশন-এর কাউন্সিল চেয়ার ভিক্টর জিমেনেজ, যুক্তরাজ্যে দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত ইউন ইওচিয়ল, বাহামার হাইকমিশনার প’ল এ গোমেজ, ভারতের ডেপুটি হাইকমিশনার সুজিত ঘোষ, ব্রিটিশ কাউন্সিলের দক্ষিণ এশিয়া রিজিওন্যাল ম্যানেজার মিজ সাম হারভি এবং ব্রিটিশ বাংলাদেশি কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক প্রমুখ।
ইউকে ন্যাশনাল কমিশন ফর ইউনেস্কোর প্রধান নির্বাহী জেমস ব্রিজ বলেন, বাংলাদেশের উদ্যোগেই ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কোতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের প্রস্তাব গৃহীত হয়। এরপর ২০০০ সাল থেকে সারা বিশ্বে ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে।
এর আগে মহান একুশের প্রথম প্রহরে হাইকমিশনার ও টাওয়ার হ্যামলেটস -এর মেয়র লুৎফুর রহমান একসঙ্গে এবং পরে মিশনের কর্মকর্তাদের নিয়ে পূর্ব লন্ডনের শহীদ আলতাব আলি পার্কে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে বায়ান্নোর ভাষা শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
৯ মাস আগে
আসামের বাংলা ভাষা আন্দোলন নিয়ে মাসুদ করিমের তথ্যচিত্র
বাংলা ভাষার আন্দোলন মানেই ১৯৫২ এর ২১শে ফেব্রুয়ারি। শুধু সালাম, রফিক, শফিক, বরকত ও জব্বারের নাম। কিন্তু এর বাইরেও যে বাংলা ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছেন, তা বর্তমান প্রজন্মের কাছে অজানাই রয়ে গেছে।
১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন আর আসামের ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট এক নয়। কেননা, আসামে বহু জাতি উপজাতি ও ভাষাভাষী মানুষের বসবাস। এই সকল মানুষের নিজস্ব ইতিহাস-ঐতিহ্য, রাজনৈতিক পটভূমি ও সংস্কৃতিগত স্বাতন্ত্র্যও বিদ্যমান।
তাই ১৯৬১ সালের আসামে ভাষা আন্দোলনটি শুধুমাত্র বাংলা ভাষার জন্য নয়। ওখানে মনিপুরী, গারো ছাড়াও অন্যান্য ভাষার আন্দোলনকারীও ছিলেন।
তবে ১৯৬১ সালের ১৯ মে ভাষা আন্দোলনের জন্য যারা আসামের কাছাড় জেলার শিলচর রেলওয়ে স্টেশানে প্রাণ হারান, তারা সবাই বাঙালি ছিলেন। বিষয়টি আরও আলোচিত হয় কমলা ভট্টাচার্যের কারণে। কারণ তিনিই বিশ্বে প্রথম নারী ভাষা শহীদ। সে আলোকে আসামের ভাষা আন্দোলন একটি গুরুত্ব বহন করে।
তাই আসামে বাংলা ভাষার জন্য পৃথকভাবে একটা ইতিহাস তৈরি হয়, যার অবদান বাঙালিদেরই বেশি। কেননা ১১ জন শহীদের বেশিরভাগের আদি নিবাস ছিল অধুনা বাংলাদেশের সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, মুন্সীগঞ্জ ও টাঙ্গাইলে।
আরও পড়ুন: ইলন মাস্ককে নিয়ে তথ্যচিত্র তৈরি করছেন অস্কার বিজয়ী অ্যালেক্স গিবনি
আসামের ভাষা আন্দোলন নিয়ে পূর্ণাঙ্গ তথ্যচিত্র এখনও তৈরি করা হয়নি। প্রথমবারের মত আসামের ভাষা আন্দোলনের গবেষণামূলক তথ্যচিত্র ‘আসামের বাংলা ভাষা আন্দোলন’- নির্মাণ করছেন বাংলাদেশের তথ্যচিত্র নির্মাতা মাসুদ করিম।
ঠিক কোন প্রেক্ষাপটে এই ভাষা আন্দোলন সৃষ্টি হয় তা জানা যাবে এই তথ্যচিত্রে। আসামের ভাষা আন্দোলনটি কোনো রাষ্ট্রভাষার আন্দোলন ছিল না। শুধুমাত্র সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে মায়ের ভাষায় কথা বলার দাবি ছিল।
তথ্যচিত্রে কমলার চরিত্রে অভিনয় করেছেন হালের চলচ্চিত্রের ও টেলিভিশনের নায়িকা নিঝুম রুবিনা। কমলার মায়ের ভূমিকায় বিশিষ্ট অভিনেত্রী শিরন আলম এবং কমলার সেজদির ভূমিকায় অভিনয় করেন মনিষা শিকদার।
