রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার চেম্বার বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান এ আদেশ দেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশ গুপ্ত। আরমানের মায়ের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার হুমায়ন কবির পল্লব।
রায়ের পর অমিত দাশ গুপ্ত বলেন, ক্ষতিপূরণের বিষয়ে হাইকোর্টের আদেশ আট সপ্তাহের জন্য স্থগিত করেছে চেম্বার আদালত। একই সঙ্গে এ সময়ের মধ্যে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষকে নিয়মিত লিভ টু আপিল (সিপি) দায়ের করতে বলেছে।
আরও পড়ুন: বাবার নামে মিলের খেসারত: নির্দোষ আরমানকে কারামুক্তি ও ক্ষতিপূরণের নির্দেশ
এর আগে, গত ৩১ ডিসেম্বর এ বিষয়ে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে আরমানের আটকাদেশ অবৈধ ঘোষণা এবং তাকে অবিলম্বে মুক্তির নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ৩০ দিনের মধ্যে ক্ষতিপূরণ হিসেবে তাকে ২০ লাখ টাকা দিতে পুলিশের মহাপরিদর্শককে নির্দেশ দেয়া হয়।
এছাড়া, ঘটনার সঙ্গে জড়িত পল্লবী থানার সাবেক চার পুলিশ সদস্যকে চলতি দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে যুক্ত করতে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারকে নির্দেশ দেয়া হয়। চার কর্মকর্তা হলেন- পল্লবী থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দাদন ফকির ও মো. নজরুল ইসলাম এবং সাবেক উপ-পরিদর্শক (এসআই) সিরাজুল ইসলাম খান ও মো. রাসেল।
ক্ষতিপূরণ ও পুলিশের চার সদস্যকে চলতি দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার বিষয়ে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে পুলিশের মহাপরিদর্শক ও ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশারকে বলা হয়।
আরমানকে বেআইনি আটকের ঘটনায় দায় নিরূপনে নতুন করে তদন্তের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মকর্তা নিযুক্ত করতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দিয়ে তিন মাসের মধ্যে তদন্ত করে পিবিআইয়ের উপ-মহাপরিদর্শককে (ডিআইজি) আগামী ১১ এপ্রিল প্রতিবেদন দিতে বলে আদালত।
আরও পড়ুন: নির্দোষ জাহালমের কারাভোগের জন্য কে দায়ী জানতে চায় হাইকোর্ট
নিরীহ জাহালমকে মুক্তি দিতে কারা কর্তৃপক্ষকে হাইকোর্টের নির্দেশ
পরে ক্ষতিপূরণ ও চার পুলিশের বিষয়ে দেয়া আদেশ স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ ও চার পুলিশ আপিল বিভাগে পৃথক আবেদন করেন। গত ১০ জানুয়ারি চেম্বার বিচারপতির আদালত চার পুলিশ সদস্যের বিষয়ে কোনো স্থগিতাদেশ না দিয়ে তাদের সিপি করতে বলে।
সোনালী ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় ২৬ মামলার ভুল আসামি পাটকল শ্রমিক জাহালম প্রায় তিন বছর কারাভোগের পর উচ্চ আদালতের হস্তক্ষেপে মুক্তি পান। ওই বিষয়টি আলোচনায় থাকাকালে ২০১৯ সালের ১৮ এপ্রিল আরমানের বিনা দোষে কারাভোগ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এটি যুক্ত করে একটি মানবাধিকার সংগঠনের পক্ষে হাইকোর্টে রিট করে ‘ল অ্যান্ড লাইফ ফাউন্ডেশন’।
আরও পড়ুন: যশোরের সেই ৩ কিশোরের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে নোটিশ
হাইকোর্ট পরে একই বছরের ২৩ এপ্রিল মামলার নথি তলব করে রুল জারি করে। রুলে আরমানকে আটক রাখা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তাকে কেন মুক্তি দেয়া হবে না, তাকে হাইকোর্টে হাজির করার কেন নির্দেশ দেয়া হবে না এবং তাকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না তা জানতে চায় হাইকোর্ট।
রাজধানীর পল্লবীর বেনারসি কারিগর মো. আরমান নির্দোষ হয়েও মাদক মামলায় ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে ২০১৬ সালের ২৭ জানুয়ারি থেকে কারাভোগ করছেন। পল্লবী থানার এ মামলার প্রকৃত আসামি মাদক কারবারি শাহাবুদ্দিন বিহারি। কিন্তু ওই পরিচয়ে তার পরিবর্তে সাজাভোগ করছেন আরমান। শুধু বাবার নামে মিল থাকায় পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে শাহাবুদ্দিন নামে আদালতে সোপর্দ করে বলে অভিযোগ পরিবারের।