ভারতের বিপক্ষে জয়, নাহলে ন্যূনতম ব্যবধানে হার- এমন সমীকরণ নিয়ে মাঠে নেমেও ম্যাচটি কঠিন করে ফেলেছে অস্ট্রেলিয়া। মূলত সময়মতো ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মার ব্যাটিং তাণ্ডব থামাতে ব্যর্থ হয়ে বিশাল লক্ষ্যের সামনে পড়ে গেছে তারা।
টস হেরে শুরুতে ব্যাটিং করে রান পাহাড়ে চড়েছে ভারত। রোহিতের ৪১ বলে ৯২ রানের ইনিংসে ভর করে ৫ উইকেট হারিয়ে অজিদের ২০৬ রানের লক্ষ্য দিয়েছে তারা।
রোহিতের দুর্দান্ত ইনিংসটি ছিল ৮টি ছক্কা ও ৭টি চারের মারে সাজানো। এছাড়া সূর্যকুমার যাদব ১৫ বলে ৩১ রান এবং একই সংখ্যক বল মোকাবিলা করে অপরাজিত ২৭ রানের ক্যামিও ইনিংস খেলেন হার্দিক পান্ডিয়া। সেইসঙ্গে শিবম দুবে ২৮ রানের ধৈর্য্যশীল ইনিংসটিও বড় লক্ষ্য গড়তে ভূমিকা রাখে।
আরও পড়ুন: বাটলারের ব্যাটিং ঝড়ে উড়ে গেল যুক্তরাষ্ট্র, সেমিতে ইংল্যান্ড
অস্ট্রেলিয়ার হয়ে মিচেল স্টার্ক চার ওভারে ৪৫ রান খরচায় দুই উইকেট নিয়েছেন। দুটি উইকেট নিয়েছেন মার্কাস স্টয়নিসও, তিনি দিয়েছেন ৫৬ রান। তবে নিয়ন্ত্রিত বোলিং করেন জশ হেজলউড। রান ফোয়ারার ইনিংসেও চার ওভারে মাত্র ১৪ রান দিয়ে একটি উইকেট তুলে নেন তিনি।
ইনিংসের শুরুতে বিরাট কোহলিকে হেজলউড শূন্য রানে ফিরে দিলেও উইকেটে তার অনুপস্থিতি টেরই পেতে দেননি রোহিত। দ্বিতীয় ওভারে কোহলি ফিরে গেলে পরের ওভারে চারটি ছক্কা ও একটি চার মেরে স্টার্কের কাছ থেকে ২৯ রান সংগ্রহ করেন রোহিত। ব্যাটিং ঝড় ধরে রেখে মাত্র ১৯ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন তিনি। এটিই চলমান বিশ্বকাপে সবচেয়ে দ্রুত হাফ সেঞ্চুরির রেকর্ড।
এরপর একই গতিতে সেঞ্চুরির দিকে এগোন তিনি। মাঝে অষ্টম ওভারের শেষ বলে মার্কাস স্টয়নিসের বলে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন এতক্ষণ তাকে যোগ্য সঙ্গ দিয়ে আসা ঋষভ পান্ত। ১৪ বলে ১৫ রান করে তিনি আউট হলে ৯৩ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারায় ভারত।
এরপর সূর্যকুমার একে রোহিতের সঙ্গে তাল দেন। পিটিয়ে খেলা শুরু করেন তিনিও। দুজনের ব্যাটিং তাণ্ডবে প্রথম দশ ওভারে ১১৪ রান তোলে ভারত। এরপর দ্বাদশ ওভারের দ্বিতীয় বলে স্টার্কের ইয়র্কারে বোল্ড হয়ে ফিরতে হয় রোহিতকে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রথম সেঞ্চুরি থেকে বঞ্চিত হলেও এই ফরম্যাটের বিশ্বকাপের ইতিহাসে নিজের সেরা ইনিংসটি খেলে বিদায় নেন তিনি।
এর আগে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তার সর্বোচ্চ স্কোর ছিল অপরাজিত ৮৩। সেটিও চলতি আসরে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেই।
এছাড়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্কোর করে রেকর্ড বইয়ে আরও একবার নাম লেখান তিনি। এই তালিকায় ১০১ রান নিয়ে শীর্ষে রয়েছেন সুরেশ রাইনা। ২০১০ বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তিনি এই রেকর্ড করেন।
এরপর শিবম দুবে এসেও রানের ধারা অব্যাহত রাখেন। তবে ১৪.৩ ওভারে সূর্যকুমার ফিরে গেলে রানের চাকা কিছুটা স্লথ হয়ে যায়। তারপরও হার্দিক পান্ডিয়াকে নিয়ে ভালোই এগোচ্ছিলেন দুবে। ১৯তম ওভারের প্রথম দুই বলে দুটি ছক্কা হাঁকিয়ে পরের বলে সিঙ্গেল নিয়ে দুবে স্ট্রাইক দেন হার্দিক। তিনিও মেরে খেলতে চাইলে চতুর্থ বলে ক্যাচ হয়ে যান। ফেরার আগে ২২ বলে ২৮ রান করেন তিনি।
আরও পড়ুন: অস্ট্রেলিয়ার ‘মহা গুরুত্বপূর্ণ’ ম্যাচে টস হেরে ব্যাটিংয়ে ভারত
এরপর রবীন্দ্র জাদেজাকে সঙ্গে নিয়ে ইনিংস শেষ করেন হার্দিক পান্ডিয়া। ১৭ বলে দুটি ছক্কা ও একটি চারে ২৭ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। জাদেজা মাত্র ৫ বল খেলার সুযোগ পান। এর মধ্যে একটি ছক্কা মেরে ৯ রান করেন তিনি।
শেষ পর্যন্ত পাঁচ উইকেট হারিয়ে ২০৫ রান করে মাঠ ছাড়ে ভারত। ফলে জিততে হলে এই লক্ষ্য টপকাতে হবে ওয়ার্নার-ট্যাভিস হেডদের। কিন্তু বুমরাহ-কুলদীপদের বোলিংয়ের সামনে কাজটি করে দেখানো যে কতটা কঠিন, তা চলতি বিশ্বকাপে ভারতের খেলা দেখা সবাই জানেন। ফলে দুর্জয় এই লক্ষ্য মোকাবিলা করে সেমির টিকিট নিশ্চিত করতে পারবে কি না অস্ট্রেলিয়া, তা তাদের ব্যাটারদের ওপর নির্ভর করছে এখন।