বাংলাদেশের বাইরে কলকাতায় আংশিক চিত্রগ্রহণ করা হয় এবং তাতে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক পবিত্র সরকার, উনিশে মে পত্রিকার সম্পাদক শান্তনু গঙ্গারিডিসহ কমলা ভট্টাচার্যের ভাইঝি বর্ণালী ভট্টাচার্য কমলার কিছু অপ্রকাশিত তথ্য প্রকাশ করেন।
শিলচরে মূল্যবান সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয় আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক তপোধীর ভট্টাচার্য, শিলচর ভাষা শহিদ স্টেশন আন্দোলনের প্রাণপুরুষ ডা. রাজীব কর, উনিশের গবেষক নীহার রঞ্জন পাল, এ্যাডভোকেট ইমাদ উদ্দিন বুলবুল, করিমগঞ্জ এর দিলীপ কান্তি লস্কর এবং ভাষা শহিদ পরিবারের সমস্যদের সাক্ষাৎকার যুক্ত করা হয়।
আগামী বছরের ১৯শে মে আসামের শিলচর, আগরতলা, কলকাতা ও ঢাকায় একযোগে এই তথ্যচিত্রের প্রদর্শনী হবে।
সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নের মাসুদ করিম এই তথ্যচিত্র নির্মাণ করছেন।
উল্লেখ্য, মাসুদ করিম ২০১৫ সালে ভারতের প্রখ্যাত অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, ২০১৭ সালে বাংলাদেশের জাতীয় অধ্যাপক অনিসুজ্জামান এবং ২০২০ সালে অমর একুশের গীতিকার আবদুল গাফফার চৌধুরীর জীবন ও কর্মভিত্তিক তথ্যচিত্র নির্মাণ করেন।
আরও পড়ুন: বঙ্গবন্ধুর কলকাতার জীবন নিয়ে নির্মাণ হচ্ছে তথ্যচিত্র ‘কলকাতায় বঙ্গবন্ধু’
তথ্যচিত্রে সালমানের জীবন
১ বছর আগে
বাংলা ভাষার উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ: কোথা থেকে এলো বাংলা ভাষা
বাংলাদেশ সহ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা এবং আসাম রাজ্যের বারাক উপত্যকার রাষ্ট্রীয় ভাষা বাংলা। এছাড়া ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল সহ ইউরোপ, আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বাংলা ভাষাভাষী মানুষ। বিশ্বব্যাপী প্রায় ৩০ কোটি বাঙালির এই মুখের ভাষার শুরুটা খুঁজতে হলে ফিরে যেতে হবে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার বছরেরও আরো পেছনে। মহিমান্বিত বাংলা ভাষা আন্দোলনের এই মাসে চলুন জেনে নেয়া যাক অতি প্রাচীন বাংলা ভাষার উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ সম্পর্কে।
বাংলা ভাষার উৎপত্তি
বাংলা ভাষা খুঁজে পাওয়া যায় খ্রিস্টপূর্ব ৩৫০০ অব্দে ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা গোত্রে। সরাসরি সংস্কৃত ভাষা থেকে উৎপত্তির কিংবদন্তি থাকলেও বাংলা ভাষাবিদরা বিশ্বাস করেন, বাংলা মাগধী প্রাকৃত এবং পালির মতো ইন্দো-আর্য ভাষা থেকে এসেছে।
ইন্দো-আর্য হল ইন্দো-ইরানীয় ভাষা উপবিভাগের একটি প্রধান শাখা, যা ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা গোত্রের পূর্বাঞ্চলীয় ধরন। প্রখ্যাত ভাষাবিদ সুনীতি কুমার চ্যাটার্জির মতে, বৈদিক এবং সংস্কৃত উপভাষাগুলোকে প্রাচীন ইন্দো-আর্য যুগের প্রতিনিধি হিসাবে বিবেচনা করা যেতে পারে। মধ্য ইন্দো-আর্য ভাষাগুলোর মধ্যে আছে পালিসহ প্রাকৃতের বিভিন্ন রূপ, যেগুলো পাওয়া যায় সম্রাট অশোক এবং থেরাবাদ বৌদ্ধ কাননের শিলালিপিতে।
আরো পড়ুন: বাংলা নববর্ষের মঙ্গল শোভাযাত্রার ইতিহাস: রূপরেখায় অপশক্তির অবসান কামনায় শান্তি মিছিল
প্রথম সহস্রাব্দে বাংলা যখন মগধ রাজ্যের অংশ ছিল, তখন মধ্য ইন্দো-আর্য উপভাষাগুলোর বেশ প্রভাব ছিলো বাংলায়। এই উপভাষাগুলো মাগধী প্রাকৃত নামে পরিচিত আর এটিই ছিলো আধুনিক বাংলা, বিহার, ও আসামের লোকেদের কথ্য ভাষা। এই ভাষারই বির্বতিত রূপ অর্ধ-মাগধী প্রাকৃত, যেখান থেকে প্রথম সহস্রাব্দের শেষের দিকে উদ্ভব হয় অপভ্রংশের। অতঃপর কালক্রমে এই অপভ্রংশ থেকে একটি স্বতন্ত্র ভাষা হিসেবে জন্ম হয় বাংলা ভাষার।
বাংলা ভাষার বিবর্তন
বাংলা ভাষার বিবর্তনের তিনটি পর্যায়ে ভাগ করা যেতে পারে; পুরাতন, মধ্য এবং আধুনিক বাংলা।
পুরাতন বাংলা ছিল ৬৫০ খ্রিস্টাব্দে বাংলার পুরোহিত এবং পণ্ডিতদের সাহিত্যকর্মের ভাষা। এই সময়ের সাহিত্যের খুব কম চিহ্নই এখন অবশিষ্ট রয়েছে। সবচেয়ে প্রাচীনতম নিদর্শনের মধ্যে একমাত্র চর্যাপদ পাওয়া যায়। এটি বৌদ্ধধর্মের উপর ভিত্তি করে কবিতার একটি সংকলন, যা অষ্টম থেকে দ্বাদশ শতকের মধ্যে লিপিবদ্ধ হয়েছে বলে বিবেচনা করা হয়।
আরও পড়ুন: মাতৃভাষায় শিক্ষা গ্রহণ কেন জরুরি?
চতুর্দশ শতকে বাংলায় শুরু হয় মুসলমানদের সালতানাত। সালতানাত বাংলাকে এই অঞ্চলের সরকারী দরবারী ভাষা হিসেবে ঘোষণা করে। এই ধারাবাহিকতায় ক্রমেই বাংলার স্থানীয় ভাষায় পরিণত হয় বাংলা।
ষোড়শ শতকে মুঘলরা বাংলা দখল করলে বাংলা ভাষার সাথে যোগসাজশ ঘটে ফার্সি ভাষার। বর্তমান বাংলা ভাষার আধুনিক রূপটি পাওয়া যায় ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধের সময় বাংলার নদীয়া অঞ্চলে কথিত উপভাষায়। এই ভাষাটির দুটি ভাগ; শুদ্ধ এবং চলিত। এগুলোর ভিত্তি গড়েছে প্রধানত মাগধী প্রাকৃত এবং পালিসহ তুর্কি, পর্তুগিজ, ফার্সি ও ইংরেজি।
১৯৪৭ থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত বাংলা ভাষাকে সরকারী ভাষা করার দাবিতে বাংলা ভাষা আন্দোলন পূর্ব বাংলায় বাঙালি জাতীয়তাবাদকে লালন করে। ফলে ১৯৭১ এ নয় মাস মুক্তিযুদ্ধের পর অভ্যুদয় ঘটে বাংলাদেশের। ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো ভাষা আন্দোলনের স্বীকৃতিস্বরূপ ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে স্বীকৃতি দেয়।
আরো পড়ুন: একুশে বইমেলার শিকড়ের সন্ধান
বাংলার উপভাষা
কথ্য বাংলায় আঞ্চলিক ভিন্নতার রেশ ধরে গঠিত হয় উপভাষা। ভাষাবিদ সুনীতি কুমার চ্যাটার্জি পূর্ব মাগধী ভাষার উপভাষাগুলোকে চারটি গ্রুপে বিভক্ত করেছেন; রাঢ়ি, বঙ্গিয়া, কামরূপী এবং বরেন্দ্রী। দক্ষিণ-পশ্চিমের রাড়ী বা নদীয়া অঞ্চলের উপভাষা আধুনিক প্রমিত কথ্য বাংলার ভিত্তি তৈরি করে। বাংলাদেশের পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের বরিশাল, চট্টগ্রাম, ঢাকা এবং সিলেট বিভাগের অনেকাংশে প্রচলিত উপভাষায় পশ্চিমবঙ্গের বচন ব্যবহৃত হয়।
বাংলার কিছু ধরন চাটগাইয়া এবং চাকমার স্বরের সাথে বিবর্তিত। রংপুরী, খরিয়া থার, এবং মাল পাহাড়িয়া পশ্চিমী বাংলা উপভাষার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত হলেও আলাদা ভাষা হিসাবে ধরা হয়। একইভাবে উত্তর বাংলার উপভাষার সাথে মিল থাকলেও হাজং একটি পৃথক ভাষা।
১৯ শতকের শেষ এবং ২০ শতকের গোড়ার দিকে বাংলার প্রমিতকরণের সময় বাংলার সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ছিল ব্রিটিশ অধীন কলকাতা শহরে। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ উভয় ক্ষেত্রেই যেটি প্রমিত রূপ হিসেবে গৃহীত হয়েছে, তা মুলত নদীয়া জেলার পশ্চিম-মধ্য উপভাষার উপর ভিত্তি করে।
আরো পড়ুন: বাংলাদেশের শীর্ষ ১৫টি ঐতিহ্যবাহী স্থান
প্রায় ১৩০০ বছরের দীর্ঘ বিবর্তনে বাংলা ভাষার সাথে যুক্ত হয়েছে প্রচুর পরিমাণে দেশীয় এবং বিদেশী শব্দ। বহু শতাব্দীর পর ১৯ শতকে এসে রাজা রাম মোহন রায় ও বিদ্যাসাগরের হাতে বাংলা চূড়ান্ত রূপ পায়। আজ বাংলা মানব সভ্যতার ইতিহাসে নিজস্ব বৈশিষ্ট্য নিয়ে একটি স্বতন্ত্র ভাষা। বিশ্ব জুড়ে প্রায় ৩০ কোটি মানুষের মাতৃভাষা এবং ৩৭০ লক্ষ মানুষের দ্বিতীয় কথ্য ভাষা বাংলা। পৃথিবীর ভাষাগুলোর মধ্যে সর্বাধিক ব্যবহৃত মাতৃভাষা হিসেবে বাংলার অবস্থান পঞ্চম এবং শুধুমাত্র কথ্য ভাষা হিসেবে অবস্থান ষষ্ঠ।
