তীব্র গরম
অতিরিক্ত দাবদাহে যেভাবে ঘরের ছাদ ঠান্ডা রাখবেন
গ্রীষ্মকালসহ অন্যান্য উষ্ণ ঋতুগুলোতে বহুতল আবাসিক এলাকায় সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকে একদম উপরের তলার বাসিন্দারা। রোদের প্রখর তাপ সরাসরি ঘরের ছাদে পড়ায় তাপ জমে ঘরের ভেতরের তাপমাত্রা অস্বস্তিকরভাবে বেড়ে যায়। বৈশ্বিক উষ্ণতার ধারাবাহিকতায় চলমান গরমের অবিরাম প্রতাপ থেকে ছাদকে রক্ষা করা এখন আর ঐচ্ছিক বিষয় নেই। বাইরের তাপ থেকে গা বাঁচিয়ে ঘরের ভেতর থাকার জন্য ছাদকে ঠান্ডা রাখা এখন আবশ্যিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে চলুন, তীব্র গরম আবহাওয়াতে ঘরের ছাদ ঠান্ডা রাখার উপায়গুলো জেনে নেওয়া যাক।
গ্রীষ্ম ও অন্যান্য উষ্ণ মৌসুমে ঘরের ছাদ ঠান্ডা রাখার ১০টি টিপ্স
ছায়াদানকারী উঁচু দেওয়াল বা নেট স্থাপন
খুব ঘন উপাদান সম্পন্ন কংক্রিটে তৈরি হওয়ায় ছাদের স্ল্যাবগুলো খুব দীর্ঘ সময়ের জন্য তাপ ধরে রাখে। এই তাপ পরিবাহিত হয় নিচের ফ্ল্যাটগুলোর প্রতিটি কক্ষে। তাই স্ল্যাব পর্যন্ত যেন সূর্যালোক পৌঁছাতে না পারে, তার জন্য উৎকৃষ্ট উপায় হচ্ছে ছাদে ছায়ার ব্যবস্থা করা। এর ফলে নিদেনপক্ষে ছায়াযুক্ত জায়গাগুলো আশেপাশের স্ল্যাবগুলো থেকে অনেক কম গরম থাকে।
এই ছায়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে ছাদের সীমানার ধার ঘেষে উঁচু দেয়াল বা নেটের মাধ্যমে। এই নেট বা দেওয়াল বিভিন্ন নকশা দিয়ে আকর্ষণীয় করা যায়। সুতরাং ছায়াদানকারী এই স্থাপনা শুধু তাপ নিয়ন্ত্রণই করে না, সেই সঙ্গে দালানের সৌন্দর্য্যও বৃদ্ধি করে। তবে এখানে খেয়াল দেওয়াল বা নেটে হালকা রঙ দেওয়া হচ্ছে কি না সেদিকে দৃষ্টি রাখা উচিৎ।
আরও পড়ুন: তীব্র গরমে পানিশূন্যতা প্রতিরোধে উপকারী শাকসবজি
ছাদে বাগান করা
বিভিন্ন ধরনের ফুল-ফল ও শাক-সবজির গাছ দিয়ে সাজানো বাগানে তৈরি হয় সবুজ ছাদ। এই সবুজ ছাদ নিচের ফ্ল্যাটকে সরাসরি সূর্যের আলো থেকে ছায়া দেয়। উদ্ভিদগুলো নিজেদের খাবার প্রক্রিয়ার কাজে সূর্যের আলো শুষে নেওয়ার কারণে ছাদের পৃষ্ঠসহ আশেপাশের বায়ুর তাপমাত্রা উভয়ই হ্রাস পায়। এতে করে ছাদের আর্দ্রতা অপসারিত হয়ে ছাদ ও নিজের ঘরের পরিবেশ সহনীয় অবস্থায় থাকে।
৬ মাস আগে
অতিরিক্ত গরমে স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য রক্ষার উপায়
বর্তমানে গরমের তীব্রতা অসহনীয় করে তুলেছে মানুষের জীবন। বিশেষ করে স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের জন্য এই প্রতিকুল অবস্থা আশঙ্কাজনক। অত্যধিক ঘামের সঙ্গে শরীর থেকে প্রয়োজনীয় তরল বেরিয়ে যাওয়ার কারণে নানা ধরণের স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি হয়। আর এই ঝুঁকির মধ্যে সবচেয়ে বেশি রয়েছে এই কম বয়সী শিক্ষার্থীরাই। তাই উষ্ণ আবহাওয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য প্রয়োজন যথাযথ পদক্ষেপের। উপসর্গ দেখা দেওয়ার আগেই সঠিক ব্যবস্থা নেওয়া গেলে স্বাস্থ্যের ক্ষতি অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব হতে পারে। তাই চলুন, গরমের তীব্রতা থেকে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় করণীয়গুলো জেনে নেওয়া যাক।
তীব্র গরমে স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের সুস্থ রাখার ১০টি উপায়
দিনের তীব্র গরমের সময় সূর্যালোক এড়িয়ে চলা
সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত অতিবেগুনি রশ্মি সবচেয়ে বেশি তীব্র থাকে। আর দিনের এই সময়টাতেই শিক্ষার্থীরা সাধারণত ক্লাস এবং স্কুল-পরবর্তী খেলাধুলার জন্য ঘরের বাইরে থাকে। তাই এই সময়টাতে শিক্ষার্থীদের বিচরণের জায়গাগুলোতে সর্বাত্মকভাবে ছায়ার ব্যবস্থা করতে হবে। গাছ-গাছালি ঘেরা প্রাকৃতিক ছায়া শোভিত স্থান সর্বোত্তম। তবে এর পাশাপাশি ছাউনির ব্যবস্থা করা যেতে পারে। খেলাধুলার সময় ছাত্রছাত্রীরা যেন উন্মুক্ত জায়গায় চলে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
সূর্যালোকের সংস্পর্শ এড়ানোর জন্য আরেকটি উত্তম উপায় হলো ছাত্রছাত্রীদের ইনডোর গেমের প্রতি আকৃষ্ট করা। এতে করে তাদের বিনোদনও হবে, একই সঙ্গে তাদের শরীরও ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মি থেকে বাঁচবে। এটি ছুটির দিনে ঘরের বাইরে যাওয়ার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
আরও পড়ুন: অটিজম কী? অটিজম সচেতনতা ও সহমর্মিতা কেন জরুরি?
