ভার্চুয়ালি আয়োজিত অনুষ্ঠানে দেয়া এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, ‘কোভিড-১৯ সংকট মানব সংহতির প্রয়োজনীয়তা আমাদের সামনে তুলে ধরেছে এবং যে হুমকি সকলের জন্য তা আমরা সকলে মিলেই সমাধান করতে পারি।’
শুক্রবার নোবেল শান্তি পুরস্কার ফোরামে এসব কথা বলেন জাতিসংঘ প্রধান।
আরও পড়ুন: করোনার ভ্যাকসিন নেবেন জাতিসংঘ প্রধান
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) বিশ্বব্যাপী লাখ লাখ ক্ষুধার্ত মানুষের জীবন রক্ষার কাজের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে ২০২০ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়ার পরদিনই এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
পেছনে ফেরার সুযোগ নেই
নোবেল আলোচনায় মহামারির পরে বহুপক্ষীয়তা এবং বিশ্ব পরিচালনার উপর আলোকপাত করা হয়, যা পৃথিবীর প্রায় সব দেশকেই প্রভাবিত করেছে।
ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক ও সামাজিক এ পরিণতির কারণে বিশ্ব বিগত ৮০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় বৈশ্বিক মন্দার মুখোমুখি এবং দারিদ্র্যের মাত্রা চরমে পৌঁছেছে।
চলমান পরিস্থিতিতে ‘রিসেট’ করার আহ্বান জানিয়েছেন মহাসচিব।
আরও পড়ুন: করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হোন: জি২০ নেতাদের জাতিসংঘ মহাসচিব
তিনি বলেন, ‘আমরা চাইলেই আগের জায়গায় ফিরে গিয়ে এই সংকট মোকাবিলা করতে পারব না। আমাদের আরও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং শক্তিশালী আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান দরকার।’
সবার জন্য ভ্যাকসিন
চীনে প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ার প্রায় এক বছর পার হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী ৬ কোটি ৮০ লাখের বেশি মানুষ কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়েছে এবং প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ১৫ লাখ মানুষের।
গুতেরেস বলেন, দেশগুলো একটি সাধারণ শত্রুর মুখোমুখি হলেও, এটি মোকাবিলার ক্ষেত্রে তারা কোনো যৌথ উদ্যোগ গ্রহণ করেনি।
তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন পাওয়ার ক্ষেত্রেও আমরা একই ঘটনা ঘটতে দিতে পারি না, এটিকে অবশ্যই জনসাধারণের পণ্য হিসেবে গণ্য করতে হবে।’
যুদ্ধক্ষেত্র এবং বাড়িতে শান্তি
গুতেরেস এ সংকটকালীন যে নীতিগুলো বাস্তবায়নে জোর দিয়েছিলেন তা পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
করোনাভাইরাসকে মহামারি ঘোষণার পরপরই বিশ্বব্যাপী যুদ্ধরত পক্ষগুলোকে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছিলেন জাতিসংঘ মহাসচিব।
যুদ্ধ নয়, ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মনোনিবেশ করার আহ্বান জানান তিনি।
আরও পড়ুন: কার্যকর হতে যাচ্ছে পরমাণু অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ চুক্তি: জাতিসংঘ
তিনি বলেন, ‘আমার এই আহ্বান যে সমর্থন পেয়েছে এবং সারা বিশ্বের ঘরে ঘরে শান্তির জন্য এবং নারী ও শিশুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা অবসানে আমার আহ্বানের প্রতি সরকারগুলোর ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া আমি উত্সাহিত হয়েছি।’
মহামারি ছাড়াও বৈশ্বিক উদ্বেগের নানা ক্ষেত্র চিহ্নিত করেছেন গুতেরেস, যেগুলো সমাধানের জন্যও বৃহত্তর বৈশ্বিক সহযোগিতা এবং সংহতি প্রয়োজন।
আশার আলো:
জলবায়ু সংক্রান্ত জরুরি অবস্থার কথা তুলে ধরে জাতিসংঘ মহাসচিব ‘প্রকৃতির বিরুদ্ধে মানবতার আত্মঘাতী যুদ্ধ’ সম্পর্কে কথা বলেন। তবে এর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে মানুষের ক্রমবর্ধমান জোট আশার আলো হয়ে দেখা দিচ্ছে বলেও জানান তিনি।
শুক্রবার, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ২৭ সদস্য রাষ্ট্র ঘোষণা করেছে যে তারা কার্বন নিঃসরণ কমানোর লক্ষ্যমাত্রা ২০৩০ সালের মধ্যে ৫৫ শতাংশে উন্নীত করার বিষয়ে চুক্তিতে পৌঁছেছে।
গুতেরেস বলেন, ‘প্রতিটি দেশ, শহর, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাকে ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণের হার শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার পরিকল্পনা গ্রহণ করা উচিত।’
আরও পড়ুন: করোনা মোকাবিলায় ভ্যাকসিন অনুমোদন দিল যুক্তরাষ্ট্র
অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং বৈষম্যহীন সুন্দর বিশ্ব অর্জনের প্রচেষ্টায়, বৈশ্বিক শক্তি সম্পর্কের ভিত্তিতে দেশগুলোকে সকল বৈষম্যের সমাধান করার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব।