বুধবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন বলেন, ‘আমি জানি যে গাম্বিয়া ও সিয়েরা লিওনের মতো দেশগুলো এবং মাঘরেব ও সাব-সাহারা আফ্রিকার উভয় অঞ্চলই এ সংক্রান্ত সম্ভাবনা অন্বেষণের উর্বর ভূমি হতে পারে।’
ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে চুক্তিভিত্তিক কৃষি নিয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
মুজিববর্ষে ১০০ করে যুবশপ ও কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্র স্থাপন
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এবং রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ।
মন্ত্রী জানান, বাংলাদেশ সরকার আফ্রিকায় কৃষিজমি ইজারা নেয়ার যে উদ্যোগ নিয়েছিল তার প্রায় এক দশক হয়ে গেছে।
তৎকালীন পররাষ্ট্রসচিবের নেতৃত্বে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন আফ্রিকান দেশগুলোতে চুক্তিভিত্তিক কৃষির সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে ২০১০ সালে আইভরি কোস্ট, সেনেগাল এবং ঘানা পরিদর্শন করে।
কৃষি নিয়ে জানতে পারেন সামাজিক মাধ্যম থেকে
ড. মোমেন বলেন, ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশন আবিষ্কার করে যে ওই দেশগুলোতে আমাদের বিনিয়োগকারীদের জন্য চাল, গম, তুলা, কফি ইত্যাদি উৎপাদন সম্ভব এবং লাভজনক হবে।
জাম্বিয়ায় ২০১৬ সালে ১১ বাংলাদেশি কৃষককে নিয়োগ দেয়ার মাধ্যমে আফ্রিকান দেশগুলোতে ‘কন্ট্রাক্ট ফার্মিং’ শুরু করে বাংলাদেশ।
আফ্রিকার দেশে কৃষি প্রকল্পে ১১ বাংলাদেশি কৃষককে নিয়োগ দেয়া জন্য সেখানকার সরকারের কাছ থেকে ছাড়পত্র পায় ‘ভাটি বাংলা এগ্রিটেক লিমিটেড’ নামে বাংলাদেশি একটি সংস্থা।
উন্নয়ন অব্যাহত রাখাই সরকারের মূল লক্ষ্য: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
নিটল-নিলয় গ্রুপ এবং ভাটি বাংলা এগ্রিটেক লিমিটেড আফ্রিকার আরও কয়েকটি দেশে খাদ্যশস্য চাষের কাজ করে আসছিল।
ড. মোমেন বলেন, কেনিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জানিয়েছেন যে কেনিয়া কর্তৃপক্ষ তুলা চাষের জন্য আর্থিকভাবে সক্ষম বাংলাদেশি সংস্থার কাছে ইজারা দিয়ে প্রায় ১০০০ একর জমি সরবরাহ করতে আগ্রহী।
তিনি জানান, সুদানে ২০ মিলিয়ন হেক্টর জমির একটি ক্ষেত্র রয়েছে যার মধ্যে ৪০ শতাংশ কৃষিজমি। বাংলাদেশের কৃষি বিজ্ঞানীরা সুদানে উপযুক্ত কৃষি পদ্ধতি চালু করতে পারেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সুদান কর্তৃপক্ষ লোহিত সাগরে মাছ ধরার জন্য নৌকা তৈরিতে বাংলাদেশের সহযোগিতা চেয়েছে।’
ইতিবাচক ব্র্যান্ডিংয়ে দেশে আরও বিনিয়োগ, চাকরির সুযোগ তৈরি হবে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয় এবং বহুপক্ষীয় মাধ্যম ব্যবহার করে বাংলাদেশ মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে চুক্তিভিত্তিক কৃষির বিষয়টি সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করা শুরু করেছে।
ড. মোমেন বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি যে টেকসই কৃষি কেবলমাত্র আমাদের জাতির বেঁচে থাকাই নিশ্চিত করে না, এটি বিশ্বজুড়ে আমাদের জাতীয় পদচিহ্নের সমৃদ্ধি, বিনিময় এবং প্রসারের দ্বার উন্মুক্ত করে।’
আফ্রিকান দেশগুলোতে বাংলাদেশিদের নিরাপত্তার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেসকল বাংলাদেশি বিদেশে যান তারা অনেক স্মার্ট এবং আফ্রিকান দেশগুলোতে প্রায় ৩ লাখ বাংলাদেশি রয়েছেন।
‘তাদের নিরাপত্তা নিয়ে কোনো উদ্বেগ নেই। সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর গৃহীত ব্যবস্থার পাশাপাশি আমরাও তাদের সুরক্ষা দেয়ার চেষ্টা করব,’ অনুষ্ঠান শেষে বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
সুনীল অর্থনীতির জন্য কর্মপরিকল্পনা প্রস্তুত: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
ড. মোমেন বলেন, ‘গত এক দশকে বাংলাদেশের অর্থনীতি গড়ে ৮.১৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এমনকি কোভিড-১৯ এর বছরেও আমাদের প্রবৃদ্ধি বেড়েছে।’
লন্ডন ভিত্তিক থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক সেন্টার ফর ইকোনোমিকস অ্যান্ড ব্যাংকিং রিসার্চ অনুসারে, ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ১.২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার জিডিপি নিয়ে বিশ্বের ২৫তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হিসাবে আত্মপ্রকাশ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের রাজনৈতিক-অর্থনীতি ইশতেহারের মূল দৃষ্টি বরাবরই কৃষিতে রয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, সরকার কৃষিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে জাতীয় নীতি গ্রহণ করেছে।
তিনি জানান, সরকার সারের ওপর ভর্তুকি প্রদান এবং গত ১২ বছর ধরে বিনামূল্যে কৃষি উপকরণ বিতরণ করছে যা কৃষি ক্ষেত্রে সামগ্রিক উৎপাদনশীলতায় বড় সাফল্য বয়ে এনেছে।
তবে দেশে দীর্ঘ মেয়াদি সুরক্ষার জন্য এখনও অনেক কিছু করার আছে বলে উল্লেখ করেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।