গরমের জন্য আরামদায়ক পোশাক পরিধান করা
শিক্ষার্থীদের স্কুলে আসা-যাওয়াসহ বিভিন্ন উপলক্ষে ঘরের বাইরে থাকার সময়ে হাল্কা বুনন, হাল্কা ও এক রঙের কাপড় পড়তে হবে।
হাতাকাটা শার্ট বা গেঞ্জি এবং হাফ প্যান্ট বা শর্টস এক্ষেত্রে উপযুক্ত মনে হতে পারে। কিন্তু কাপড়ের উপাদান এবং শিক্ষার্থীদের শরীরের কতটা অংশ উন্মুক্ত থাকছে সেদিকে কড়া নজর দেওয়া আবশ্যক।
এছাড়া হাতাকাটা বা শর্টসের ক্ষেত্রে কাপড় যদি অনেক মোটা বা ভারী হয়, তাহলে তা আরও গরম করে তুলতে পারে। উপরন্তু, রোদের সংস্পর্শে উন্মুক্ত হাত-পায়ের চামড়া পুড়ে যেতে পারে। তাই শরীর যতটা ঢেকে রাখা যায় ততই ভালো। অর্থাৎ লম্বা হাতা এবং লম্বা প্যান্ট বেছে নেওয়া উত্তম। আর কাপড় ঢিলেঢালা ফিটিং ও হাল্কা রঙের হলে তা বাতাস চলাচলের জন্য উপযোগী হয়।
আরও পড়ুন: নারীদের চেয়ে পুরুষদের আত্মহত্যার হার বেশি যে কারণে
সানস্ক্রিন ব্যবহার করা
সকালে স্কুলে যাওয়ার অন্তত ৩০ মিনিট আগে বাচ্চাদের শরীরের উন্মুক্ত অংশে সানস্ক্রিন লাগিয়ে দিতে হবে। কিশোর বয়সীদের ক্ষেত্রে বাবা-মায়েদের তাদের সন্তানকে সানস্ক্রিন ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। ছোট থেকে অভ্যাস করানো হলে কিশোর বয়সীরা নিজেরাই সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে শিখে যাবে। এই অভ্যাস কার্যকর করার জন্য প্রতিবার ঘর্মাক্ত হওয়ার দুই ঘণ্টা পরপর সানস্ক্রিন প্রয়োগ করা যেতে পারে। এছাড়া স্কুলের খেলাধুলার পর বাচ্চাদের সানস্ক্রিন প্রয়োগ করতে মনে করিয়ে দেওয়া যেতে পারে।
একটি গল্ফ বলের মাপের সমান বা প্রায় ২৮ গ্রাম সানস্ক্রিন পুরো শরীরে লাগাতে হবে। এক্ষেত্রে শরীরের যে অংশগুলো সাধারণত এড়িয়ে যায় সেগুলোতে বেশি নজর দেওয়া উচিত। যেমন- কানের পিছনে, ঘাড়ে, হাত ও পায়ের উল্টো পিঠের অংশগুলো।
ছাতা ব্যবহার করা
স্কুলে যাওয়া ও আসা নিয়ে প্রতিদিনই বাচ্চাদের একটি উল্লেখযোগ্য সময় রোদের আলোয় কাটাতে হয়। এই সময়টিতে শুধুমাত্র সানস্ক্রিনের উপর নির্ভর করাটা যথেষ্ট নয়। সূর্যালোক প্রতিরক্ষামূলক পোশাক পরিধান ছাড়াও এ সময়ে আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ছাতা ব্যবহার করা। খুব নান্দনিক এবং রঙচঙা নয়, এ ক্ষেত্রে খেয়াল দিতে হবে ছাতাটি রোদ থেকে কতটা ছায়া দিতে পারছে তার উপর। মুষলধারে বৃষ্টি থেকে মাথা বাঁচাতে যেভাবে ছাতা ব্যবহার করা হয়, এক্ষেত্রেও একই কাজ করা উচিত। আর ছোট ছোট শিক্ষার্থীদের এই অভ্যাস তৈরিতে আদর্শ হতে পারে পিতামাতা ও পরিবারের অন্যান্য প্রাপ্তবয়স্করা।
আরও পড়ুন: সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক: কারণ, লক্ষণ ও প্রতিরোধ
ঘরকে ঠান্ডা রাখা
গ্রীষ্মের তাপপ্রবাহ থেকে বাঁচতে ঘরে থাকতে হলে সেই ঘরকেও রাখতে হবে তাপমুক্ত। কেননা বাইরে থেকে রোদের আলো ঘরে ঢুকে অথবা ঘরের দেয়াল রোদ শুষে নিয়ে ঘরকে উত্তপ্ত করে তোলে। এ অবস্থা থেকে শতভাগ মুক্তি না মিললেও সম্ভাব্য কার্যকর উপায়গুলো অবলম্বন করা যেতে পারে।
যেমন হলুদ এবং হ্যালোজেন বাল্বগুলো প্রচুর তাপ উৎপন্ন করে। তাই এগুলোর বদলে ব্যবহার করতে হবে এলইডি লাইট, যা ঘর ঠান্ডাও রাখে আবার বৈদ্যুতিক খরচের দিক থেকেও বেশ সাশ্রয়ী।
দিনের উত্তপ্ত সময়গুলোতে জানালার পর্দা টেনে দিতে হবে। জানালা বন্ধ রাখা হলে সূর্যালোকের ঘরের ভেতর ঢুকতে আরও একধাপ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হবে। ঠিক সন্ধ্যার দিকে পর্দা সরিয়ে জানালা খুলে দিলে বাইরের ঠান্ডা বাতাস ভেতরে প্রবেশ করবে। এতে করে দিনের বেলা বাইরের গরম বাতাস ভেতরে আসবে না। রাতভর ঘরের ভেতর জমা হওয়া ঠান্ডা বাতাস দিনের বেলা বাইরে যেতে পারবে না।
আরও পড়ুন: মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ: কারণ, লক্ষণ ও প্রতিরোধ
৬ মাস আগে
তীব্র গরমে পানিশূন্যতা প্রতিরোধে উপকারী শাকসবজি
গ্রীষ্মের প্রচণ্ড দাবদাহে মাত্রাতিরিক্ত ঘামের কারণে শরীর আশঙ্কাজনক হারে পানি হারাতে শুরু করে। পরিণতিতে দেখা দেয় পানিশূন্যতা, যার দীর্ঘস্থায়ীত্ব স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। মানবদেহের এই ভারসাম্যহীনতা মাথা ঘোরা, ক্লান্তি ও শুষ্ক মুখমণ্ডলের মতো উপসর্গের মাধ্যমে প্রকাশ পেতে শুরু করে। এই অসহনীয় খরতাপের সময়টাকে মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে উচ্চ পানীয় উপাদান সমৃদ্ধ শাকসবজি। এই খাবারগুলো শরীরের হারানো পানি পুনরায় ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি দেহের রোগমুক্তিতেও সাহায্য করে। চলুন, তীব্র গরমে পানিশূন্যতা দূর করতে সেই শাকসবজিগুলোর ব্যাপারে জেনে নেওয়া যাক।
যে সবজিগুলো তীব্র গরমে শরীরে পানির ঘাটতি মেটাতে সক্ষম
শসা
প্রায় ৯৫ শতাংশ পানিতে পরিপূর্ণ শসা গরমের জন্য উপযোগী সবজিগুলোর মধ্যে অন্যতম। এছাড়াও এতে থাকা ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য এড়াতে সহায়তা করে। শসার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে বিটা ক্যারোটিন। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলো শরীরের ফ্রি র্যাডিকেলের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। ফ্রি র্যাডিকেল হলো জোড়াহীন ইলেকট্রন, যা কোষকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং বিভিন্ন ধরনের রোগের কারণ হতে পারে।
রোদের তীব্র রশ্মির কারণে ত্বকে রোদে পোড়া ব্যথা, ফোলাভাব এবং ত্বকের কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই অবস্থা থেকে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থায় সাহায্য করতে পারে শসা। চোখের নিচে এক বা দুই টুকরো শসা রাখলে চোখের কালো দাগ ও ফোলাভাব কমে আসে।
আরও পড়ুন: চিনির কিছু স্বাস্থ্যকর প্রাকৃতিক বিকল্প
টমেটো
বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও পটাশিয়ামের আধার টমেটোতে পানির পরিমাণ প্রায় ৯৫ শতাংশ। লাইকোপিন নামক পদার্থ টমেটোর উজ্জ্বল লাল রঙের কারণ। শুধু তাই নয়, এই উপাদানের মধ্যে রয়েছে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সৃষ্টিকারী বৈশিষ্ট্য। তাই এই ফলের রয়েছে মানবদেহের কোষকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করার ক্ষমতা।
এই একই কারণে টমেটো ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী। লাইকোপিনের পাশাপাশি অন্যান্য উদ্ভিদ যৌগ রোদে পোড়া থেকে রক্ষার কাজে অংশ নেয়।
স্মার্টফোন এবং কম্পিউটারের মতো ডিজিটাল ডিভাইস থেকে এক ধরনের নীল আলো নির্গত হয়, যা চোখের জন্য ক্ষতিকর। টমেটোতে থাকা লুটেইন এবং জিক্সানথিন নামক পদার্থ এই নীল আলোর বিরুদ্ধে চোখের সুরক্ষায় কাজে লাগে।
উপরন্তু, এগুলো চোখের ক্লান্তি এবং চোখের উপর চাপ জনিত কারণে মাথাব্যথা উপশমে সাহায্য করতে পারে।
আরও পড়ুন: গরুর দুধের বিকল্প হিসেবে খেতে পারেন যেসব স্বাস্থ্যসম্মত খাবার
পালং শাক
তাজা, হিমায়িত, বাষ্প বা দ্রুত সিদ্ধ যে কোনো অবস্থায়ই পালং শাক বেশ পুষ্টিকর একটি খাবার। কাঁচা পালং শাকে রয়েছে ৯১ শতাংশ পানি, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন কে, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, আয়রন ও ফোলেট। এই শাকে থাকা লুটিন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বার্ধক্যজনিত কারণে চোখের রোগ ও ছানি পড়া থেকে রক্ষা করে।
এছাড়া লুটেইন চোখের লেন্সের উপর সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির নেতিবাচক প্রভাব প্রতিরোধ করতে সক্ষম।
শরীরের ত্বকসহ নানা ধরনের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের টিস্যু বৃদ্ধির জন্য ভিটামিন এ অপরিহার্য, যা পালং শাকের অন্যতম উপাদান। শুধু তাই নয়, ভিটামিন এ ত্বকের পানিশূন্যতা দূর করতেও সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। এর ফলে মুখে সূক্ষ্ম রেখা এবং বলিরেখা কমে যায়।
আরও পড়ুন: তীব্র গরমে হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচতে করণীয়
মূলা
মাঝারি পরিমাণ ভিটামিন সি সম্পন্ন কাঁচা মূলায় পানির অংশ ৯৫ শতাংশ। তবে এর পাতায় থাকে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, অ্যাসকরবিক অ্যাসিড। শিকড়ের চেয়ে পাতায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের পরিমাণ বেশি। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলোর মধ্যে রয়েছে ক্যাটিচিন, পাইরোগালল, ভ্যানিলিক অ্যাসিড এবং অন্যান্য ফেনোলিক যৌগ। এগুলো সম্মিলিতভাবে ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে শরীরকে রীতিমতো একটি প্রতিরক্ষা দূর্গে পরিণত করে।
এছাড়াও মূলায় রয়েছে কিডনি বিশোধনের ক্ষমতা। এটি পাকস্থলির বিভিন্ন এনজাইমকে সক্রিয়করণে সাহায্য করে। এই এনজাইমগুলো নানা ধরনের বিষক্রিয়া থেকে কিডনিসহ আভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাকে মুক্ত রাখে।
আরও পড়ুন: নিপাহ ভাইরাস সতর্কতা: কাঁচা খেজুরের রস খাওয়ার ঝুঁকি
৬ মাস আগে
তীব্র গরমে বন্দরে পচতে শুরু করেছে ৩৭০ টন আলু
তীব্র গরমে খালাসের অপেক্ষায় থাকা ভারত থেকে আমদানি করা ৩৭০ টন আলু বেনাপোল বন্দরে পচতে শুরু করেছে।
এদিকে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের স্থানীয় প্রতিনিধি জানিয়েছেন, এসব আলু রংপুরের একটি বেভারেজ কোম্পানিতে নেওয়া হবে।
অন্যদিকে, দ্রুত খালাস না হলে এসব আলু খাওয়ার অযোগ্য হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।
আরও পড়ুন: ভারত থেকে দুই দিনে ৪০০ টন আলু আমদানি
তবে আমদানি করা এ আলু খোলা বাজারে বিক্রি হবে না। চিপস তৈরিতে এ আলু ব্যবহার করা হবে।
বন্দর সূত্রে জানা যায়, গত ২১ এপ্রিল রাতে ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে ১৬ ট্রাকে ৩৭০ মেট্রিক টন আলু আমদানি হয়। তবে আমদানি করা আলু ২০০ কিলোমিটার দূরে থেকে লোড করে বেনাপোল বন্দরে পৌঁছাতে ৬ দিন লেগে যায়। বেনাপোল বন্দর থেকে ৩ দিনেও আলু খালাস না হওয়ায় তীব্র গরমে ট্রাকে থাকা আলু পচে রস পড়তে দেখা গেছে।
বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আলুর আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান রংপুরের ইন্টিগ্রেটেড ফুড অ্যান্ড বেভারেজ এবং রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ভারতের পেপসিকো ইন্ডিয়া হোল্ডিংস।
আমদানিকারকের স্থানীয় সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ট্রান্সমেরিন লজিস্টিক লিমিটেডের প্রতিনিধি মাসুম বিল্লা বলেন, ১৬ ট্রাকে ৩৭০ মেট্রিক টন আলু আমদানি করা হয় ভারত থেকে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র হাতে না পাওয়ায় এখনও বন্দর থেকে খালাস নিতে পারেনি। কাগজপত্র এলেই খালাস করা হবে আমদানি এ আলু। বর্তমানে ভারতীয় ট্রাক থেকে এ আলু বাংলাদেশি ট্রাকে লোড করে রাখা হয়েছে।
আলুবাহী ট্রাক চালক শাহাদৎ হোসেন জানান, তারা ভারতীয় ট্রাক থেকে আলু খালাস করে রংপুরে নিয়ে যাবেন। কিন্তু খালাস না হওয়ায় গরমে বন্দরেই ট্রাকে আলু পচতে শুরু করেছে। দ্রুত খালাস না হলে এগুলো আরও নষ্ট হবে।
এ বিষয়ে বেনাপোল স্থলবন্দরের পরিচালক রেজাউল করিম বলেন, বেনাপোল বন্দর দিয়ে ১৬টি ট্রাকে ৩৭০ মেট্রিক টন আলু আমদানি হয়েছে। আলুর চালানটি এখনও বন্দরে রয়েছে। দ্রুত ছাড়করণের জন্য আমদানিকারকদের সহযোগিতা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: ভারত থেকে ৪ চালানে ১০০০ মেট্রিক টন আলু আমদানি
উচ্চ ফলনশীল নতুন জাতের আলু চাষের আহ্বান কৃষিমন্ত্রীর
৬ মাস আগে
চট্টগ্রামে হিটস্ট্রোকে যুবকের মৃত্যু
চট্টগ্রামে তীব্র গরমে চলন্ত টেম্পুতে অসুস্থ হয়ে (হিটস্ট্রোকে) এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে।
সোমবার দুপুরে নগরীর শ্যামলী বাস কাউন্টারের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
আরও পড়ুন: চাঁদপুরে হিটস্ট্রোকে নারীর মৃত্যু
নিহত মো. শুকুর আলী (২৫) লক্ষীপুর জেলার দালাল বাজারের হাজীবাড়ির মৃত মানিক মিস্ত্রির ছেলে। তিনি সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাট জলিল গেট সিডিএ এলাকায় থাকতেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, শুকুর আলী টেম্পুতে করে পাহাড়তলী বা অলঙ্কার মোড় থেকে সিটি গেটের দিকে কোথাও যাচ্ছিলেন। চলন্ত টেম্পুতে গরমে হাসফাঁস করছিলেন। এ সময় টেম্পু থামিয়ে যাত্রীরা তাকে ধরাধরি করে একটি বাস কাউন্টারের সামনে শুইয়ে দিলে কিছুক্ষণের মধ্যেই মারা যান তিনি।
পরে পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়।
পাহাড়তলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ কেপায়েত উল্লাহ বলেন, কর্ণেলহাট এলাকায় এক যাত্রীর মৃত্যু খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসার পর তার মৃত্যুর কারণ জানা যাবে।
আরও পড়ুন: তাপপ্রবাহ: হিটস্ট্রোকে আরও ৩ জনের মৃত্যু
খুলনায় হিটস্ট্রোকে ৭ম শ্রেণির ছাত্রের মৃত্যু, অসুস্থ ৫
৭ মাস আগে
মেহেরপুরে তীব্র গরম, তাপমাত্রা পৌঁছাতে পারে ৪০ ডিগ্রিতে
মেহেরপুরে প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের মধ্যে বৈশাখের আগমন। ভয়াবহ তাপপ্রবাহে অস্থির হয়ে উঠেছে জনজীবন। কয়েকদিন ধরে প্রচণ্ড রোদ আর ভ্যাপসা গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা মানুষ ও পশু-পাখিদের।
বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সূর্য এমন দাপট দেখাচ্ছে যে, মানুষের পাশাপাশি ভুগছে প্রাণপ্রকৃতিও। বৈরী আবহাওয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়ছেন বয়স্ক ব্যক্তি ও শিশুরা।
আরও পড়ুন: চুয়াডাঙ্গায় তীব্র গরমে জলাশয়ের মাছ মরে যাচ্ছে
এক সপ্তাহ আগে থেকে শুরু হয়েছে এই তাপপ্রবাহ। জীবন-জীবিকার প্রয়োজন ছাড়া বাড়ি থেকে বের হচ্ছে না কোনো মানুষ।
এদিকে তাপমাত্রার ওঠানামায় অসুস্থ হয়ে পড়ছেন প্রায় সব বয়সী মানুষ। ডায়রিয়ায় বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। এ অবস্থায় তরল জাতীয় খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
শনিবার (১৩ এপ্রিল) এই জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও এসময় বাতাসের আর্দ্রতার পরিমাণ ছিল ২০ শতাংশ। এর আগে গত ১ এপ্রিল এ জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
রবিবার বিকাল ৩টায় চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, চলতি সপ্তাহে চুয়াডাঙ্গ-মেহেরপুর অঞ্চলে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। রবিবার দুপুর ১২টায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৩৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং এসময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৩২ শতাংশ এবং বিকাল ৩টায় চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৮ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ২১ শতাংশ।
আবহাওয়ার সতর্ক বার্তায় বলা হয়েছে, গত ১০ এপ্রিল থেকে পরবর্তী সাতদিন মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে এবং দিনে ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান বলেন, মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ এই এলাকায় বয়ে চলেছে। আরও বেশ কিছু দিন এই তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে।
তিনি আরও বলেন, বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ কম থাকায় গরম কম অনুভূত হচ্ছে। তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠতে পারে।
আরও পড়ুন: তাপ, দাবানল ও বন্যা গ্রীষ্মকে ‘তীব্র গরম’ করে তুলেছে
তীব্র গরম ও লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ নারায়ণগঞ্জের জনজীবন
৭ মাস আগে
তাপ, দাবানল ও বন্যা গ্রীষ্মকে ‘তীব্র গরম’ করে তুলেছে
বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডব্লিউএমও) বলেছে, তাপ, দাবানল ও বন্যা ২০২৩ সালের গ্রীষ্মকে ‘তীব্র গরম’ করে তুলেছে, যার ফলে মানুষের স্বাস্থ্য ও পরিবেশের বড় ধরনের ক্ষতি হবে।
