মামলার ডেথ রেফারেন্স (মৃতুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের আবেদন) ও আসামিদের আপিল ও জেল আপিলের শুনানি নিয়ে সোমবার বিচারপতি এস এম এমদাদুল হক ও বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই রায় দেন।
আসামি পক্ষের আইনজীবীরা জানিয়েছেন, রাষ্ট্রপক্ষ দণ্ডিতদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে না পারায় উচ্চ আদালত খালাসের এই রায় দিয়েছেন।
আরও পড়ুন: ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড যুক্ত করতে সংসদে বিল উত্থাপন
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোজাম্মেল হক রানা সিদ্দিকী। আসামি পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এ কে এম ফজলুল হক খান ফরিদ, এ এম মাহবুব উদ্দিন,বজলুল কবির,আফিল উদ্দিন, সাকিব মাহবুব, সাইফুর রহমান রাহি ও রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী এস এম শফিকুল ইসলাম।
পরে ফজলুল হক ফরিদ বলেন, ‘মামলার বাদী যে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন, তার আলামত পাওয়া যায়নি বলে মেডিকেল রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। তাছাড়া মামলার বাদী যে জবানবন্দি দিয়েছেন, তার সাথে মামলার বিবরণ, সাক্ষীদের বক্তব্যের মধ্যে অসামঞ্জস্য ছিল। ফলে ধর্ষণের অভিযোগটি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ হয় না। এ কারণে হাইকোর্ট আসামিদের খালাস দিয়েছেন।’
আরও পড়ুন: ধর্ষণের শিকার তরুণীকে বিয়ে করে জামিন পেলেন আসামি
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোজাম্মেল হক বলেন, ‘মোট ১২ জন সাক্ষীর মধ্যে দুই প্রধান সাক্ষী আদালতে গিয়ে সাক্ষ্য দেয়নি। আর গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন সাক্ষী আসামিদের পক্ষে সাক্ষ্য দেওয়ায় তাদের বৈরী ঘোষণা করা হয়। তাছাড়া মেডিকেল রিপোর্টে ধর্ষণের আলামতের প্রমাণ পাওয়ার কথা বলা হয়নি। যে কারণে মামলাটি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ হয়নি।’
এই রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করবে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছে নোট পাঠাব। তিনি সিদ্ধান্ত দিলে আপিল করা হবে।’
আরও পড়ুন: ঢাবি ছাত্রী ধর্ষণ: মজনুর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
এ মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, নেত্রকোনা সদর থানার বাহাদুরপুর গ্রামের ওই কিশোরী ২০০২ সালের ২০ জুলাই মার সঙ্গে পূর্বধলা উপজেলার সাতপাটি আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার পথে রাতে কুমারখালী এলাকার হোগলা পাকা রাস্তার ব্রিজের উপর পৌঁছালে পাঁচ আসামি ছুরি ও ধারালো অস্ত্র দেখিয়ে রিকশার গতিরোধ করে ওই কিশোরীকে ধরে জঙ্গলে নিয়ে ধর্ষণ করা হয়। পরে পাশের একটি ভবনে নিয়ে পুনরায় ধর্ষণ করা হয়।
আরও পড়ুন: কুমিল্লায় সংঘবদ্ধ ধর্ষণ চেষ্টায় অন্তঃসত্ত্বা নার্স আহত
এদিকে খবর পেয়ে পুলিশ উপস্থিত হলে আসামিরা ওই কিশোরীকে নিয়ে বিলের পানিতে নেমে গিয়েছিল বলে মামলায় বলা হয়েছে। পরে ওই কিশোরীকে ফেলে পালিয়ে যায়। ঘটনার পরদিন ওই কিশোরী নিজেই পূর্বধলা থানায় মামলা করেন। তখন তার বয়স ছিল ১৫ বছর। ঘটনার চার মাসের মাথায় তদন্ত শেষ করে ওই বছরের ৮ নভেম্বর অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। তার ১০ বছর পর ২০১২ সালের ৯ অক্টোবর আদালতে ছয় আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন হয়। তারও তিন বছর পর ২০১৫ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি পাঁচ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড এবং একজনকে খালাস দিয়ে রায় দেন নেত্রকোনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত প্রত্যেক আসামিকে ২৫ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ডও করা হয়।