পড়ুন: কীভাবে এল বাংলা ক্যালেন্ডার: দিনলিপি গণনার ইতিবৃত্ত
২ বছর আগে
বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি প্রধানমন্ত্রীর
বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমাদের চেষ্টা থাকবে বাংলা ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতিকে আরও বেশি করে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ছড়িয়ে দেয়া এবং আমি বিশ্বাস করি আমরা তাতে সফল হব।’
রবিবার বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ২৪ বিশিষ্ট নাগরিকের মাঝে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার একুশে পদক-২০২২ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দেন। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে পদক হস্তান্তর করেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার তৃণমূল ও বঞ্চিত মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আমরা অর্থনৈতিক মুক্তি পেতে চাই।’
তিনি বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এবং সমৃদ্ধির পথে যাত্রা অব্যাহত রাখবে।
পড়ুন: দেশের প্রাণবন্ত সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ছড়িয়ে দিন: শেখ হাসিনা
ভাষা আন্দোলন থেকে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বহু মানুষের আত্মত্যাগে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সম্ভব হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতা কোনো ব্যক্তির আকস্মিক ঘোষণার মাধ্যমে আসেনি, স্বাধীনতা এসেছে সংগ্রামের যাত্রার মধ্য দিয়ে এবং সেই সংগ্রাম জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুরু করেছিলেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাঁর (জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান) অবদানে স্বাধীন বাংলাদেশ এবং এ দেশ একটি জাতির দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।’
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর তার অবদান মুছে ফেলার প্রচেষ্টার কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে তার অবদান সবচেয়ে বেশি মুছে ফেলা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, সত্য ও ইতিহাস কেউ মুছে দিতে পারেনি।’
পুরস্কারপ্রাপ্তদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নতুন প্রজন্ম তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে দেশের কল্যাণে আত্মনিয়োগ করতে এগিয়ে আসবে।
সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ আবুল মনসুর।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন।
পড়ুন: কোস্টগার্ডে উন্নত প্রযুক্তির জাহাজ অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে: প্রধানমন্ত্রী
উন্নয়নের জন্য শান্তিপূর্ণ পরিবেশ অপরিহার্য: শেখ হাসিনা
২ বছর আগে
বাংলা ভাষার অবস্থান ভালো জায়গায় নেই: জাফর ইকবাল
শাবি, ২৭ সেপ্টেম্বর (ইউএনবি)- পৃথিবীতে প্রতি পনের দিনে একটা করে ভাষা মারা যাচ্ছে উল্লেখ করে বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক, লেখক ও অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেছেন, বাংলা ভাষা অচিরেই মারা যাবে তার সম্ভাবনা নেই, তবে বাংলা ভাষার অবস্থান ভালো জায়গায় নেই।
৫ বছর আগে