শুক্রবার ডব্লিউএমও'র মুখপাত্র ক্লেয়ার নুলিস জেনেভায় সংবাদ সম্মেলনে বলেন, তীব্র গরম ও বিধ্বংসী বৃষ্টিপাতসহ বিপজ্জনক আবহাওয়া বিশ্বের বড় অংশকে প্রভাবিত করেছে।
তিনি বলেন, জুলাই মাসে বিশ্বজুড়ে অনেক স্থানে তাপমাত্রার রেকর্ড ভেঙে গেছে এবং আগস্টের শুরুতে দক্ষিণ আমেরিকার কিছু অংশে শীতকালীন তাপপ্রবাহ দেখা দিয়েছে।
নুলিস জানায়, চলতি সপ্তাহের শুরুতে ফ্রান্স, গ্রিস, ইতালি, স্পেন, আলজেরিয়া ও তিউনিসিয়ার মতো অনেক দেশেই দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ও রাতারাতি সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড গড়েছে। এ সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বড় অংশও ব্যাপক তাপপ্রবাহের কবলে পড়েছে।
ডব্লিউএমও'র তাপবিষয়ক উপদেষ্টা জন নায়ারন বলেন, 'আমাদের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার বাইরেও মনোযোগ বাড়াতে হবে, কারণ স্বাস্থ্য ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোর জন্য ন্যূনতম তাপমাত্রা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’
আরও পড়ুন: ৫০ বছরে চরম আবহাওয়ায় ২ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু ও ৪ ট্রিলিয়ন ডলার আর্থিক ক্ষতি: ডব্লিউএমও
জন নায়ারন আরও উল্লেখ করেছেন, তাপপ্রবাহ সবচেয়ে মারাত্মক প্রাকৃতিক বিপদগুলোর মধ্যে একটি, যেখানে প্রতি বছর তাপজনিত কারণে হাজার হাজার লোক মারা যায়, তাপপ্রবাহের সম্পূর্ণ প্রভাব বেশিরভাগ সপ্তাহ বা মাস পরেও জানা যায় না।
ডব্লিউএমও'র মতে, আগামী দিন ও সপ্তাহগুলোতে ভূমধ্যসাগরের সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা অত্যন্ত বেশি হতে পারে, কিছু অংশে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যাবে এবং পশ্চিম ভূমধ্যসাগরের একটি বড় অংশে গড়ের চেয়ে চার ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি হবে।
জন নায়ারন আরও বলেন, সামুদ্রিক তাপপ্রবাহের প্রভাবগুলোর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির অভিবাসন ও বিলুপ্তি, আক্রমণাত্মক প্রজাতির আগমন যা মৎস্য ও জলজ প্রাণীর উপর প্রভাব ফেলবে।
সংবাদ সম্মেলনে ডব্লিউএমও'র মুখপাত্র আরও বলেন, কানাডায় দাবানলের সবচেয়ে ভয়াবহ মৌসুম চলছে।
কানাডায় রেকর্ড ভাঙা দাবানলে বড় বড় বনাঞ্চল পুড়ে যাচ্ছে। ২৪ জুলাই পর্যন্ত ৬৫০টিরও বেশি দাবানল নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিল।
চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে ডব্লিউএমও জানায়, দাবানলের কারণে গ্রিসের রোডস, এভিয়া ও করফু দ্বীপের কয়েকশ বাসিন্দা ও পর্যটকদের সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে। এই দাবানলের নির্গমন রেকর্ড মাত্রায় পৌঁছেছে।
ভারী বৃষ্টিপাত ও বন্যায় বিশ্বের বিভিন্ন অংশে মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি ঘটেছে।
ডব্লিউএমও'র হাইড্রোলজি, ওয়াটার অ্যান্ড ক্রায়োস্ফিয়ারের পরিচালক স্টেফান উলেনব্রুক বলেন, ‘যেহেতু গ্রহটি উষ্ণ দিন দিন উষ্ণ হচ্ছে তাই আমরা আরও তীব্র, আরও ঘন ঘন, আরও বেশি বৃষ্টিপাত দেখতে পাব, যার ফলে আরও মারাত্মক বন্যা হবে।’
ডব্লিউএমও'র সেক্রেটারি জেনারেল পেটেরি তালাস বলেন, ‘ভয়াবহ আবহাওয়া- বিশেষ করে উষ্ণ জলবায়ুর কারণে ক্রমবর্ধমান অঘটন ঘটছে, এতে মানব স্বাস্থ্য, বাস্তুতন্ত্র, অর্থনীতি, কৃষি, শক্তি ও জল সরবরাহের উপর একটি বড় প্রভাব ফেলছে।’
তালাস বলেন, ‘যত দ্রুত ও কঠোরভাবে সম্ভব গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমানোর উপর গুরুত্বারোপ করতে হবে।’
আরও পড়ুন: সিলেটে ভারী বৃষ্টিপাতে টিলা ধসে একই পরিবারের নিহত ৪
১ বছর আগে
চুয়াডাঙ্গায় তীব্র গরমে জলাশয়ের মাছ মরে যাচ্ছে
চুয়াডাঙ্গা জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তীব্র দাবদাহ। বৃষ্টির না হওয়ায় শুকিয়ে যাচ্ছে খাল, বিল, পুকুর। ফলে বাড়ছে পানির তাপমাত্রা। এই তীব্র গরমে চুয়াডাঙ্গার জলাশয়ের মাছ মরে যাচ্ছে। এ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন মাছচাষিরা।
কই, জিয়লসহ সব ধরনের মাছের রেণু, পোনা মরে যাওয়ার কারণে মাছচাষিদের মধ্যে আহাজারি শুরু হয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে মাছ চাষ ব্যাহত হবে। মাছের সংকট দেখা দেবে।
মাছের আড়তের পাইকারি বিক্রেতারাও হতাশ। কারণ পর্যাপ্ত মাছ তারা আমদানি করতে পারছেন না। আবার যাও পারছেন, সেই মাছ অধিকাংশ গরমে স্ট্রোক করে মরা। এই অবস্থার জন্য তীব্র লোডশেডিংকে দায়ি করছেন ব্যবসায়ীরা।
এঅবস্থায় পুকুরে কচুরিপানা দিয়ে পানি ঠাণ্ডা রাখার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে চুয়াডাঙ্গায় বৃষ্টিপাত হয়নি। তাপমাত্রা থাকছে ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। আর মাছ চাষের জন্য ২৫ থেকে ৩২ ডিগ্রি আদর্শ তাপমাত্রা। তাপমাত্রা বাড়ার কারণে মাছ মারা যাচ্ছে।
সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন পুকুরে গেলে দেখা যায়, মাছ চাষিরা তাদের মাছ বাঁচানোর পানি সেচসহ নানাভাবে আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। তারপরও অতিরিক্ত তাপে মরে যাচ্ছে মাছ।
