দুপুর ১টার দিকে বাসগুলো যাত্রা শুরু করে সন্ধ্য নাগাদ বহরটি চট্টগ্রামের ট্রানজিড পয়েন্ট পতেঙ্গায় পৌঁছবে।
স্বেচ্ছায় ভাসানচর যেতে ইচ্ছুক রোহিঙ্গাদের নিয়ে আগের মতো যাত্রা করবেন সংশ্লিষ্টরা। এবারও দু’দিন পৃথকভাবে যাত্রা করানো হবে। এর আগে চার দফায় নোয়াখালীর ভাসানচরে আবাসন নিশ্চিত করেছে ৯ হাজার ৫৪০ জন রোহিঙ্গা। টেকনাফ উখিয়ার ৩৪ ক্যাম্প থেকেই রোহিঙ্গারা ট্রানজিট পয়েন্টে আসা শুরু করে।
অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. সামছু-দৌজা নয়ন জানান, দুপুর সোয়া ১টার দিকে উখিয়া ডিগ্রি কলেজ ক্যাম্পাস থেকে ২১টি বাসে এসব রোহিঙ্গা চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হন।
আরও পড়ুন: ভাসানচরে আজ যাচ্ছেন আরও ১০১১ রোহিঙ্গা
তিনি বলেন, পঞ্চম দফায় অন্তত ৩ হাজার রোহিঙ্গা নোয়াখালীর ভাসানচর যেতে স্বেচ্ছায় আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তাদের বাসে করে চট্টগ্রাম নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বুধবারও নেয়া হবে। পরে সেখান থেকে জাহাজে করে ভাসানচরে নেয়া হবে।
উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাঝিরা বলেন, আগের চার দফা সফল যাত্রার পর এবারও ভাসানচর যেতে ইচ্ছুক রোহিঙ্গারা স্ব-স্ব ক্যাম্প ইনচার্জ কার্যালয়ে নাম জমা দিচ্ছে। ভাসানচরের পরিবেশ, থাকা খাওয়ার সুবিধা সম্পর্কে ব্রিফিং করার পর যারা যেতে রাজি হচ্ছে তাদের নিবন্ধনের মাধ্যমে ভাসানচর স্থানান্তর করার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হচ্ছে।
কক্সবাজারের আরআরআরসি কার্যালয় সূত্র জানায়, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চার দফায় কক্সবাজারের ক্যাম্প থেকে ৯ হাজার ৫৪০ জন রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তর করা হয়েছে। প্রথম দফায় গত ৪ ডিসেম্বর ১ হাজার ৬৪২ জন রোহিঙ্গা স্বেচ্ছায় ভাসানচরে গেছেন। এরপর ২৯ ডিসেম্বর দ্বিতীয় ধাপে যান ১ হাজার ৮০৫ জন ও তৃতীয় ধাপে দু’দিনে ২৮ ও ২৯ জানুয়ারি ৩ হাজার ২০০ জন রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর করা হয়। ১৪ ফেব্রুয়ারি প্রথম দিন ২ হাজার ১৪ জন ও ১৫ ফেব্রুয়ারি ৮৭৯ জন রোহিঙ্গা ভাসানচরের উদ্দেশ্যে উখিয়া কলেজের অস্থায়ী ট্রানজিট ক্যাম্প ত্যাগ করে। মঙ্গল ও বুধবার আরও ৩ হাজারের বেশি রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে পৌঁছে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ক্যাম্পে আশ্রয়ে থাকাদের মাঝ থেকে এক লাখ রোহিঙ্গাকে ভাসানচর স্থানান্তর করার পরিকল্পনায় কাজ করছে সরকার।
আরও পড়ুন: ভাসানচরে পৌঁছেছে ২০১৪ রোহিঙ্গা, উখিয়া থেকে চট্টগ্রামের পথে আরও ৮৭৯ জন
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে রোহিঙ্গা স্থানান্তরের জন্য নিজস্ব তহবিল থেকে ৩ হাজার ৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ভাসানচর আশ্রয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। ১৩ হাজার একর আয়তনের ওই চরে ১ লাখ রোহিঙ্গা বসবাসের উপযোগী ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে।
উখিয়া-টেকনাফে অস্থিত আশ্রয়শিবিরগুলো বেশির ভাগ পাহাড়ের ঢালুতে তৈরি। বর্ষার সময় পাহাড়ধসে ঘরবাড়ি বিলীন হয়, হতাহতের ঘটনা ঘটে। আশ্রয়শিবিরে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী, মাদক ব্যবসায়ী ও বখাটের উৎপাত বেড়েছে। বেড়েছে খুন, মুক্তিপণের জন্য অপহরণ, ধর্ষণ ও অরাজকতা। রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী দলের মধ্যে গোলাগুলিতে রোহিঙ্গার মৃত্যু ঘটছে। সাধারণ রোহিঙ্গারা অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। তাই শান্তিকামী রোহিঙ্গারা ঝুঁকি এড়াতে স্বেচ্ছায় ভাসানচরে যেতে আগ্রহ দেখাচ্ছে, এমনটি মনে করছে সংশ্লিষ্টরা।
আরও পড়ুন: ভাসানচর: ধীরে ধীরে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হচ্ছেন রোহিঙ্গারা
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংসতা শুরু হলে পরের কয়েক মাসে অন্তত ৮ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নেয়। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে আরও কয়েক লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থান নিয়েছিল। বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা প্রায় সাড়ে ১১ লাখ।