আরও পড়ুন: সুন্দরবনে ১০০ দিন ও বঙ্গোপসাগরে ৬৫ দিন মাছ ধরা নিষিদ্ধ
আলমডাঙ্গা উপজেলার চিৎলা গ্রামের হালদারপাড়ার মদন হালদার জানান, এই দুই দিনে গরমের কারণে আমাদের প্রায় ৩শ’ মণ মাছ মরে গিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এবার গরমেই এই দুইদিনেই আমাদের ১৫-২০ লাখ টাকা লস।
জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার ফুলবগাদী গ্রামের জব্বার আলী ফেরি করে গ্রামে গ্রামে মাছ বিক্রি করেন। তিনি চুয়াডাঙ্গা জেলার সব থেকে বড় পাইকারি মাছের বাজার শহরের মাছপট্টিতে মাছ পাইকারি দরে কিনতে এসেছেন।
জব্বার আলী বলেন, ‘মাছ মইরে যাইছে, মাছ পাওয়া যাইছে না। গরমে পুকুরের পানির অবস্থা ভালো না, পানি নেই। আবার দাম বেশি।’
আমিরুল নামের একজনের সঙ্গে চুয়াডাঙ্গা মাছপট্টিতে কথা হয়।
তিনি বলেন, ‘পানি নেই, পানি হলি মাছের দাম কম হবে। এতি করে চাষিরাও বাচবে, যারা ফোড়ে তারাও বাঁচবে। মিয়ারাও বাঁচবে। তাড়াতাড়ি পানি হোক।’
মাছচাষি মো. আমানউল্লাহ বলেন, ‘আমার দুইটি পুকুর রয়েছে। একটা এক বিঘার। আরেকটা ৭ বিঘার খননের কাজ চলছে। কিন্তু এ বছর পুকুরের মাছগুলো বাচিঁয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। স্যালোমেশিন দিয়ে পুকুরে পানি দিচ্ছি। যে পাওয়ার পাম্প মেশিন কিনেছি, তাতে ঠিকঠাক পানি উঠছে না। গরমে মাছ ছটফট করছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সবগুলো পুকুরের পানিই তলানিতে নেমেছে। প্রচণ্ড গরমে মাছের রোগ দেখা দিচ্ছে। আমরা চুনসহ শ্যালো চালিয়ে পুকুরে পানির উচ্চতা বাড়াচ্ছি। সময় না হলেও কিছু মাছ তুলে বিক্রিও করে দিয়েছি।
চুয়াডাঙ্গা জেলা মৎস্য কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এ জেলায় প্রায় ১১ হাজারের বেশি পুকুর রয়েছে। যার জলকরের আয়তন প্রায় ২৭ হাজার হেক্টর জমি। আর পুরো জেলায় ৬৫ হাজার হেক্টরের বেশি জলকর রয়েছে।
এছাড়া এ জেলায় ১২ নদী ও ১০টি হাওড় আছে। যেখানে চাষ ছাড়াও প্রাকৃতিকভাবেই মাছ পাওয়া যায়।
চুয়াডাঙ্গা জেলায় ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে বার্ষিক উৎপাদন ২৩ হাজার ৭৪১ মেট্রিক টন লক্ষ মাত্রা রয়েছে।
তবে এবার গরমের কারণে উৎপাদন কম হতে পারে। সেই ক্ষেত্রে লক্ষযমাত্রা অর্জিত না হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে ধরলা নদীতে মিলল সাকার মাছ
১ বছর আগে
তীব্র গরমে বেড়েছে খুলনার দাকোপের তরমুজের চাহিদা
তীব্র তাপদাহের কারণে হঠাৎ করে বেড়ে গিয়েছে খুলনার দাকোপের তরমুজের চাহিদা। আর তাই দামও বেড়ে গেছে। শেষ সময়ে এসে তরমুজ বিক্রি করে লাভের মুখ দেখতে শুরু করেছে খুলনার কৃষকেরা।
জানা যায়, অন্যান্য জেলার তরমুজ এর আগেই বিক্রি হয়ে গেছে। এখন দাকোপ উপজেলার তরমুজই ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে। গরমে চাহিদা বাড়ায় তাই সবাই তাকিয়ে আছে দাকোপের তরমুজের দিকে। পাইকারি ব্যবসায়ীরা অনেকেই দাকোপে গিয়ে তরমুজ কিনে আনছেন।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, এ বছর খুলনায় ১২ হাজার ২২৫ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে। এর মধ্যে দাকোপ উপজেলাতেই চাষ হয়েছে ছয় হাজার ৩২০ হেক্টর জমিতে।
তবে কৃষকদের অভিযোগ, চার মাস রোদে পুড়ে হাড় ভাঙা খাটুনি করে তারা যে মুনাফা করছে, তার থেকে তিনগুণ মুনাফা করছে খুচরা ব্যবসায়ীরা।
নগরীর কদমতলা মোকাম ঘুরে দেখা গেছে, সোমবার মাঝারি সাইজের তরমুজ গড়ে বিক্রি হয়েছে (১০০ পিস) ছয় হাজার টাকায়। অর্থাৎ ছোট-বড় সব তরমুজের গড় মূল্য প্রতি পিস ৬০ টাকা।
আরও পড়ুন: খুলনায় লবণাক্ত এলাকায় তরমুজের বাম্পার ফলন
মাত্র এক কিলোমিটার দূরে নগরীর ময়লাপোতা মোড়ে ভ্যান ও ফলের দোকানে সেই তরমুজ বিক্রি হয়েছে ২০০ থেকে ২২০ টাকায়।
কৃষকরা জানান, দুইভাবে তরমুজ বিক্রি হয়। ঢাকা থেকে ব্যবসায়ীরা দাকোপে এসে মাঠ থেকে সরাসরি তরমুজ কেনেন। তারাই ট্রাকে করে তরমুজ নিয়ে যান। চলতি সপ্তাহে ছোট আকারের তরমুজ (তিন থেকে পাঁচ কেজি) প্রতি বিঘা বিক্রি হয়েছে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা। একই তরমুজ গত বছর বিক্রি হয়েছে ৩০/৩৫ হাজার টাকা।
এছাড়া বড় আকারের (আট কেজির ওপরে) তরমুজ বিক্রি হচ্ছে এক লাখ টাকায়।
এছাড়া কিছু কৃষক নিজেই তরমুজ নিয়ে খুলনার কদমতলায় পাইকারি বিক্রি করেন। পাইকারি তরমুজ বিক্রি হয় পিস হিসেবে। ছোট আকারের তরমুজ (তিন থেকে পাঁচ কেজি) প্রতি বিক্রি সোমবার বিক্রি হয়েছে ৫০/৬০ টাকা পিস। এছাড়া বড় তরমুজ বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকা পিস।
দাকোপ উপজেলার পানখালী ইউনিয়নের কৃষক আজগর হোসেন জানান, শুরুতে প্রতি বিঘা ৪০/৪৫ হাজার টাকায় বিক্রি হবে বলে তারা আশা করেছিলেন। কিন্তু এখন দাম ৭০ হাজারের ওপর। এতে কৃষকেরা খুশি।
দাকোপ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কে এম মাকসুদুন্নবী জানান, ‘সোমবার পর্যন্ত আড়াই হাজার হেক্টর জমির তরমুজ বিক্রি হয়েছে। প্রতিদিন ৫০০/৬০০ হেক্টর জমির তরমুজ সংগ্রহ হচ্ছে। বেশিরভাগ তরমুজই ঢাকায় যাচ্ছে। ঈদের আগেই ৮৫ শতাংশ তরমুজ বিক্রি করা হবে।’
কৃষকদের অভিযোগ, তরমুজ বিক্রিতে বড় বাধা হয়ে দেখা দিয়েছে পরিবহনে চাঁদাবাজি। প্রতিদিন অসংখ্য ট্রাক তরমুজ পরিবহনের জন্য দাকোপ থেকে বিভিন্ন রুটে যাচ্ছে। প্রায় মোড়ে তারা চাঁদাবাজির শিকার হচ্ছে। এ থেকে পরিত্রাণের দাবি জানিয়েছেন কৃষকরা।
আরও পড়ুন: তরমুজের বাম্পার ফলন হলেও খুলনার চাষিরা হতাশ
খুলনায় তরমুজের বাম্পার ফলন, কৃষকের চোখে সোনালী স্বপ্ন
১ বছর আগে
তীব্র গরমে হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচতে করণীয়
গ্রীষ্ম শুরুর পর থেকে প্রতিটি দিন পূর্বাপেক্ষা বেশি দাবদাহ নিয়ে হাজির হয়। জুলাইয়ের শুরুতে তা নিতান্ত প্রকট আকার ধারণ করে। এমনকি এই মাত্রা প্রতি বছর বেরেই চলেছে। তাই গরমের এই তীব্রতা আগের তুলনায় অধিক গুরুত্ব সহকারে নেওয়া আবশ্যক। তীব্র গরমে হিট স্ট্রোক স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মকভাবে ঝুঁকির কারণ হতে পারে। তাপের সংস্পর্শে আশা ব্যক্তির শরীরের বাইরের অংশের সাথে সাথে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ভেতরের প্রত্যঙ্গগুলোও। জীবন-জীবিকার তাগিদে ঘরের বাইরে বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকায় স্বাভাবিক ভাবেই এই বিপজ্জনক তাপের সংস্পর্শে থাকতে হয়। অসহনীয় গরমে হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচবার জন্য করণীসমূহ নিয়েই আজকের স্বাস্থ্য কথন।
প্রচন্ড গরমে হিট স্ট্রোক এড়িয়ে চলার উপায়
শরীরকে যথেষ্ট পরিমাণে হাইড্রেটেড রাখা
সঠিকভাবে হাইড্রেটেড থাকা শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। যাদের খুব বেশি ঘরের বাইরে থাকার প্রয়োজন হয়, তাদের শরীরকে ভালভাবে হাইড্রেটেড করে বাইরে বের হওয়ার পরিকল্পনা করতে হবে। এখানে নিছক এক গ্লাস পানি পান যথেষ্ট নয়। সারা দিন হাইড্রেটেড থাকা মানে সাথে সব সময় পানির বোতল রাখতে হবে।
যখনি ঘামের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে তখনি সাথে সাথে স্পোর্টস ড্রিঙ্কে চুমুক দেয়া উচিত। এতে ঘামের কারণে শরীরের হারিয়ে যাওয়া ইলেক্ট্রোলাইটগুলোকে পুনরায় পূরণ করা যায়। পানি পানের সাথে এমনভাবে অভ্যস্ত হতে হবে যে, পানির পিপাসা পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা যাবে না।
পড়ুন: উচ্চ রক্তচাপ (হাই প্রেশার) হলে যা এড়িয়ে চলা উচিত: ক্ষতিকর খাবার, পানীয়, অভ্যাস
উষ্ণ মৌসুমের উপযুক্ত পোশাক পরিধান
মৌসুম অনুযায়ী পোশাক পরিধানটা সুস্বাস্থ্য ও মানসিক সুস্থতার জন্য খুবই দরকারি। আঁটসাঁট, রঙিন এবং একাধিক স্তরের মোট পোশাক শরীর থেকে ঘামকে বাষ্পীভূত করা কঠিন করে তুলতে পারে। ফলে শরীরের অতিরিক্ত তাপ মুক্তি বাধাগ্রস্ত হয়। আশপাশের অপরিবর্তিত আর্দ্রতা শরীরে ঘামের হওয়ার প্রবণতাকে বাড়াতে থাকে। পোশাক এমনিতেই গরম থাকে আর ঘাম কাপড়কে আর্দ্র করে উষ্ণতাকে আরো বাড়িয়ে দেয়। ফলশ্রুতিতে শরীরের তাপমাত্রা ভারসাম্য হারিয়ে কেবল অস্বস্তি বাড়াতে থাকে।
তাই প্রচন্ড গরম আবহাওয়াতে সাদা, অথবা যে কোনো হাল্কা রঙের এবং সুতি ফেব্রিকের কাপড় পড়া উচিত। এতে শরীরের অতিরিক্ত তাপ বের করে দিতে সুবিধা হয়। মুখমন্ডল রক্ষার জন্য একটি চওড়া হ্যাট পরা উত্তম।
শরীরের উন্মুক্ত জায়গাগুলোকে সূর্য থেকে বাঁচানোর জন্য প্রচুর ঘাম-প্রতিরোধী সানস্ক্রিন ব্যবহার করা যেতে পারে।
পড়ুন: মাইগ্রেনের ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায়
অতিরিক্ত গরম স্থান থেকে দূরে থাকা
প্রচন্ড গরমের সময় সব জায়গাতেই তাপের ভয়াবহতা বিরাজ করে। এরপরেও যতটা সম্ভব তীব্র তাপ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখা শরীরকে স্বাভাবিক রাখার কার্যকরি উপায় হতে পারে। ইঞ্জিনযুক্ত যে কোন গাড়ি তাপের এক বিরাট উৎস। তাই যতটা পারা যায় এ ধরনের যানবাহনের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা উচিত। হোক সেটা ইঞ্জিন চালুরত অথবা পার্ক করা, উভয় ক্ষেত্রেই গাড়িটি বিপজ্জনক।
রাস্তা দিয়ে হাটার সময় ছায়ার নিচ দিয়ে চলাচল করা উচিত। যতটা সম্ভব অতিরিক্ত ভিড় এড়িয়ে চলতে হবে। সম্ভব হলে দিনের অধিকাংশ সময় বিশেষ করে উষ্ণতম সময়গুলো তথা- দুপুরবেলায় বাড়ির ভিতরে থাকতে হবে। সারাটা সময় বাইরে থাকতে হলে ঘন ঘন বিরতি নিয়ে কাজ করতে হবে।
ঘরের ভেতরে থাকার ক্ষেত্রে ঘরটাকেও ঠান্ডা রাখার কথা বিবেচনা করা উচিত। টেবিল ফ্যানের সামনে কতগুলো বরফ রেখে এবং ভেজা কাপড় দিয়ে ঘরের মেঝে মুছে ঘরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখা যেতে পারে। রান্নার সময় এক্সস্ট ফ্যান চালিয়ে রাখা আবশ্যক।
পড়ুন: উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে উপযুক্ত খাবার ও জীবন ধারণ পদ্ধতি
ভারী খাবার এড়িয়ে চলা
যে কোন খাবার গ্রহণের সময় শরীরের তাপ তৈরি হয়। খাবারে পরিমাণের সাথে সমানুপাতিক হারে শরীরে তাপের যোগান হতে থাকে। তাই দুপুর এমনকি রাতের খাবারও যারা ভরপেট খান তাদেরকে সাবধান হতে হবে। ছায়ায় বা ফ্যানের নিচে বসে খাওয়া-দাওয়া করলেও এর ব্যতিক্রম হয় না। এই তাপ বৃদ্ধিটা ভেতর থেকে শরীরকে জ্বালিয়ে দিতে থাকে।
খাবারের পর হেটে হেটে হজমের চিন্তা করলেও লাভ নেই। উল্টো হাটার ফলে শরীরের তাপ আরো বেড়ে যাবে। আবার অনেক কম খাবার খাওয়া শরীরকে দুর্বল করে তুলবে। তাই কোন এক বেলা একদম ভরপেট খাবার না খেয়ে অল্প করে ৩ ঘন্টা পর পর খাবার খাওয়া যেতে পারে। এতে শরীরে তাপমাত্রার ভারসাম্য বজায় থাকবে।
জরুরি অবস্থায় তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া
প্রচন্ড গরমের কারণে অনেক সুঠাম দেহের অধিকারিও বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় আক্রান্ত হতে পারে। এগুলোর মধ্যে অতিরিক্ত দুর্বলতা, বমি বমি ভাব, শরীরের তাপমাত্রা ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা তার বেশি, প্রচন্ড মাথাব্যথা প্রভৃতি লক্ষণগুলো গুরুতর পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়াও রয়েছে হঠাৎ বিভ্রান্তি বা হ্যালুসিনেশন, হাঁটতে অসুবিধা, খিঁচুনি এবং মূর্ছা যাওয়া।
পড়ুন: স্বাস্থ্য সুরক্ষায় পিংক সল্ট বা হিমালয় লবণের উপকারিতা
এ অবস্থায় অতিরিক্ত গরম কমানোর জন্য যথাযথ পদক্ষেপ না নেওয়া হলে হিট স্ট্রোক চরম আকার ধারণ করতে পারে। এমনকি খুব খারাপ অবস্থায় এটি জীবনের জন্য হুমকিতে পরিণত হয়। এতে মস্তিষ্কসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর ক্ষতি সাধন হতে পারে। তাই হিট স্ট্রোকের এই অবস্থায় অবশ্যই অবিলম্বে ডাক্তারের সরণাপন্ন হওয়া প্রয়োজন।
প্রচন্ড গরমে হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচতে প্রয়োজনীয় খাবার
ফলের সালাদ
শরীরে খাবারের চাহিদা, মুখে স্বাদের ভিন্নতা এবং শরীরকে পুনরায় হাইড্রেটিং-এর জন্য সেরা খাবার হচ্ছে ফলের সালাদ। বিভিন্ন রসাল ফলের ককটেল দারুণ একটি খাবার হতে পারে ব্রেকফাস্ট অথবা সন্ধ্যার স্ন্যাকসে।
তরমুজে পানির পরিমাণ শতকরা ৯০ ভাগ, কমলায় ৮৭ ভাগ, আর শসাতে ৯৫ ভাগ।
পড়ুন: কান পেতে রই: দেশের প্রথম মানসিক সহায়তা হেলপলাইন
এক কাপ শসার টুকরোতে মাত্র ১৬ ক্যালোরি থাকে, যা ভারী খাবারের ঝামেলা থেকে অনেক অনেক দূরে। আপেল গরমের মাসগুলোতে দেহকে সতেজ রাখার গ্যারান্টিযুক্ত।
টমেটো শুধুমাত্র একটি সুস্বাদু খাবারই নয়, এটি শরীরকে ঠান্ডা রাখতেও সহায়ক ভূমিকা পালন করে। টমেটোতে থাকা লাইকোপিন মুলত একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করতে সাহায্য করে। এই ফলগুলোর সংমিশ্রণে তৈরি স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি ডিশ-ই যথেষ্ট গরমের অস্বস্তির সাথে যুদ্ধ করতে।
পাতাযুক্ত সবুজ শাক
পালং শাকের মত এক গাঢ় সবুজ শাকেই পানি আছে শতকরা ৯২ ভাগ। এটি যা ঘামের মাধ্যমে নষ্ট হয়ে যাওয়া ভিটামিন এবং ম্যাগনেসিয়াম ও ক্যালসিয়ামের মত খনিজের ঘাটতি পূরন করে। পুদিনা আরও প্রাণবন্ত ভেষজগুলোর মধ্যে একটি। তাজা পুদিনা কয়েক শতাব্দী ধরে গরম আবহাওয়ায় মানুষকে শীতল করতে ব্যবহার করা হয়ে আসছে। কখনো চা-এ বা ঠান্ডা পানীয়তে কখনো বা সালাদে অভিজাত উপস্থিতি পাওয়া যায় এই পাতাটির।
পড়ুন: ডায়রিয়া বা উদরাময়: কারণ, লক্ষণ, প্রতিরোধ ও প্রতিকারের উপায়
ডাবের পানি
ডাবের পানি ইলেক্ট্রোলাইট দিয়ে ভরা থাকে যা শরীরকে হাইড্রেটেড এবং ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে। এই পাওয়ার পানীয়টি তাপকে পরাস্ত করে সারাদিন ধরে শরীরকে সক্রিয় রাখে। এটি হজম ক্ষমতা বাড়াতেও কাজে লাগে। গরমের সময়ে পাকস্থলি সংক্রান্ত জটিলতায় অনেককে হরহামেশাই ভুগতে দেখা যায়।
মাছ
মাংসের উপর নির্ভর না করে ডায়েটে প্রোটিনের চাহিদা পূরণে মাছের রাখা উত্তম। ভাল ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ মাছ মাংসের একটি উপযুক্ত বিকল্প। এটি আহারের পর কম তাপ উৎপন্ন করে, তাই অস্বস্তিকরভাবে ভরপেট বোধ হবে না, যা সাধারণত মুরগি এবং গো-মাংস খাবারের সময় অনুভূত হয়।
দই
দই গরমের সময় জনপ্রিয় কারণ এতে জলের পরিমাণ বেশি এবং শীতল প্রভাব রয়েছে। দই অন্ত্রের উপকারি ব্যাকটেরিয়ার অনূকুলে থাকে, যা শরীরকে খাদ্যের বিষক্রিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। উষ্ণ মৌসুমে ঘরের বাইরে বিভিন্ন ধরনের খাবার খাওয়ার কারণে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ বেড়ে যায়। এখানে দই একটি প্রতিরোধী খাবার হিসেবে কাজ করে।
পড়ুন: এয়ার কন্ডিশনার ছাড়াই গরমে ঘর ঠান্ডা রাখার কার্যকরী উপায়
ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ এই মিষ্টান্নটি প্রচন্ড উষ্ণতায় ঠান্ডা পানীয়ের বিকল্প হিসেবে কার্যকরি ভূমিকা পালন করে। ভিটামিন বি এবং অন্ত্র-বান্ধব ব্যাকটেরিয়া সমৃদ্ধ দই শরীরকে ভেতর থেকে প্রশান্তি দেয়। বিভিন্ন ফলের সাথে মিশিয়ে দইয়ে দারুণ স্বাদ যোগ করা যেতে পারে।
পরিশিষ্ট
প্রচন্ড দাবদাহে হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচতে উপরোক্ত উপায়গুলো অনেকটাই স্বাস্থ্যের অনুকূলে আসতে পারে। যদিও মানুষ সৃষ্ট কারণে বৈশ্বিক উষ্ণতার দরুণ প্রতিনিয়ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। এ অবস্থায় নিজের ও আশেপাশের মানুষগুলোর সুরক্ষায় প্রত্যেকেরই নিজ নিজ অবস্থান থেকে সতর্ক থাকা বাঞ্ছনীয়। বিশেষ করে যারা তুলনামুলক ভাবে বেশি ঝুঁকিতে আছেন তাদের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। এদের মধ্যে আছেন শিশু, বৃদ্ধ, স্থুলকায় ব্যক্তি এবং বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় অসুস্থ মানুষেরা। পারস্পরিক যত্নশীল হওয়ার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় তীব্র গরমে দুর্ভোগকে কাটিয়ে ওঠা যেতে পারে।
পড়ুন: গরমকালে কম খরচে বাংলাদেশের কোথায় কোথায় ঘুরতে যাবেন?
২ বছর আগে